ঢাকা , সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহান স্রষ্টার বিস্ময়কর সৃষ্টি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পৃথিবী প্রতিদিন একবার নিজ কক্ষের ওপর ঘুরে আসে, এটাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি। প্রতিটি বস্তুর ছায়ার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তার আহ্নিক গতির কারণে। পৃথিবী স্থির থাকলে ছায়ার বিস্তৃতি কখনও সম্ভব হতো না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি কি লক্ষ কর না! কীভাবে তোমার প্রতিপালক ছায়া সম্প্রসারিত করেন? তিনি চাইলে তাকে স্থির করে দিতে পারেন; অনন্ত আমি সূর্যকে করেছি এর নিদর্শক।’ (সূরা ফুরকান : ৪৫)

রাব্বুল আলামিন তার এ বিশাল জগতে কত যে অকল্পনীয় ও বৈচিত্র্যময় বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তা ভাবতেই অন্তর বিস্ময়ে শিউরে ওঠে। অতিশয় ক্ষুদ্র অণু-পরমাণু থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী, বড় বড় প্রাণী এবং অতি বড় নক্ষত্র গ্যালাক্সিতে ভরপুর এ মহাবিশ্ব। আল্লাহর সৃষ্টি বিশেষ করে বিশ্বজগৎ মানুষের জন্য চির বিস্ময়ের বস্তু। বিজ্ঞানীরা মহাকাশ সম্পর্কে বছরের পর বছর গবেষণা করে বিস্ময়কর অজানা অনেক তথ্য আবিষ্কার করেছেন। মহাকাশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য কোরআনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানগুলো ও পৃথিবী সৃজনে এবং দিন-রাত আবর্তনে সেসব জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমানগুলো ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে আর বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র, অনন্ত আমাদের দোজখের আগুন থেকে  মুক্তি দিন।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)। আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার জন্য তার সৃষ্টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, পৌঁছতে হবে চিন্তার সর্বোচ্চ চূড়ায়। এখানে তার বিস্ময়কর সৃষ্টির কিঞ্চিৎ উল্লেখ করা হলো।

সৌরজগৎ
মহাবিশ্বের দিকে তাকালে প্রথমে যে বিস্ময়কর জগৎ দেখতে পাই, তাহলো সৌরজগৎ। সূর্য ও তার গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে গঠিত আমাদের এ সৌরজগৎ। সূর্য একটি সাধারণ নক্ষত্র। এ পর্যন্ত সূর্যের ৯টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। সূর্যের গ্রহ-উপগ্রহের পরিসংখ্যান নিম্নে দেওয়া হলো বুধ : সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। এতে কোনো বায়ুম-ল নেই। এটি ৮৮ দিনে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এ গ্রহের ব্যাস ৩ হাজার ৩০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৩ কোটি ৬০ লাখ মাইল। শুক্র : এর ব্যাস হলো ৭ হাজার ৭০০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৬ কোটি ৭০ লাখ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ২২৫ দিন পরপর।

পৃথিবী : শুধু পৃথিবীতেই জীবনের জন্য উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে তৃতীয় গ্রহ। এর ব্যাস ৭ হাজার ৯১৫ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল। ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা পরপর একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ একটি। মঙ্গল : এ গ্রহের ব্যাস হলো ৪ হাজার ২৩০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ১৪ কোটি ২০ লাখ মাইল। প্রদক্ষিণ করার সময় ৬৮৭ দিন। উপগ্রহ দুটি।

বৃহস্পতি : সূর্যের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এটিতে শুধু গ্যাসই রয়েছে, কোনো পৃষ্ঠ নেই। এর ব্যাস ৮৮ হাজার ৭০০ মাইল। দূরত্ব ৪৮ কোটি ৩২ লাখ মাইল। ১১ বছর ৩৩৫ দিন পর একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ ১৬টি।
শনি : এ গ্রহের ব্যাস প্রায় ৭৫ হাজার মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৮৮ কোটি ৬০ লাখ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় ২৯ বছর ৬ মাস। উপগ্রহ ১০টি। ইউরেনাস : এর ব্যাস ২৯ হাজার মাইল। দূরত্ব ১৭৮ কোটি ৩০ লাখ মাইল। ৮৪ বছর পর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ পাঁচটি।

নেপচুন : ব্যাস প্রায় ২৮ হাজার মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ২৭৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ১৬৫ বছরে একবার। উপগ্রহ দুটি। প্লুটো : এ গ্রহের ব্যাস প্রায় ৩ হাজার ৬০০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৩৬৭ কোটি মাইল। ২৪৮ বছর পর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে।

পৃথিবী
সূর্যের তৃতীয় গ্রহ। এর ব্যাস প্রায় ৭ হাজার ৯১৫ মাইল। আর পৃথিবীর পরিধি হলো ২৫ হাজার মাইল। পৃথিবী পৃষ্ঠের আয়তন ১৯ কোটি ৮০ লাখ বর্গমাইল। এর মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ৬০ হাজার বর্গমাইল স্থলভাগ, বাকি বিশাল অংশ জলভাগ। পৃথিবী প্রতিদিন একবার নিজ কক্ষের ওপর ঘুরে আসে, এটাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি। প্রতিটি বস্তুর ছায়ার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তার আহ্নিক গতির কারণে। পৃথিবী স্থির থাকলে ছায়ার বিস্তৃতি কখনও সম্ভব হতো না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি কি লক্ষ কর না! কীভাবে তোমার প্রতিপালক ছায়া সম্প্রসারিত করেন? তিনি চাইলে তাকে স্থির করে দিতে পারেন; অনন্ত আমি সূর্যকে করেছি এর নিদর্শক।’ (সূরা ফুরকান : ৪৫)। আমরা যদি সত্যিকারভাবে উপলব্ধি করি, তাহলে এসবের মধ্যে রয়েছে আমাদের জন্য জানার বিষয়, গবেষণার দিকনির্দেশনা।
সূর্য

সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্যের অবস্থান। সূর্য পৃথিবী থেকে ১৩ লাখ গুণ বড় এবং এর ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে ৩ লাখ ৩৩ হাজার গুণ বেশি। সূর্যের ব্যাস ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৪৬০ মাইল। সূর্যের মতো হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে যে জগত তাকে বলা হয় তারকা জগৎ বা গ্যালাক্সি। সূর্য যে গ্যালাক্সির অন্তর্ভুক্ত তার নাম মিলকিওয়ে। সূর্য তার কক্ষপথ থেকে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে প্রতি সেকেন্ডে ২০০ মাইল বেগে অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৭ লাখ ২০ হাজার মাইল বেগে ২০ কোটি বছরে একবার ঘুরে আসে।

গ্যালাক্সি বা নক্ষত্র জগৎ
হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে একটি গ্যালাক্সি বা নক্ষত্র জগৎ গঠিত। একেকটি গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র রয়েছে ১০ হাজার কোটি থেকে ৩০ হাজার কোটি পর্যন্ত। আবার নক্ষত্রগুলো একটি থেকে অপরটি অনেক দূরে অবস্থিত এবং নিজ নিজ কক্ষপথে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে অবিরত ঘূর্ণায়মান। বিজ্ঞানীদের হিসাবে এক নক্ষত্র থেকে অপর নক্ষত্রের গড় দূরত্ব ২.৫৫ আলোকবর্ষ বা প্রায় ১৫ লাখ কোটি মাইল। এক আলোকবর্ষ বলতে আলো প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে এক বছরে যত মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে তা বুঝায়, আর তা হলো ৫.৮৭ লাখ কোটি মাইল।

মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা কত তা সঠিকভাবে এখনও জানা যায়নি এবং যাবেও না। তবে অতিকায় শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে যা জানা যায়, এতে দৃশ্য জ্যোতিষ্কের ভর সমষ্টি অদৃশ্য পদার্থের ভরের তুলনায় মাত্র শতকরা ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ পড়ে আছে মানুষের দৃষ্টির বাইরে। আর দৃশ্য গ্যালাক্সির সংখ্যা ১০০ কোটি। বিজ্ঞানীদের ধারণা মহাবিশ্বের গ্যালাক্সির সংখ্যা ২০ হাজার কোটি। সে হিসেবে মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা ২০ হাজার কোটি ১০দ্ধ১০ হাজার কোটি।

এ থেকে অনুমান করা যায়, মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা নিরূপণ করা কত জটিল। আসলে দুনিয়ার সব সমুদ্রের বেলাভূমিতে যত বালুকণা রয়েছে, আকাশম-লে অবস্থিত নক্ষত্রগুলো তত সংখ্যক কিংবা তার চেয়েও অনেক বেশি। এ মহাবিশ্বকে যত জানতে চেষ্টা করা হয় কৌতূহলতা ততই বেড়ে যায়। বিস্ময় আর বিহ্বলতার মাঝে প্রশ্ন জাগে এ মহাবিশ্বের কিংবা বিস্ময়কর মহাসৃষ্টির স্রষ্টার বিশালতা কেমন?

