ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এটাই ব্রাজিল

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশের হয়ে ব্যর্থ লিওনেল মেসি, ব্যর্থ আর্জেন্টিনা পুরনো এই গল্পের পুনরাবৃত্তি দেখল ফুটবল বিশ্ব। অন্যদিকে নিজেদের মাঠে দুর্দান্ত ফুটবল খেলল ব্রাজিল। দুই অর্ধের দুই গোলে চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনাল উঠল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। হলুদ জার্সিধারীরা প্রমাণ করলেন, হিসাব-নিকাশ যাই হোক না কেন, এটাই ব্রাজিল! কোপা আমেরিকার নকআউট পর্বে এ নিয়ে পাঁচবারের লড়াইয়ে প্রতিবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা।

সবশেষ ১৯৯১ সালে কোপায় ব্রাজিলকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার ভোরে বেলো হরিজন্তের এস্তাদিও মিনেইরোতে কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। খেলার প্রথমার্ধে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের গোলে ১-০-তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে রবার্তো ফিরমিনোর গোলে ২-০-তে জয় পায় স্বাগতিকরা। ম্যাচটি নিয়ে দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। শেষমেশ ব্রাজিল সমর্থকদের মুখে হাসি। আর আরেকবার হতাশায় ডুবল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা।

কোয়ার্টার ফাইনালের দলগুলোর মধ্যে শুধু আর্জেন্টিনাই ম্যাচের মূল নব্বই মিনিট সময়ে গোল করতে পেরেছিল, অন্য ম্যাচগুলো ০-০ গোলে ড্র হওয়ার কারণে পেনাল্টি শুটআউটে নিষ্পন্ন হয়। এ কারণেই কি না, ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে নামানো একাদশটা আর পরিবর্তন করলেন না আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। ব্রাজিল অবশ্য সে কাজ করেনি। ঊরুর চোটটা বেশ ভোগাচ্ছিল লেফটব্যাক ফিলিপে লুইসকে, ফলে তার জায়গায় জুভেন্টাসের আলেক্স সান্দ্রোকে মাঠে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে।

ওদিকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ব্রাজিলের মাঝমাঠে ফিরে আসেন রিয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরো, অ্যালানের জায়গায়। এ দুটি পরিবর্তন ছাড়া ব্রাজিলের বাকি দল একই রকম ছিল। প্রথম থেকেই আক্রমণ করা শুরু করে ব্রাজিল। ম্যাচের মাত্র দুই মিনিটে স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোর ডান পায়ের জোরালো শট আটকে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি।

তবে শটটা অফসাইড পজিশনে থেকে করেছিলেন ফিরমিনো। গোলটা না হলেও ম্যাচের শুরু থেকেই ব্রাজিল তাদের উদ্দেশ্য বেশ ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয় মেসিদের। ম্যাচের ১৯ মিনিটে দানি আলভেসের নিয়ন্ত্রিত এক পাস খুঁজে পায় ডান প্রান্তে থাকা রবার্তো ফিরমিনোকে। আর্জেন্টিনার ডিফেন্সের হতোদ্যম অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেখান থেকে মাটিঘেঁষা এক ক্রস পাঠিয়ে দেন বক্সে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। সেখান থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি জেসুসের। গোল খাওয়ার পর যেন জেগে ওঠে আর্জেন্টিনা, জেগে ওঠেন মেসি। গোল খাওয়ার আগ পর্যন্ত ম্যাচে মেসিকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও আস্তে আস্তে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন মেসি।

৪৯ মিনিটে মার্টিনেজের বাঁ-পায়ের শট আটকে দেন অ্যালিসন। এর কিছুক্ষণ পরে মেসি-আগুয়েরোর রচনা করা দুর্দান্ত এক আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট শট মেরে নষ্ট করেন দি পল। মেসির একক প্রচেষ্টায় করা দুর্দান্ত আরেক আক্রমণ পোস্টে লেগে ফিরে আসে আবার। আর্জেন্টিনার দুর্ভাগ্য ও গোলপোস্টের সামনে নিষ্ক্রিয় থাকার সুবিধা আর কিছুক্ষণ পরেই কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধের অধিকাংশ সময়ে মেসি-আগুয়েরো-পারেদেস ও লওতারোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচে স্রোতের বিপরীতে সুযোগ পেয়ে যায় ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার মতো সে সুযোগ হেলায় হারায়নি তারা।

গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন দানি আলভেস ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস। জেসুস যে সাবেক ব্রাজিলীয় তারকা রোনালদোর মতো প্রথাগত নাম্বার ‘নাইন’ নন, বরং একজন উইং ফরোয়ার্ড, সেটা এই ম্যাচে বেশ ভালো বুঝিয়ে দিয়েছেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

