বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজশাহীর ছয় আসনের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপির পাশাপাশি প্রবীণ ও তরুণ নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা মাঠে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের তৎপরতা সিংগ ভাগ।
গত রমজান মাস থেকেই নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়েছে। এবার লক্ষণীয় হলো বর্তমান ও প্রবীণদের পাশাপাশি তরুণ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌড়। সামাজিক যোগাযোগে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার করছেন। তবে তারা নিজ নিজ দলের হাইকমান্ডের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। সর্বপরি তৃণমূলে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বর্তমান এমপিদের বিপক্ষে নিজেদের প্রার্থী হবেন এমন ঘোষণায় অনেকের সমালোচনা ঝড় বয়ছে। সাবেক এমপি ও বর্তমান নেতৃত্বের বেশ ক’জন নিজ এলাকায় গণসংযোগ করছেন। সভা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে বর্তমানদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কর্মসূচির প্রতিযোগিতাও হচ্ছে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) বর্তমান এমপি রয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। কিন্তু তার বিপক্ষে মনোনয়ন চাইবেন, তারা হলেন- আ. লীগের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি মতিউর রহমান, মন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আ. লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন।
রাজশাহী-২ (সদর) এ এমপি রয়েছেন জোট প্রার্থী ও ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। জোটগত নির্বাচন হলে তিনি ফের মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসনটি দাবি করা হচ্ছে।
রাজশাহী-৩ আসন (পবা-মোহনপুর) এমপি রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আয়েন উদ্দিন। তার বিপক্ষে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সাবেক এমপি মেরাজ মোল্লা, জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, আ. লীগ নেতা মোস্তাফিজুর মানজাল ও আলফোর রহমান।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) বর্তমান এমপি বিশিষ্ট শিল্পপতি এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জি. এনামুল হক। এনামুল হক ২০০৮ সালে মনোনয়ন নিয়ে এসে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। এলাকাতে যতেষ্ট সুনামও রয়েছে তার। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর রক্তাক্ত বাগমারায় শান্তি ফিরে এসেছে। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ বাঘা বাঘা মন্ত্রীদের নিজ এলাকায় এনে চমক সৃষ্টি করেছেন। এমপি এনামুল হক এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন সাধনসহ দলের সাংগাঠনিক ভিত শক্ত করেছেন। ফলে বর্তমানেও তিনি শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। আগামীতে তিনিই এ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে দলীয় এক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি দলের কয়েকজন নেতা তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে নানান কথা বলেছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে দলীয় পদ থেকে তারা বহিষ্কার হয়েছে।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) এ আসনে এমপি রয়েছেন বহুল আলোচিত সমালোচিত শিল্পপতি আব্দুল ওয়াদুদ দারা। খুঁটির জোরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রবীণ নেতা সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম ফারুককে মনোনয়ন যুদ্ধে পরাজিত করে নির্বাচনী ও বিনা নির্বাচনের এমপি রয়েছেন। এবারো মনোনয়ন চাইবেন প্রবীণ নেতা তাজুল ইসলাম ফারুক। জনপ্রিয় কারা নির্যাতিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহ্সান উল হক মাসুদ। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ইতোমধ্যেই গণসংযোগ করছেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। বহুল ভাবে আলোচিত সমালোচিত হওয়া এবার ছিটকে পড়তে পারেন বর্তমান এমপি। সেক্ষেত্রে ফারুক কিংবা মাসুদের কপাল খুলতে পারে এমন গুঞ্জন এলাকা জুড়ে।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) এখানে এমপি রয়েছেন শিল্পপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এখানে তিনি মনোনয়ন পাবেন এমনটি প্রচার থাকলেও তার দলের মধ্যে রয়েছে শক্ত প্রতিন্দন্দ্বী। গত নির্বাচনে নিজদলের এক প্রার্থীর প্রতিন্দন্দ্বিতার মুখে পড়েছিলেন। অন্যদের মত সহজে পার হননি নির্বাচনী বৈতরনী। সাবেক এমপি রায়হানুল হক দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারো তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা লায়ের উদ্দিন লাবলু, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী, ছাত্রলীগের নেতা রোকনুজ্জামান রিন্টুও মনোনয়ন প্রত্যাশী। শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে এদের অবস্থান রয়েছে বেশ শক্ত।
৭৫ পরবর্তী সময় থেকে বেশির ভাগ সময় ধরে আসনগুলো বিএনপি জামায়াত জোটের দখলে ছিল। ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক সিডরে সেই দুর্গ তছনছ হয়ে যায়। এরশাদ শাসনামলে জাতীয় পার্টির কবলে যায়। এরশাদ শাসনের অবসানের পর থেকে আসনগুলো ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিল বিএনপির দখলে। এজন্য রাজশাহী অঞ্চল পরিচিত ছিল বিএনপির দুর্গ হিসেবে।