ঢাকা , শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০০১ সালের চায় বিএনপি শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী একক প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ থাকলেও বিএনপিতে রয়েছেন একাধিক। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ড. এম শাহ আলম।

১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহাবুব। ১৯৯৬ সালে হাসানাত আব্দুল্লাহর কাছে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত হন কাজী গোলাম মাহাবুব। ওই বছর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। হাসানাত আব্দুল্লাহকে চিফ হুইপ করা হয়। ওই সরকারের আমলে হাসানাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপনের কাছে পরাজিত হন। ২০০৭ সালের নির্বাচনে একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে অযোগ্য ঘোষণা করায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

অপরদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে হাত মেলানোর কারণে জহির উদ্দিন স্বপনকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ওই বছর আওয়ামী লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বিএনপি প্রার্থী উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন জহির উদ্দিন স্বপন। এমনকি স্বপন তার অনুসারীদের দিয়ে সোবাহানের প্রচার-প্রচারণায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান এলাকায় সময় না দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরাও তার বিরুদ্ধাচারণ করেন। সোবাহানের বাড়ি আগৈলঝাড়া আর স্বপনের বাড়ি গৌরনদী হওয়ায় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ে।

সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক পরবর্তী মহাজোট সরকার গঠনের পর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ভারত থেকে দেশে আসেন। এরপর তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা উঠে যাওয়ার পর হাসানাত আব্দুল্লাহ নিজ গ্রামের বাড়ি আগৈলঝাড়ার সেরালে অবস্থান করতে থাকেন। তিনি তার নগরীর কালীবাড়ি রোডের বাসায় তেমন একটা না এলেও সেরালে অবস্থান করে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এমনকি দলকে শক্তিশালী করতেও কাজ করে যাচ্ছেন। তাকে বলা হয় দক্ষিণাঞ্চলের অভিভাবক। আর এ অভিভাবকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দলীয় কোনো নেতা বরিশাল-১ আসন থেকে মনোনয়ন চান না। তিনিই এককভাবে মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু ওই আসন থেকে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন। তিনিই প্রথমবারের মতো আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সংস্কারপন্থি হওয়ায় দীর্ঘ সময় স্বপন দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে ছিলেন। এ বছরের প্রথমদিকে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। একইসঙ্গে দলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ পাওয়ার পর জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদী নিজ বাড়ি সরিকল এসে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে বাধা দেয় প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার বাহিনী। স্বপন বাধ্য হন ঢাকায় ফিরে যেতে। এখন ঢাকায় থেকে স্বপন গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু স্বপনকে দলে ফিরিয়ে নেয়ায় বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে স্বপনকে প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের মতে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান অতিথি পাখি। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি ঢাকায় থাকেন। দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে তাকে পাওয়া যায় না। এমনকি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সখ্য নেই। এ কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে সামান্যতম ভূমিকা ছিল না সোবাহানের। সেখানে ভূমিকা রেখেছেন আকন কুদ্দুসুর রহমান। এ জন্য তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। আগৈলঝাড়ার বাসিন্দা গাজী কামরুল ইসলাম সজল ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যে ক’জন ছাত্রনেতার ভূমিকা ছিল, তার মধ্যে সজল অন্যতম।

সজল বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ইঞ্জিনিয়ার ড. এম শাহ আলমের নাম এখন শোনা গেলেও আন্দোলন-সংগ্রামে এলাকায় তার কোনো ভূমিকা ছিল না। তার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও তেমন সখ্য নেই। তবে বিএনপির বড় সমস্যা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এ কোন্দল ঠিক করতে না পারলে আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপির প্রবীণ নেতারা।

এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য অ্যাডভোকেট সেকেন্দার আলী, জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম রহমান পারভেজ, গৌরনদী জাপার সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউনুস বেপারী, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার প্রার্থী আগৈলঝাড়া উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক সরদার হারুন রানা জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে। চরমোনাই অনুসারী ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন মেহেদী হাসান রাসেল, মুহা. মাহমুদ হাওলাদার ও মুফতি মুহা. রফিকুন্নবী।

গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচএম জয়নাল আবেদীন জানান, বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হচ্ছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এলাকার উন্নয়নে হাসানাত আব্দুল্লাহ অবদানের কারণে আগামী নির্বাচনে তার জয়লাভ করা সহজ হবে। বিশেষ করে বিএনপি একাধিক ভাগে বিভক্ত হওয়ায় এটাও আওয়ামী লীগের কাজে লাগবে।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু দল সিদ্ধান্ত নেবে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে। সবকিছু নির্ভর করবে বিএনপির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড এবং দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর। তবে কেন্দ্র যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার হয়েই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট কাজ করবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারে এমন প্রার্থীকেই বরিশাল-১ আসনে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করছে কেন্দ্র। আমরা ওই আসনে ২০০১ সালের পুনরাবৃত্তি চাচ্ছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

২০০১ সালের চায় বিএনপি শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ

আপডেট টাইম : ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী একক প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ থাকলেও বিএনপিতে রয়েছেন একাধিক। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ও উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ড. এম শাহ আলম।

১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহাবুব। ১৯৯৬ সালে হাসানাত আব্দুল্লাহর কাছে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত হন কাজী গোলাম মাহাবুব। ওই বছর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। হাসানাত আব্দুল্লাহকে চিফ হুইপ করা হয়। ওই সরকারের আমলে হাসানাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপনের কাছে পরাজিত হন। ২০০৭ সালের নির্বাচনে একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে অযোগ্য ঘোষণা করায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।

অপরদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে হাত মেলানোর কারণে জহির উদ্দিন স্বপনকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ওই বছর আওয়ামী লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বিএনপি প্রার্থী উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে ছিলেন জহির উদ্দিন স্বপন। এমনকি স্বপন তার অনুসারীদের দিয়ে সোবাহানের প্রচার-প্রচারণায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান এলাকায় সময় না দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরাও তার বিরুদ্ধাচারণ করেন। সোবাহানের বাড়ি আগৈলঝাড়া আর স্বপনের বাড়ি গৌরনদী হওয়ায় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ে।

সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক পরবর্তী মহাজোট সরকার গঠনের পর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ভারত থেকে দেশে আসেন। এরপর তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা উঠে যাওয়ার পর হাসানাত আব্দুল্লাহ নিজ গ্রামের বাড়ি আগৈলঝাড়ার সেরালে অবস্থান করতে থাকেন। তিনি তার নগরীর কালীবাড়ি রোডের বাসায় তেমন একটা না এলেও সেরালে অবস্থান করে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এমনকি দলকে শক্তিশালী করতেও কাজ করে যাচ্ছেন। তাকে বলা হয় দক্ষিণাঞ্চলের অভিভাবক। আর এ অভিভাবকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দলীয় কোনো নেতা বরিশাল-১ আসন থেকে মনোনয়ন চান না। তিনিই এককভাবে মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে।

কিন্তু ওই আসন থেকে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন। তিনিই প্রথমবারের মতো আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সংস্কারপন্থি হওয়ায় দীর্ঘ সময় স্বপন দলীয় কর্মকাণ্ডের বাইরে ছিলেন। এ বছরের প্রথমদিকে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন। একইসঙ্গে দলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ পাওয়ার পর জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদী নিজ বাড়ি সরিকল এসে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে বাধা দেয় প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার বাহিনী। স্বপন বাধ্য হন ঢাকায় ফিরে যেতে। এখন ঢাকায় থেকে স্বপন গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু স্বপনকে দলে ফিরিয়ে নেয়ায় বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে স্বপনকে প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের মতে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান অতিথি পাখি। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি ঢাকায় থাকেন। দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে তাকে পাওয়া যায় না। এমনকি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সখ্য নেই। এ কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে সামান্যতম ভূমিকা ছিল না সোবাহানের। সেখানে ভূমিকা রেখেছেন আকন কুদ্দুসুর রহমান। এ জন্য তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। আগৈলঝাড়ার বাসিন্দা গাজী কামরুল ইসলাম সজল ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যে ক’জন ছাত্রনেতার ভূমিকা ছিল, তার মধ্যে সজল অন্যতম।

সজল বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ইঞ্জিনিয়ার ড. এম শাহ আলমের নাম এখন শোনা গেলেও আন্দোলন-সংগ্রামে এলাকায় তার কোনো ভূমিকা ছিল না। তার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও তেমন সখ্য নেই। তবে বিএনপির বড় সমস্যা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এ কোন্দল ঠিক করতে না পারলে আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপির প্রবীণ নেতারা।

এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য অ্যাডভোকেট সেকেন্দার আলী, জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম রহমান পারভেজ, গৌরনদী জাপার সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউনুস বেপারী, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার প্রার্থী আগৈলঝাড়া উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক সরদার হারুন রানা জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে। চরমোনাই অনুসারী ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন মেহেদী হাসান রাসেল, মুহা. মাহমুদ হাওলাদার ও মুফতি মুহা. রফিকুন্নবী।

গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচএম জয়নাল আবেদীন জানান, বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হচ্ছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এলাকার উন্নয়নে হাসানাত আব্দুল্লাহ অবদানের কারণে আগামী নির্বাচনে তার জয়লাভ করা সহজ হবে। বিশেষ করে বিএনপি একাধিক ভাগে বিভক্ত হওয়ায় এটাও আওয়ামী লীগের কাজে লাগবে।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। কিন্তু দল সিদ্ধান্ত নেবে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে। সবকিছু নির্ভর করবে বিএনপির কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড এবং দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর। তবে কেন্দ্র যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার হয়েই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট কাজ করবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারে এমন প্রার্থীকেই বরিশাল-১ আসনে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করছে কেন্দ্র। আমরা ওই আসনে ২০০১ সালের পুনরাবৃত্তি চাচ্ছি।