এটাই ব্রাজিল

আপডেট টাইম : ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশের হয়ে ব্যর্থ লিওনেল মেসি, ব্যর্থ আর্জেন্টিনা পুরনো এই গল্পের পুনরাবৃত্তি দেখল ফুটবল বিশ্ব। অন্যদিকে নিজেদের মাঠে দুর্দান্ত ফুটবল খেলল ব্রাজিল। দুই অর্ধের দুই গোলে চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনাল উঠল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। হলুদ জার্সিধারীরা প্রমাণ করলেন, হিসাব-নিকাশ যাই হোক না কেন, এটাই ব্রাজিল! কোপা আমেরিকার নকআউট পর্বে এ নিয়ে পাঁচবারের লড়াইয়ে প্রতিবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা।

সবশেষ ১৯৯১ সালে কোপায় ব্রাজিলকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার ভোরে বেলো হরিজন্তের এস্তাদিও মিনেইরোতে কোপা আমেরিকার প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। খেলার প্রথমার্ধে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের গোলে ১-০-তে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে রবার্তো ফিরমিনোর গোলে ২-০-তে জয় পায় স্বাগতিকরা। ম্যাচটি নিয়ে দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। শেষমেশ ব্রাজিল সমর্থকদের মুখে হাসি। আর আরেকবার হতাশায় ডুবল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা।

কোয়ার্টার ফাইনালের দলগুলোর মধ্যে শুধু আর্জেন্টিনাই ম্যাচের মূল নব্বই মিনিট সময়ে গোল করতে পেরেছিল, অন্য ম্যাচগুলো ০-০ গোলে ড্র হওয়ার কারণে পেনাল্টি শুটআউটে নিষ্পন্ন হয়। এ কারণেই কি না, ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে নামানো একাদশটা আর পরিবর্তন করলেন না আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। ব্রাজিল অবশ্য সে কাজ করেনি। ঊরুর চোটটা বেশ ভোগাচ্ছিল লেফটব্যাক ফিলিপে লুইসকে, ফলে তার জায়গায় জুভেন্টাসের আলেক্স সান্দ্রোকে মাঠে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে।

ওদিকে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ব্রাজিলের মাঝমাঠে ফিরে আসেন রিয়াল মাদ্রিদের কাসেমিরো, অ্যালানের জায়গায়। এ দুটি পরিবর্তন ছাড়া ব্রাজিলের বাকি দল একই রকম ছিল। প্রথম থেকেই আক্রমণ করা শুরু করে ব্রাজিল। ম্যাচের মাত্র দুই মিনিটে স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোর ডান পায়ের জোরালো শট আটকে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি।

তবে শটটা অফসাইড পজিশনে থেকে করেছিলেন ফিরমিনো। গোলটা না হলেও ম্যাচের শুরু থেকেই ব্রাজিল তাদের উদ্দেশ্য বেশ ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয় মেসিদের। ম্যাচের ১৯ মিনিটে দানি আলভেসের নিয়ন্ত্রিত এক পাস খুঁজে পায় ডান প্রান্তে থাকা রবার্তো ফিরমিনোকে। আর্জেন্টিনার ডিফেন্সের হতোদ্যম অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেখান থেকে মাটিঘেঁষা এক ক্রস পাঠিয়ে দেন বক্সে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে। সেখান থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি জেসুসের। গোল খাওয়ার পর যেন জেগে ওঠে আর্জেন্টিনা, জেগে ওঠেন মেসি। গোল খাওয়ার আগ পর্যন্ত ম্যাচে মেসিকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও আস্তে আস্তে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন মেসি।

৪৯ মিনিটে মার্টিনেজের বাঁ-পায়ের শট আটকে দেন অ্যালিসন। এর কিছুক্ষণ পরে মেসি-আগুয়েরোর রচনা করা দুর্দান্ত এক আক্রমণ লক্ষ্যভ্রষ্ট শট মেরে নষ্ট করেন দি পল। মেসির একক প্রচেষ্টায় করা দুর্দান্ত আরেক আক্রমণ পোস্টে লেগে ফিরে আসে আবার। আর্জেন্টিনার দুর্ভাগ্য ও গোলপোস্টের সামনে নিষ্ক্রিয় থাকার সুবিধা আর কিছুক্ষণ পরেই কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয় ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধের অধিকাংশ সময়ে মেসি-আগুয়েরো-পারেদেস ও লওতারোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচে স্রোতের বিপরীতে সুযোগ পেয়ে যায় ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার মতো সে সুযোগ হেলায় হারায়নি তারা।

গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন দানি আলভেস ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস। জেসুস যে সাবেক ব্রাজিলীয় তারকা রোনালদোর মতো প্রথাগত নাম্বার ‘নাইন’ নন, বরং একজন উইং ফরোয়ার্ড, সেটা এই ম্যাচে বেশ ভালো বুঝিয়ে দিয়েছেন।