লেখক : শিক্ষক, রসুলপুর জামিয়া ইসলামিয়া, ঢাকা

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মহান স্রষ্টার বিস্ময়কর সৃষ্টি

আপডেট টাইম : ১০:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পৃথিবী প্রতিদিন একবার নিজ কক্ষের ওপর ঘুরে আসে, এটাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি। প্রতিটি বস্তুর ছায়ার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তার আহ্নিক গতির কারণে। পৃথিবী স্থির থাকলে ছায়ার বিস্তৃতি কখনও সম্ভব হতো না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি কি লক্ষ কর না! কীভাবে তোমার প্রতিপালক ছায়া সম্প্রসারিত করেন? তিনি চাইলে তাকে স্থির করে দিতে পারেন; অনন্ত আমি সূর্যকে করেছি এর নিদর্শক।’ (সূরা ফুরকান : ৪৫)

রাব্বুল আলামিন তার এ বিশাল জগতে কত যে অকল্পনীয় ও বৈচিত্র্যময় বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তা ভাবতেই অন্তর বিস্ময়ে শিউরে ওঠে। অতিশয় ক্ষুদ্র অণু-পরমাণু থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী, বড় বড় প্রাণী এবং অতি বড় নক্ষত্র গ্যালাক্সিতে ভরপুর এ মহাবিশ্ব। আল্লাহর সৃষ্টি বিশেষ করে বিশ্বজগৎ মানুষের জন্য চির বিস্ময়ের বস্তু। বিজ্ঞানীরা মহাকাশ সম্পর্কে বছরের পর বছর গবেষণা করে বিস্ময়কর অজানা অনেক তথ্য আবিষ্কার করেছেন। মহাকাশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য কোরআনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানগুলো ও পৃথিবী সৃজনে এবং দিন-রাত আবর্তনে সেসব জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমানগুলো ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করে আর বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র, অনন্ত আমাদের দোজখের আগুন থেকে  মুক্তি দিন।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)। আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার জন্য তার সৃষ্টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, পৌঁছতে হবে চিন্তার সর্বোচ্চ চূড়ায়। এখানে তার বিস্ময়কর সৃষ্টির কিঞ্চিৎ উল্লেখ করা হলো।

সৌরজগৎ
মহাবিশ্বের দিকে তাকালে প্রথমে যে বিস্ময়কর জগৎ দেখতে পাই, তাহলো সৌরজগৎ। সূর্য ও তার গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে গঠিত আমাদের এ সৌরজগৎ। সূর্য একটি সাধারণ নক্ষত্র। এ পর্যন্ত সূর্যের ৯টি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। সূর্যের গ্রহ-উপগ্রহের পরিসংখ্যান নিম্নে দেওয়া হলো বুধ : সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। এতে কোনো বায়ুম-ল নেই। এটি ৮৮ দিনে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এ গ্রহের ব্যাস ৩ হাজার ৩০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৩ কোটি ৬০ লাখ মাইল। শুক্র : এর ব্যাস হলো ৭ হাজার ৭০০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৬ কোটি ৭০ লাখ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ২২৫ দিন পরপর।

পৃথিবী : শুধু পৃথিবীতেই জীবনের জন্য উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে তৃতীয় গ্রহ। এর ব্যাস ৭ হাজার ৯১৫ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল। ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা পরপর একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ একটি। মঙ্গল : এ গ্রহের ব্যাস হলো ৪ হাজার ২৩০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ১৪ কোটি ২০ লাখ মাইল। প্রদক্ষিণ করার সময় ৬৮৭ দিন। উপগ্রহ দুটি।

বৃহস্পতি : সূর্যের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এটিতে শুধু গ্যাসই রয়েছে, কোনো পৃষ্ঠ নেই। এর ব্যাস ৮৮ হাজার ৭০০ মাইল। দূরত্ব ৪৮ কোটি ৩২ লাখ মাইল। ১১ বছর ৩৩৫ দিন পর একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ ১৬টি।
শনি : এ গ্রহের ব্যাস প্রায় ৭৫ হাজার মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৮৮ কোটি ৬০ লাখ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় ২৯ বছর ৬ মাস। উপগ্রহ ১০টি। ইউরেনাস : এর ব্যাস ২৯ হাজার মাইল। দূরত্ব ১৭৮ কোটি ৩০ লাখ মাইল। ৮৪ বছর পর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। উপগ্রহ পাঁচটি।

নেপচুন : ব্যাস প্রায় ২৮ হাজার মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ২৭৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ১৬৫ বছরে একবার। উপগ্রহ দুটি। প্লুটো : এ গ্রহের ব্যাস প্রায় ৩ হাজার ৬০০ মাইল। সূর্য থেকে দূরত্ব ৩৬৭ কোটি মাইল। ২৪৮ বছর পর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে।

