ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আওয়ামী লীগের

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে কৌশলে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে দলটি। দেশে-বিদেশে নির্বাচন কেন্দ্রিক বিতর্ক এড়াতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপি যেন তাদের কাছে টেনে সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে না পারে, এজন্য ওইসব দল ও জোটকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে।

এর মধ্য দিয়ে বিএনপিকেও এক ঘরে করার কাজটা করে ফেলতে চায় শাসক দল। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিকে সঙ্গীহারা করাও এর আরেকটি উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া বা বর্জনে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ বদ্ধ পরিকর। এ ক্ষেত্রে বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জনও করে তাহলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে দলের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে।

১৪ দল ও জাতীয় পার্টির বাইরের অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে। এর মধ্যে গণতান্ত্রিক, বামপন্থি ও ইসলামিক দল ও জোটের সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ওই সব দলকে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হচ্ছে।

পাশাপাশি তাদের কিছুটা ছাড় দেওয়ার মনোভাবও পোষণ করা হচ্ছে। এদের অনেকেই সরকারের সঙ্গে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিএনপি যেন কাউকে কাছে টানতে না পরে, সেই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষে না গিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ অবলম্বন করলেও আওয়ামী লীগ সেই প্রক্রিয়াকেও স্বাগত জানাবে বলে জানান এক নেতা।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, সবাই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চান। যারা ভোটে জিততে পারবেন না, তারও এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আর তাদের সেই সখ আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে থাকলে বা বিএনপির বিপক্ষে থাকলেই শুধু সম্ভব এটা অনেকেই বুঝতে পেরেছে।

তিনি বলেন, নেপাল থেকে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে আমাদের নেত্রী ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দৌজা চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওই সময় তিনি বলেছেন এটা ভালো, আমরাও চাই নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক।

আমাদের অবস্থান পরিষ্কার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করবে আওয়ামী লীগ। আর নির্বাচনে অংশ না নিলে একাধিক জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়াও ছোট ছোট অনেক জোট জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের আসন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। মূলত এসব বিষয় নিয়েই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়াও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনে বর্জন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। জামায়াতে ইসলামী বাদে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি। অথচ বর্তমান সংসদে প্রতিনিধি রয়েছে মাত্র সাতটি রাজনৈতিক দলের। এ অবস্থায় পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেও বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয় আওয়ামী লীগকে। তাই আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা একাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক দলের অংশগ্রহণ দেখতে চান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি না এলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বির অভাব নেই, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরির কোনো সুযোগ নেই। সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই এবার নির্বাচিত হবে।

সম্প্রতি এক শ্রমিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এ দেশে আবার বিএনপি ও তার সাম্প্রদায়িক দোষররা নাশকতার ছক আঁকছে। আন্দোলনের নামে আবারও দেশকে ২০১৪ সালের মতো সহিংসতার চক্রান্ত করছে।

তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক নৌকা ভাসতে ভাসতে ডিসেম্বর মাসে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাবে। আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করবো প্রস্তুত থাকুন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টচার্য্য বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করি বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এজন্য আমাদের আলাদাভাবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না। তবে, বিএনপি যদি না আসে, সেক্ষত্রে অন্যদের আনার বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, দুই মেরুকেন্দ্রীক রাজনীতি ততই পরিষ্কার হতে শুরু করবে। এখন রাজনীতি বিভিন্ন দল ও জোটের মধ্যে দর কষাকষি পর্যায়ে রয়েছে। এখন তারা হিসাব কষছেন কোন জোটের সঙ্গে থাকলে বা রাজনৈতিক অবস্থান নিলে নিজেদের জন্যে ভালো হবে। এজন্য অধিকাংশ দল ও জোট দুই মেরুর নেতাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বিএনপির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আওয়ামী লীগের

আপডেট টাইম : ০৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে কৌশলে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে দলটি। দেশে-বিদেশে নির্বাচন কেন্দ্রিক বিতর্ক এড়াতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপি যেন তাদের কাছে টেনে সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে না পারে, এজন্য ওইসব দল ও জোটকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে।

এর মধ্য দিয়ে বিএনপিকেও এক ঘরে করার কাজটা করে ফেলতে চায় শাসক দল। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিকে সঙ্গীহারা করাও এর আরেকটি উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া বা বর্জনে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ বদ্ধ পরিকর। এ ক্ষেত্রে বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জনও করে তাহলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে দলের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে।

১৪ দল ও জাতীয় পার্টির বাইরের অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে। এর মধ্যে গণতান্ত্রিক, বামপন্থি ও ইসলামিক দল ও জোটের সঙ্গে পৃথকভাবে যোগাযোগ করছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ওই সব দলকে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হচ্ছে।

পাশাপাশি তাদের কিছুটা ছাড় দেওয়ার মনোভাবও পোষণ করা হচ্ছে। এদের অনেকেই সরকারের সঙ্গে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিএনপি যেন কাউকে কাছে টানতে না পরে, সেই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষে না গিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ অবলম্বন করলেও আওয়ামী লীগ সেই প্রক্রিয়াকেও স্বাগত জানাবে বলে জানান এক নেতা।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, সবাই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চান। যারা ভোটে জিততে পারবেন না, তারও এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আর তাদের সেই সখ আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে থাকলে বা বিএনপির বিপক্ষে থাকলেই শুধু সম্ভব এটা অনেকেই বুঝতে পেরেছে।

তিনি বলেন, নেপাল থেকে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে আমাদের নেত্রী ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দৌজা চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওই সময় তিনি বলেছেন এটা ভালো, আমরাও চাই নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক।

আমাদের অবস্থান পরিষ্কার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করবে আওয়ামী লীগ। আর নির্বাচনে অংশ না নিলে একাধিক জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়াও ছোট ছোট অনেক জোট জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের আসন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। মূলত এসব বিষয় নিয়েই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়াও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনে বর্জন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। জামায়াতে ইসলামী বাদে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি। অথচ বর্তমান সংসদে প্রতিনিধি রয়েছে মাত্র সাতটি রাজনৈতিক দলের। এ অবস্থায় পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেও বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয় আওয়ামী লীগকে। তাই আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা একাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক দলের অংশগ্রহণ দেখতে চান।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি না এলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বির অভাব নেই, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরির কোনো সুযোগ নেই। সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই এবার নির্বাচিত হবে।

সম্প্রতি এক শ্রমিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এ দেশে আবার বিএনপি ও তার সাম্প্রদায়িক দোষররা নাশকতার ছক আঁকছে। আন্দোলনের নামে আবারও দেশকে ২০১৪ সালের মতো সহিংসতার চক্রান্ত করছে।

তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক নৌকা ভাসতে ভাসতে ডিসেম্বর মাসে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাবে। আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করবো প্রস্তুত থাকুন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টচার্য্য বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করি বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এজন্য আমাদের আলাদাভাবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না। তবে, বিএনপি যদি না আসে, সেক্ষত্রে অন্যদের আনার বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, দুই মেরুকেন্দ্রীক রাজনীতি ততই পরিষ্কার হতে শুরু করবে। এখন রাজনীতি বিভিন্ন দল ও জোটের মধ্যে দর কষাকষি পর্যায়ে রয়েছে। এখন তারা হিসাব কষছেন কোন জোটের সঙ্গে থাকলে বা রাজনৈতিক অবস্থান নিলে নিজেদের জন্যে ভালো হবে। এজন্য অধিকাংশ দল ও জোট দুই মেরুর নেতাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।