বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, সাম্প্রদায়িক ও সাম্প্রদায়িক শক্তির দোসর- এমন চার শ্রেণির মানুষ আওয়ামী লীগের সদস্য
হতে পারবেন না। দলটির কেন্দ্র থেকে এরই মধ্যে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ৪৫টি থানা ও ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে দলটি। গত ২০শে মে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সদস্যপদ নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। দলটির প্রত্যাশা নির্বাচনের আগে অন্তত এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ করা। এরপর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত সদস্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সামনে নির্বাচন। আন্দোলনের প্রয়োজন হতে পারে। ঢাকা থেকে মূলত সব আন্দোলন দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর আন্দোলনের ওপরই নির্ভর করে দেশের অন্যান্য জেলার রাজনৈতিক আন্দোলন। নেতারা মনে করছেন, এসব বিষয় বিবেচনা করে ঢাকায় যারা আওয়ামী লীগে নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দিচ্ছে তাদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। যুক্তি দেখিয়ে তারা বলেন, আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন দলের একনিষ্ঠ সদস্য ও কর্মী। মনেপ্রাণে যদি দলের ওপর ভালোবাসা না তাকে তাহলে কোন কর্মসূচি সফল হবে না। তাই পরীক্ষিতরাই কেবল আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল ওই বার্তার কথা জানান। তিনি বলেন, কোনো চিহ্নিত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এবং সাম্প্রদায়িক কোনো ব্যক্তি ও সাম্প্রদায়িক শক্তির দোসর আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারবে না। নতুন সদস্য সংগ্রহে আমাদের টার্গেট প্রথম ভোটার যারা হয়েছেন তারা এবং নারী ভোটার। তরুণ ও নারী ভোটারদের সদস্য করা আমাদের টার্গেট। এদিকে ঢাকার সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, কয়েক দিন আগে দলের কেন্দ্র থেকে মহানগরের সব থানা ও ইউনিয়নে ওই বার্তা পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগর আওয়ামী লীগ কিভাবে কাজ করছে? তিনি বলেন, সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে মূলত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে থানা পর্যায় পর্যন্ত। প্রতিটি এলাকায় আমাদের কর্মী ও নেতা রয়েছেন। তারা এলাকায় বসবাসকারীদের ভালো করেই জানেন ও চেনেন। তাই কারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ কিংবা সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে জড়িত তা বুঝতে সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, সম্ভাব্য আন্দোলনকে সামনে রেখে নতুন সদস্য সংগ্রহে ওই চার শর্ত পূরণ করা হচ্ছে। এদিকে নির্বাচনকে টার্গেট করে দলে অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ। যাচাই-বাছাই করে দলে অন্তর্ভুক্তি ঘটাতে চায় দলটি। অতীতের শিক্ষা নিয়ে এবার অনুপ্রবেশ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের মতে, বিভিন্ন জেলায় দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের মূল কারণ অনুপ্রবেশকারিরা। ত্যাগী ও দীর্ঘ সময় দলের জন্য সময় দেয়া নেতাদের বঞ্চিত করে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে দলীয় পদ তুলে দেয়ার পরই বিপত্তি বাধে। বাধাগ্রস্ত হয় সাংগঠনিক কার্যক্রম। অভিযোগের স্তূপ জমে কেন্দ্রে। ওই স্তুপ যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন ও কার্যালয় পর্যন্ত। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে অভিযোগের মাত্রাও বাড়ছে। তাই নির্বাচনের আগে নতুন করে কাউকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে সতর্কতা অবলম্বন করছে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে এদের পরগাছা ও আবর্জনা বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, সম্পতি বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার হিড়িক পড়েছে। অতীতে আমরা দেখেছি নির্বাচনের আগে দলে অনুপ্রবেশকারীরা দলের জন্য ক্ষতিকর। তাই এবার একটি সিস্টেমের মাধ্যমে দলে অন্তর্ভুক্তি করানো হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন অনেক সতর্ক। তিনি বলেন, এ নিয়ে দলের সভাপতির সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সেই নির্দেশনা অনুসরণ করছি। বিভিন্ন স্তরের নেতাদেরও ওই নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। দলের শীর্ষ কয়েক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন সদস্য জোগাড় করছে দলটি। এ নিয়ে কড়া নজরদারি করা হচ্ছে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের পক্ষ থেকে। মূলত বিশৃংখল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এমন কর্মীদের বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদিকে বর্ধিত সভায় দলের সদস্য সংগ্রহর অভিযানকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জেলার নেতারা উপজেলায়, উপজেলার নেতারা ইউনিয়নে আর ইউনিয়নের নেতারা ওয়ার্ডে যাবেন। এভাবে দলের সদস্য সংগ্রহ করবেন। এদিকে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি বাড়াতে ৩ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সারা দেশের সাংগঠনিক জেলায় চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে তিনি আহ্বান জানান, যেসব সাংগঠনিক জেলা/মহানগর/উপজেলা/থানা/পৌর শাখা ফরম সংগ্রহ করেনি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করে নিজ নিজ এলাকায় সদস্যপদ সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি জোরদার করার। আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয় আওয়ামী লীগের যেসব জেলা/উপজেলা/পৌরসভা শাখায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের স্থায়ী/অস্থায়ী ঠিকানা নেই এবং যেসব জেলা/উপজেলা/পৌরসভা শাখায় নিজস্ব কার্যালয় নির্মাণ হয়নি তাদের তথ্য অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে (বাড়ি-৫১/এ, সড়ক-৩/এ, ধানমন্ডি- আ/এ, ঢাকা) পাঠাতে বলা হয়েছে।