বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরোধী রাজনীতিকদের গুম হওয়া নিয়ে সরকারবিরোধীদের অভিযোগ ভুল বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্সে প্রকাশিত এক কলামে তিনি এ কথা লিখেছেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, সরকারবিরোধীরা দাবি করছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছে। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনকে বৈধ মনে করে না এবং বলছে আসন্ন নির্বাচনও সেরকম হবে। তারা অভিযোগ করে কয়েকজন বিরোধী রাজনীতিকের গুম হওয়াটা সরকারের ষড়যন্ত্র। তারা ভুল। তাদের এসব অভিযোগের কোনোটাই সঠিক নয়। জয় লিখেছেন, সত্য হলো বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গত নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পর তারা অভিযোগ করে খুব কম রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে, ফলে তা লজ্জার। এটা ছিল তাদের স্বার্থে সাজানো অভিযোগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের অপূর্ণতার দায় পুরোটাই বিএনপির, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নয়। নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে সংসদের জন্য একজন প্রার্থীও দেয়নি বিএনপি।
জয় আরও লিখেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশকে ব্যর্থ করে দিয়েছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন যে, গণতন্ত্রের ভিত্তি হচ্ছে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এমনকি বারবার বিএনপিকে নির্বাচন তদারকিতে সহযোগিতা চেয়েছেন। কিন্তু বিএনপি তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে উল্টোপথে হেঁটে প্রকাশ্যে লড়াই শুরু করেছিল। দলটির অনেক নেতা ভোটকেন্দ্রে আগুনবোমা ছুড়ে মারার পথ বেছে নেন। আরও খারাপ হলো, বিএনপি এ বছরের নির্বাচনকেও একইভাবে বিবেচনা শুরু করেছে। তারা আবারও হুমকি দিয়েছে নাগরিক বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু করার।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে আরও লিখেছেন, ২০১৪ সালে বিএনপি নেতা ও তাদের জোটের শরিকরা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মিলিতভাবে সহিংস বিক্ষোভ শুরু করে যা ভোট দান কমিয়ে দেয় এবং আমাদের জাতির হৃদপিণ্ডকে টুকরো টুকরো করে। তারা এবং তাদের সহযোগীরা হাজার হাজার বাড়ি, গাড়ি, ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস করেছে, ২০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছে এবং সরকারি স্থাপনায় আগুন দিয়েছে। নির্বাচনের দিন তারা পেট্রোল বোমা মেরে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ত্রাসের মুখে রাখে।
কলামে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে দেওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া বয়ানে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার কথা তুলে ধরেন জয়। সহিংসতায় বিএনপি নেতাদের ভূমিকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং এতে করে দলটির জনপ্রিয়তা যেকোনও সময়ের চেয়ে নিম্নে অবস্থান করছে বলেও তিনি কলামে উল্লেখ করেন।
কলামে জয় লিখেছেন বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে। এতে করে তাদের দলের জনপ্রিয়তা অনেক কমে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা লিখেছেন, কিন্তু বিএনপি কখনও এই অদূরদর্শীতার দায়িত্ব স্বীকার করেনি। যখন বিএনপি সম্পর্কিত উস্কানিদাতারা বিচার এড়াতে পালিয়ে যায় তখন দলটি দাবি করে জোর করে তাদের নেতাদের গুম করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করেছে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টতার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে তারা জানতে পেরেছে, সহিংস অপরাধে বিচার এড়াতে তাদের অনেকে নিজেরাই ‘অদৃশ্য’ হয়েছেন।
কলামে জয় বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের গুম ও ফিরে আসার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে অভিযোগ ওঠে সালাউদ্দিন আহমেদকে অপহরণ করেছে পুলিশ। দুই মাস পরে ভারতে তার সন্ধান মেলে। এর পর আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। তদন্ত করে জানা যায়, বাংলাদেশে বিচার এড়াতে তিনি ভারতে পালিয়েছিলেন। বাকিদেরও খুব দ্রুতই সন্ধান মেলে। হারিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই সন্ধান মেলে বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারের।
জয় লিখেছেন, সরকার আশা করছে যে বিএনপি এই ভুলগুলো স্বীকার করে গঠনমূলকভাবে লড়াই করবে, সহিংসতার মাধ্যমে নয়। বাংলাদেশ বিরোধী দলের কাছ থেকে এতটুকুই আশা করে। তবে বিএনপির কয়েকজন মনে করেন, তাদের পক্ষে গঠনমূলক কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে আছেন এবং তাকে মুক্ত করার জন্য তারা আন্দোলন-সংগ্রাম ও সহিংসতা চালানোর চেষ্টা করবেন। এমনকি নির্বাচন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করতেও তারা চেষ্টা চালাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, যদি এমনটা হয়, তবে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে। এতিমদের আড়াই লাখ ডলারেরও বেশি টাকা আত্মসাতের কারণে বেগম জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও আরও ১৯টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাঁচটি দুর্নীতি মামলা রয়েছে। আর বাকি ১৪টি ২০১৪ সালের সহিংসতা সংশ্লিষ্ট।
জয় বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এতিমদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তিনি মানি লন্ডারিংয়ের জন্যও অভিযুক্ত। এই মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তথ্য সরবরাহ করেছে। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও শেখ হাসিনাসহ ৩০০ জন আহত হওয়ার ঘটনাতেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। অন্যান্য নেতাদের মতো তারেক রহমানও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
জয়ের মতে, ‘একজন ব্যক্তির অনুপস্থিতি’ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কোনও অজুহাত হতে পারে না। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি এবং পরিস্থিতি তাদের জন্য আরও প্রতিকূল হয়েছে। তারা অনেক সহিংসতা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া হয়তো এই ঘটনা ভুলে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেটা ভুলেনি। তারা আরও ভালো জানে, ভালো কিছু তাদের প্রাপ্য।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন