বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আমরা ক্রিকেট খেলাটাকে বরাবরই উপভোগ করি। আসলে কী, মাঠের বাইরে বসে খেলা দেখলে একরকম অনুভূতি হয়, আবার মাঠে খেললে অন্যরকম অনুভূতি হয়। আসলে এটা একটা মিলনমেলা হলেও এখানে কিন্তু এক প্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্যমান। আমি চাই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা সব সময় ক্রিকেটে থাকুক। গেল বছরও খেলেছি। এবার খেলছি। খুব উপভোগ করছি। এসব কথা বলছিলেন সাবেক টাইগার ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক।
প্রশ্ন : এই কার্নিভালেও কি প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা অনুভব করতে পারেন?
মোহাম্মদ রফিক : অবশ্যই অনুভব করি। এখানে কিন্তু হার-জিত আছে। একটা ট্রফি আছে। সব দলই চাইবে ওই ট্রফিটা ছুঁতে। সে কারণে অটোমেটিক্যালি প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা চলে আসছে।
প্রশ্ন : মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালের ভবিষ্যত কেমন বলে আপনার মনে হয়?
মোহাম্মদ রফিক : ভবিষ্যত অবশ্যই ভালো। এটা এক সময় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট হয়ে উঠতে পারে। এখানে কারা খেলছে? যারা এক সময় দেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটার ছিল। এখনো তারা অনেকের কাছে জনপ্রিয়।
তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের লিজেন্ড। তবে আয়োজক কমিটিকে অনুরোধ করব আরো একটু ভালো সময়ে যেন এই টুর্নামেন্টটা আয়োজন করা হয়। এটাকে নিয়ে আর একটু প্রচার-প্রচারণা হতে পারত। একটু পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে, টিভিতে অ্যাড দিলে হয়তো এবারও অনেক দর্শক এখানে খেলা দেখতে আসত। টুর্নামেন্টটার পরিচিতি বাড়ত। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়লে, অনেক দর্শক আসলে, টুর্নামেন্টটা কিন্তু ভিন্ন মাত্রা পেতে পারত।
প্রশ্ন : আপনার সমসাময়িক অনেকেই বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। আপনি নেই ধারেকাছেও। আক্ষেপ হয়?
মোহাম্মদ রফিক : এখন আর হয় না। আসলে আমি আগে থেকেই বলে আসছি যে, আমি বোর্ডের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে চাই। অনেক চেষ্টাও করেছি।
আমার সমসাময়িক অনেককেই বলেছি। সবাই কেবল আশ্বাস দিয়েছে। কেউ কিছু করতে পারেনি আমার জন্য। আমি আসলে এখন আর কাউকে কিছু বলে বিরক্ত করতে চাই না। সবাই যার যার মতো ভালো আছে। আমিও ভালো আছি।
প্রশ্ন : বোর্ড আপনাকে মূল্যায়ন করেনি। যদি কখনো বোর্ড আপনাকে আবার ডাকে, যাবেন?
মোহাম্মদ রফিক : বোর্ড ডাকলে আমি সব সময়ই যেতে প্রস্তুত। আজ আমার যা কিছু, তার সবকিছুই এই ক্রিকেটের জন্য।
প্রশ্ন : পরিবার-পরিজন নিয়ে কেমন আছেন?
মোহাম্মদ রফিক : আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। এখন কেরাণীগঞ্জে স্টিলের ব্যবসা করছি। বেশ ভালো হচ্ছে। আমার ছেলে ব্যবসা বুঝে নিয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালো আছি।
প্রশ্ন : ক্রিকেট নিয়ে কীভাবে কাজ করতে চান?
মোহাম্মদ রফিক : আমি একটি একাডেমি গড়ার চেষ্টা করছি। আশা করছি শিগগিরই একাডেমির জন্য মাঠ পেয়ে যাব। বিদ্যুৎমন্ত্রী আমাকে একটি মাঠের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেছেন। সেটা হয়ে গেলে আমি আমার একাডেমি নিয়েই পড়ে থাকব।
প্রশ্ন : মাঝে মাঝে আপনি ভারত যান, সেখানে কী করেন?
মোহাম্মদ রফিক : সেখানে গাঙ্গুলির (সৌরভ গাঙ্গুলি) একাডেমিতে কাজ করি। এই তো চলতি বছরের মার্চে গিয়ে ১৪/১৫ দিন কাজ করে আসছি। ওরা তো আমাকে বারবারই যেতে বলে। ওরা বলে যে, আপনি বছরে তিন-চারবার আসেন। আসলে সব সময় যাওয়া যায় না।
প্রশ্ন : আপনি জানেন যে বিপিএলে পাঁচজন বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মোহাম্মদ রফিক : আসলে পাঁচজন খেলানোর কথা বললেও অনেকেই দেখবেন খেলাবে না। যখন দেশের ক্রিকেটাররা ভালো করবে তখন কিন্তু তাদের খেলাবে না ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। খেলাতে পারে দ্বিতীয় রাউন্ডে গেলে। তবে হ্যাঁ, ঘরের ছেলেরা সুযোগ না পেলে ভালো খেলোয়াড় উঠে আসবে কীভাবে! বিদেশি পাঁচজন না খেললে আমাদের দেশের আরো দুটো খেলোয়াড় দলে সুযোগ পেতে পারত। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেত।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে আসবে?
মোহাম্মদ রফিক : তাদের খেলোয়াড়রা তো আসতে চাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে এই সিরিজ আয়োজন করাটা কঠিন হবে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা আসতে না চাইলে বোর্ড তাদের পাঠাতে পারবে না। তবে অস্ট্রেলিয়া আসুক না আসুক, বাংলাদেশকে তার নিজস্ব সূচি তৈরি করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া না আসলে সেই সময়ে বসে থাকলে চলবে না। অন্য দলকে ডেকে আনতে হবে। জিম্বাবুয়ে সবশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ খেলেছে। তাদেরকে ডাকতে পারেন। কিংবা তাদের মাঠে খেলতে যেতে পারেন। আফগানিস্তান টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে, তাদেরকে ডাকতে পারেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে পারেন। অস্ট্রেলিয়া না আসলে খেলোয়াড়রা কি লম্বা সময় বসে থাকবে? সেটা করা ঠিক হবে না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ দলের স্পিন ভবিষ্যত নিয়ে যদি কিছু বলতেন…
মোহাম্মদ রফিক : সত্যি বলতে কী, ভবিষ্যত ভালো না। সাকিবসহ যে কয়জন আছে, তারা চলে গেলে ওই মানের আর কোনো স্পিনার থাকবে না। তারা না থাকলে এই জায়গাটা গুছিয়ে ওঠা যাবে না। এখন তো আমাদের স্পিন কোচই নেই। পেসের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ স্পিনারও দরকার।
প্রশ্ন : স্পিনার হান্ট নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মোহাম্মদ রফিক : স্পিনার হান্টের জন্য আমি বিজ্ঞাপনও করেছিলাম। ওই পর্যন্তই। এরপর তারা আর খোঁজ নেয়নি। আমি নিজেই নিজের থেকে তাদেরকে ফোন করেছি। তারা বলেছিল যে, তারা আমাকে ডাকবে। জেলা পর্যায়ের পর মূলপর্বে আমাকে ডাকবে। এরপর দেখলাম সেই আয়োজনের পুরস্কার বিতরণীও হয়ে গেল। কিন্তু আমাকে আর ডাকার প্রয়োজন পড়েনি।
সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।