ঢাকা , রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তৃণমূল আওয়ামী লীগে খুনোখুনি

তৃণমূলে হঠাৎ খুনোখুনি বেড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। জুলাই মাসেই প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন ১৭ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই হত্যার শিকার হয়েছেন চারজন। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তৃণমূল নেতারা। বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও। জঙ্গিবাদ ইস্যুতে উত্তাল থাকা দেশে নিজেদের কোন্দলে খুন হওয়া নেতা-কর্মীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। সরকার যখন জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ব্যস্ত, তখন এ ধরনের খুনোখুনি ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগকে। পদ-পদবি, আধিপত্য ধরে রাখা, ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী দল সক্রিয় না থাকায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে দলটির মধ্যে খুনোখুনি ও কোন্দল বাড়ছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে পাওয়া-না পাওয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ, অন্তঃকলহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে এটা আওয়ামী লীগের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত। তবে এসব খুনকে পারিবারিক ও তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে দেখছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এত বড় একটি রাজনৈতিক দল। সেখানে চাওয়া-পাওয়ার বিষয় থাকে। এমন বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ড অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে, ভবিষ্যতেও হবে। তিনি বলেন, যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে, এর অধিকাংশই যতটা না রাজনৈতিক, তার চেয়ে পারিবারিক কারণই বেশি। তবে খুনোখুনির ঘটনা যত কমিয়ে আনা যায়, সে ব্যাপারে আমরা সাংগঠনিকভাবে তত্পর রয়েছি। যেখানেই ঘটনা ঘটছে পুলিশ প্রশাসনসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ ৮ আগস্ট নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জামিরাকান্দা-বরাকান্দা গ্রামে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান তুলাকে (৩০) দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হামলা বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ৬ আগস্ট দিনাজপুরের হাকিমপুরে পুকুরের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন বদিউজ্জামান সুজন। তিনি উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ৫ আগস্ট বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াদ শেখকে হাত-পায়ের রগ ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আবু সুফিয়ানকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকেরা। ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বালনের সময় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খালেদ সাইফুল্লাহ নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি নজরুল হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

৩০ জুলাই নাটোরের লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মেম্বার আব্বাস উদ্দিন দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

২৪ জুলাই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে লিটন পণ্ডিত নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ২২ জুলাই পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আমিন উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বাস টার্মিনালের আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নিজ দলীয় লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা। নিহত আমিন পাবনা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। ২০ জুলাই শরীয়তপুরের নড়িয়ার জবসা ইউনিয়নে জাকির হোসেন হাওলাদার নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জের ধরে ঘটেছে এ হত্যাকাণ্ড। ১০ জুলাই বাসা ভাড়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে সিলেট স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী আবদুল্লাহ অন্তরকে (২২) খুন করা হয়েছে। নিহত অন্তর সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আপ্তব হোসেনের সমর্থক ছিলেন। ৯ জুলাই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার নাটোপাড়া গ্রামের দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় জলিল মোল্লা (৫০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। ৮ জুলাই মাগুরার শালিখা উপজেলায় জলিল মোল্লা (৫০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ৮ জুলাই রাজধানীর সূত্রাপুর এবং মাগুরার শালিখা আওয়ামী লীগের এক নেতা ও এক কর্মীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর সূত্রাপুর থানার ধোলাইখালের রোকনপুরে রাজীব হাসান (৩৮) নামের এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরিবার জানিয়েছে, রাজীব হাসান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক ছিলেন। ৪ জুলাই টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের আবদুল আজিজ নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন প্রতিবেশী দুই ভাই। একই দিন যশোরের ঝিকরগাছায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে হাসান আলী (৪৮) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহত হাসান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রবিউল হত্যাসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ৩ জুলাই মাত্র পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে কক্সবাজারে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে। তাদের কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এদের একজন হচ্ছেন মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গফুর ওরফে নাগু মেম্বার (৬৫) এবং অন্যজন টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম (৬৮)। ৩ জুলাই ঝালকাঠির নলছিটিতে সজল হাওলাদার (১৮) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার মালুহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে তাকে গুলি করা হয়। গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। নিহত সজল মোল্লারহাট ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২ জুলাই ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তিহারউদ্দিন মাতুব্বরকে (৬০) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের বিনোকদিয়া বাজারের কাছে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এ সময় তিহারউদ্দিন মাতুব্বরের ভাই নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য সাহিদ মাতুব্বরকেও কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। নিহত তিহারউদ্দিন মাতুব্বর সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। ১ জুলাই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে মংশৈলু মারমা (৫৬) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি বাইশারী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। পরিবারের সন্দেহ, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবেই জুলাই মাসে ১৭ জন নেতা-কর্মী দলীয় কোন্দল ও প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয়েছেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