পৃথিবী
সূর্যের তৃতীয় গ্রহ। এর ব্যাস প্রায় ৭ হাজার ৯১৫ মাইল। আর পৃথিবীর পরিধি হলো ২৫ হাজার মাইল। পৃথিবী পৃষ্ঠের আয়তন ১৯ কোটি ৮০ লাখ বর্গমাইল। এর মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ৬০ হাজার বর্গমাইল স্থলভাগ, বাকি বিশাল অংশ জলভাগ। পৃথিবী প্রতিদিন একবার নিজ কক্ষের ওপর ঘুরে আসে, এটাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি। প্রতিটি বস্তুর ছায়ার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় তার আহ্নিক গতির কারণে। পৃথিবী স্থির থাকলে ছায়ার বিস্তৃতি কখনও সম্ভব হতো না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তুমি কি লক্ষ কর না! কীভাবে তোমার প্রতিপালক ছায়া সম্প্রসারিত করেন? তিনি চাইলে তাকে স্থির করে দিতে পারেন; অনন্ত আমি সূর্যকে করেছি এর নিদর্শক।’ (সূরা ফুরকান : ৪৫)। আমরা যদি সত্যিকারভাবে উপলব্ধি করি, তাহলে এসবের মধ্যে রয়েছে আমাদের জন্য জানার বিষয়, গবেষণার দিকনির্দেশনা।
সূর্য

সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্যের অবস্থান। সূর্য পৃথিবী থেকে ১৩ লাখ গুণ বড় এবং এর ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে ৩ লাখ ৩৩ হাজার গুণ বেশি। সূর্যের ব্যাস ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৪৬০ মাইল। সূর্যের মতো হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে যে জগত তাকে বলা হয় তারকা জগৎ বা গ্যালাক্সি। সূর্য যে গ্যালাক্সির অন্তর্ভুক্ত তার নাম মিলকিওয়ে। সূর্য তার কক্ষপথ থেকে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে প্রতি সেকেন্ডে ২০০ মাইল বেগে অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৭ লাখ ২০ হাজার মাইল বেগে ২০ কোটি বছরে একবার ঘুরে আসে।

গ্যালাক্সি বা নক্ষত্র জগৎ
হাজার হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে একটি গ্যালাক্সি বা নক্ষত্র জগৎ গঠিত। একেকটি গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র রয়েছে ১০ হাজার কোটি থেকে ৩০ হাজার কোটি পর্যন্ত। আবার নক্ষত্রগুলো একটি থেকে অপরটি অনেক দূরে অবস্থিত এবং নিজ নিজ কক্ষপথে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে অবিরত ঘূর্ণায়মান। বিজ্ঞানীদের হিসাবে এক নক্ষত্র থেকে অপর নক্ষত্রের গড় দূরত্ব ২.৫৫ আলোকবর্ষ বা প্রায় ১৫ লাখ কোটি মাইল। এক আলোকবর্ষ বলতে আলো প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে এক বছরে যত মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে তা বুঝায়, আর তা হলো ৫.৮৭ লাখ কোটি মাইল।

মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যা কত তা সঠিকভাবে এখনও জানা যায়নি এবং যাবেও না। তবে অতিকায় শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে যা জানা যায়, এতে দৃশ্য জ্যোতিষ্কের ভর সমষ্টি অদৃশ্য পদার্থের ভরের তুলনায় মাত্র শতকরা ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ পড়ে আছে মানুষের দৃষ্টির বাইরে। আর দৃশ্য গ্যালাক্সির সংখ্যা ১০০ কোটি। বিজ্ঞানীদের ধারণা মহাবিশ্বের গ্যালাক্সির সংখ্যা ২০ হাজার কোটি। সে হিসেবে মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা ২০ হাজার কোটি ১০দ্ধ১০ হাজার কোটি।

এ থেকে অনুমান করা যায়, মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা নিরূপণ করা কত জটিল। আসলে দুনিয়ার সব সমুদ্রের বেলাভূমিতে যত বালুকণা রয়েছে, আকাশম-লে অবস্থিত নক্ষত্রগুলো তত সংখ্যক কিংবা তার চেয়েও অনেক বেশি। এ মহাবিশ্বকে যত জানতে চেষ্টা করা হয় কৌতূহলতা ততই বেড়ে যায়। বিস্ময় আর বিহ্বলতার মাঝে প্রশ্ন জাগে এ মহাবিশ্বের কিংবা বিস্ময়কর মহাসৃষ্টির স্রষ্টার বিশালতা কেমন?

লেখক : শিক্ষক, রসুলপুর জামিয়া ইসলামিয়া, ঢাকা