ঢাকা , শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জোট ও ভোটের হিসাব নিকাশ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সরকারের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একাদশ নির্বাচনে জয়ের চ্যালেঞ্জে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোটে সবাই আসবে ধরে নিয়ে জোট ও জোটের ভোট নিয়ে হিসাব-নিকাশ হচ্ছে আওয়ামী লীগে। দেশে ভোটারের সংখ্যাও বেড়েছে। তরুণ ভোটারদের অবস্থান কি হবে? মহাজোট গঠিত হলে একাদশ নির্বাচনে যারা মহাজোটের প্রার্থী হবেন, তাদের ভোটার সংখ্যা কত? মহাজোটের প্রার্থীদের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার ভোটারের হিসাব।

ভোটারের প্রত্যাশা এবং নতুনদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেই মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট গঠন করে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনের মত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জয় লাভের চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নামবে ক্ষমতাসীনরা। এর আগে মহাজোট চূড়ান্ত হলে জোটের নেত্রী হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই আগামী সংসদ নির্বাচনের জয়ের মিশন নিয়েই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে চান জোট নেতারাও। নির্বাচনে জয় পেতে হলে নির্বাচনী কৌশল কী হবে এ নিয়েও আওয়ামী লীগ ও তাদের শরীক দলগুলোর অন্দরমহলেও চলছে নানারকম গবেষণা।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গবেষণার কাজে নিয়োজিত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মাঠ জরিপ ও গবেষণায় উঠে এসেছে, জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে থেকে এবার দুই তৃতীয়াংশের মনোনয়নে পরিবর্তন আনতে হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক অভিজ্ঞ সিনিয়র নেতা মনে করেন, দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর। নির্বাচনও হবে ব্যাপক প্রতিযোগিতার। এ অবস্থায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেয়ার বিকল্পও নেই সরকারী দলের।

দলের হাইকমান্ডের নিজস্ব মাঠ জরিপে পাওয়া তথ্য নিয়ে যারা কাজ করছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত অনেক সংসদ সদস্যই নিজ নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দলীয় ভোটারদের সাথেও করেছেন দুর্ব্যবহার। এলাকায়ও জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। গ্রহণযোগ্যতাও নেই। তাই ওইসব এলাকায় প্রার্থী পরিবর্তনের বিকল্প নেই।

তবে সংসদীয় দলের একাধিক সভায় এসব এমপিদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনগণের মন জয় করতে এবং জনপ্রিয়তা অর্জনে দলের হাইকমান্ড কাজ করতে বলেছিলেন। যাদেরকে উদ্দেশ্য করে দলের হাইকমান্ড এসব দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তারা তা করতে পারেননি। ফলে তাদের মাঠের রিপোর্ট ভালো আসেনি।

দলীয় সূত্র জানায়, যারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না আঁচ করতে পেরেছেন, তারা দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপও অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায়ও যাচ্ছেন না।

এদিকে দলের অপর একটি সূত্র জানায়, সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা এবং দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা বয়োবৃদ্ধ প্রবীণ নেতাদের সরকারের মন্ত্রী ও বিভিন্ন পদবী প্রদানের মাধ্যমে দলের যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তারাও একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে আওয়ামী লীগের অন্দর মহলে আলোচনা আছে। দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও মনে করেন বয়সের ভারে যারা মুভ করতে পারছেন না এবং অতি অসুস্থতায় পড়ে আছেন সেই নেতা ও এমপিদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত সভানেত্রী নেবেন তারা বলতে পারছেন না। তারা দলের হাইকমান্ডের বার্তার দিকেই তাকিয়ে আছেন। নেত্রীর মনোভাব বুঝার চেষ্টা করছেন। তবে এসবই পরিষ্কার হবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর।

ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতিনির্ধারক নেতা মনে করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন তরুণ ভোটারদের উপরই জয়লাভের বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করবে। আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ ভোটারদের মন জয়ের জন্য কি থাকছে, এসবই ভাবা হচ্ছে। দলের হাইকমান্ডের নিজস্ব মাঠ জরিপে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে অর্ধশত আসন পরিবর্তন করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, এসব আসনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের মহাজোট প্রার্থীরাও রয়েছেন। মহাজোট গঠনের পরেই একাদশ নির্বাচনের আমলনামা চূড়ান্ত হবে। তফসিল ঘোষণার পরই প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সকলের আমল নামাই দলের হাইকমান্ডের কাছে আছে। তিনিই বিচার বিশ্লেষণ করে দলীয় মনোনয়ন দিবেন। জনপ্রিয়তা গ্রহণযোগ্যতা দেখেই মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি মহাজোট গঠন এবং বিরোধীজোটের আন্দোলন সবকিছু মোকাবিলা করেই নির্বাচনী মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জোট ও ভোটের হিসাব নিকাশ