তৃণমূল আওয়ামী লীগে খুনোখুনি

আপডেট টাইম : ০৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ অগাস্ট ২০১৬

তৃণমূলে হঠাৎ খুনোখুনি বেড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। জুলাই মাসেই প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন ১৭ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই হত্যার শিকার হয়েছেন চারজন। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তৃণমূল নেতারা। বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও। জঙ্গিবাদ ইস্যুতে উত্তাল থাকা দেশে নিজেদের কোন্দলে খুন হওয়া নেতা-কর্মীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা। সরকার যখন জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ব্যস্ত, তখন এ ধরনের খুনোখুনি ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগকে। পদ-পদবি, আধিপত্য ধরে রাখা, ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী দল সক্রিয় না থাকায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে দলটির মধ্যে খুনোখুনি ও কোন্দল বাড়ছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে পাওয়া-না পাওয়া থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ, অন্তঃকলহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে এটা আওয়ামী লীগের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত। তবে এসব খুনকে পারিবারিক ও তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে দেখছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এত বড় একটি রাজনৈতিক দল। সেখানে চাওয়া-পাওয়ার বিষয় থাকে। এমন বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ড অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে, ভবিষ্যতেও হবে। তিনি বলেন, যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে, এর অধিকাংশই যতটা না রাজনৈতিক, তার চেয়ে পারিবারিক কারণই বেশি। তবে খুনোখুনির ঘটনা যত কমিয়ে আনা যায়, সে ব্যাপারে আমরা সাংগঠনিকভাবে তত্পর রয়েছি। যেখানেই ঘটনা ঘটছে পুলিশ প্রশাসনসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ ৮ আগস্ট নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জামিরাকান্দা-বরাকান্দা গ্রামে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান তুলাকে (৩০) দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হামলা বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ৬ আগস্ট দিনাজপুরের হাকিমপুরে পুকুরের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন বদিউজ্জামান সুজন। তিনি উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ৫ আগস্ট বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াদ শেখকে হাত-পায়ের রগ ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আবু সুফিয়ানকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকেরা। ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বালনের সময় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খালেদ সাইফুল্লাহ নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি নজরুল হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

৩০ জুলাই নাটোরের লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মেম্বার আব্বাস উদ্দিন দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

২৪ জুলাই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে লিটন পণ্ডিত নামে এক যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ২২ জুলাই পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আমিন উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বাস টার্মিনালের আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে নিজ দলীয় লোকজন এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা। নিহত আমিন পাবনা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। ২০ জুলাই শরীয়তপুরের নড়িয়ার জবসা ইউনিয়নে জাকির হোসেন হাওলাদার নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জের ধরে ঘটেছে এ হত্যাকাণ্ড। ১০ জুলাই বাসা ভাড়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে সিলেট স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী আবদুল্লাহ অন্তরকে (২২) খুন করা হয়েছে। নিহত অন্তর সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আপ্তব হোসেনের সমর্থক ছিলেন। ৯ জুলাই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার নাটোপাড়া গ্রামের দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় জলিল মোল্লা (৫০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। ৮ জুলাই মাগুরার শালিখা উপজেলায় জলিল মোল্লা (৫০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ৮ জুলাই রাজধানীর সূত্রাপুর এবং মাগুরার শালিখা আওয়ামী লীগের এক নেতা ও এক কর্মীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর সূত্রাপুর থানার ধোলাইখালের রোকনপুরে রাজীব হাসান (৩৮) নামের এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরিবার জানিয়েছে, রাজীব হাসান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক ছিলেন। ৪ জুলাই টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের আবদুল আজিজ নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন প্রতিবেশী দুই ভাই। একই দিন যশোরের ঝিকরগাছায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে হাসান আলী (৪৮) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহত হাসান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রবিউল হত্যাসহ একাধিক হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ৩ জুলাই মাত্র পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে কক্সবাজারে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে। তাদের কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এদের একজন হচ্ছেন মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গফুর ওরফে নাগু মেম্বার (৬৫) এবং অন্যজন টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম (৬৮)। ৩ জুলাই ঝালকাঠির নলছিটিতে সজল হাওলাদার (১৮) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার মালুহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে তাকে গুলি করা হয়। গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। নিহত সজল মোল্লারহাট ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২ জুলাই ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তিহারউদ্দিন মাতুব্বরকে (৬০) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের বিনোকদিয়া বাজারের কাছে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এ সময় তিহারউদ্দিন মাতুব্বরের ভাই নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য সাহিদ মাতুব্বরকেও কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। নিহত তিহারউদ্দিন মাতুব্বর সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। ১ জুলাই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে মংশৈলু মারমা (৫৬) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি বাইশারী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। পরিবারের সন্দেহ, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবেই জুলাই মাসে ১৭ জন নেতা-কর্মী দলীয় কোন্দল ও প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয়েছেন।