আপডেট টাইম : ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ অক্টোবর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সরকারের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একাদশ নির্বাচনে জয়ের চ্যালেঞ্জে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোটে সবাই আসবে ধরে নিয়ে জোট ও জোটের ভোট নিয়ে হিসাব-নিকাশ হচ্ছে আওয়ামী লীগে। দেশে ভোটারের সংখ্যাও বেড়েছে। তরুণ ভোটারদের অবস্থান কি হবে? মহাজোট গঠিত হলে একাদশ নির্বাচনে যারা মহাজোটের প্রার্থী হবেন, তাদের ভোটার সংখ্যা কত? মহাজোটের প্রার্থীদের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার ভোটারের হিসাব।

ভোটারের প্রত্যাশা এবং নতুনদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেই মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট গঠন করে নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনের মত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জয় লাভের চ্যালেঞ্জ নিয়েই মাঠে নামবে ক্ষমতাসীনরা। এর আগে মহাজোট চূড়ান্ত হলে জোটের নেত্রী হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই আগামী সংসদ নির্বাচনের জয়ের মিশন নিয়েই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে চান জোট নেতারাও। নির্বাচনে জয় পেতে হলে নির্বাচনী কৌশল কী হবে এ নিয়েও আওয়ামী লীগ ও তাদের শরীক দলগুলোর অন্দরমহলেও চলছে নানারকম গবেষণা।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গবেষণার কাজে নিয়োজিত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মাঠ জরিপ ও গবেষণায় উঠে এসেছে, জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে থেকে এবার দুই তৃতীয়াংশের মনোনয়নে পরিবর্তন আনতে হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক অভিজ্ঞ সিনিয়র নেতা মনে করেন, দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর। নির্বাচনও হবে ব্যাপক প্রতিযোগিতার। এ অবস্থায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেয়ার বিকল্পও নেই সরকারী দলের।

দলের হাইকমান্ডের নিজস্ব মাঠ জরিপে পাওয়া তথ্য নিয়ে যারা কাজ করছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত অনেক সংসদ সদস্যই নিজ নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দলীয় ভোটারদের সাথেও করেছেন দুর্ব্যবহার। এলাকায়ও জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। গ্রহণযোগ্যতাও নেই। তাই ওইসব এলাকায় প্রার্থী পরিবর্তনের বিকল্প নেই।

তবে সংসদীয় দলের একাধিক সভায় এসব এমপিদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনগণের মন জয় করতে এবং জনপ্রিয়তা অর্জনে দলের হাইকমান্ড কাজ করতে বলেছিলেন। যাদেরকে উদ্দেশ্য করে দলের হাইকমান্ড এসব দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তারা তা করতে পারেননি। ফলে তাদের মাঠের রিপোর্ট ভালো আসেনি।

দলীয় সূত্র জানায়, যারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না আঁচ করতে পেরেছেন, তারা দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপও অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায়ও যাচ্ছেন না।

এদিকে দলের অপর একটি সূত্র জানায়, সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা এবং দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা বয়োবৃদ্ধ প্রবীণ নেতাদের সরকারের মন্ত্রী ও বিভিন্ন পদবী প্রদানের মাধ্যমে দলের যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তারাও একাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে আওয়ামী লীগের অন্দর মহলে আলোচনা আছে। দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও মনে করেন বয়সের ভারে যারা মুভ করতে পারছেন না এবং অতি অসুস্থতায় পড়ে আছেন সেই নেতা ও এমপিদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত সভানেত্রী নেবেন তারা বলতে পারছেন না। তারা দলের হাইকমান্ডের বার্তার দিকেই তাকিয়ে আছেন। নেত্রীর মনোভাব বুঝার চেষ্টা করছেন। তবে এসবই পরিষ্কার হবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর।

ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতিনির্ধারক নেতা মনে করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন তরুণ ভোটারদের উপরই জয়লাভের বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করবে। আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ ভোটারদের মন জয়ের জন্য কি থাকছে, এসবই ভাবা হচ্ছে। দলের হাইকমান্ডের নিজস্ব মাঠ জরিপে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে অর্ধশত আসন পরিবর্তন করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, এসব আসনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনের মহাজোট প্রার্থীরাও রয়েছেন। মহাজোট গঠনের পরেই একাদশ নির্বাচনের আমলনামা চূড়ান্ত হবে। তফসিল ঘোষণার পরই প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সকলের আমল নামাই দলের হাইকমান্ডের কাছে আছে। তিনিই বিচার বিশ্লেষণ করে দলীয় মনোনয়ন দিবেন। জনপ্রিয়তা গ্রহণযোগ্যতা দেখেই মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি মহাজোট গঠন এবং বিরোধীজোটের আন্দোলন সবকিছু মোকাবিলা করেই নির্বাচনী মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ।