বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে গত ১০ বছরে বেতন বৃদ্ধি, পেনশন সহজীকরণসহ প্রায় দশ ধরনের সুবিধা দিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ ও ২০১৫ বাস্তবায়ন করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতীয় বেতন স্কেল-২০০৯ এ প্রথমবারের মতো সরকারি চাকরিজীবীর সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতার প্রবর্তন করা হয়। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতাও দেয়া হয়। বিশেষ করে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের কল্যাণে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সব গ্রেডে মূল বেতন প্রায় দ্বিগুণ করা হয়।
পাশাপশি বেতনের ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বাড়ানোর সুবিধা দেয়া হয়। এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য আহরিত মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালু করা হয়। স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়্ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে ছুটিসহ শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা চালু করা হয়। কর্মচারীদের অবসরকালে অর্জিত ছুটি পাওনা সাপেক্ষে ১২ মাসের ছুটি নগদায়নের স্থলে ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের সুবিধা দেয়া হয়। পাশাপশি আনুতোষিকের হার প্রতি ১ টাকার বিপরীতে ২০০ টাকার স্থলে ২৩০ টাকায় উন্নীত করা হয়।
শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী (তুলে নেয়া) কর্মচারীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সন্তানকে আজীবন এবং বিপত্মীক স্বামীকে সর্বাধিক ১৫ বছর পারিবারিক পেনশন সুবিধা এবং মাসিক চিকিৎসা ভাতা ও বছরে দু’টি উৎসব ভাতার সুবিধা দেয়া হয়।
এদিকে অবসরে যাওয়ার পর শতভাগ পেনশনের অর্থ তুলে নেয়া (সমর্পণ) চাকরিজীবীদের আবারও পেনশনের আওতায় এনেছে সরকার। গত সোমবার (৮ অক্টোবর) এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। মূলত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, শতভাগ পেনশন তুলে নেয়া সরকারি চাকরিজীবীরা অবসর নেয়ার দিন থেকে ১৫ বছর সময় পার হওয়ার পর পুনরায় মাসে কমপক্ষে তিন হাজার টাকা করে পেনশন পাবেন। তবে গ্রেড ভেদে এ পরিমাণ বাড়বে।
এছাড়াও পেনশনযোগ্য চাকরিকাল ১০-২৫ বছর এর স্থলে ৫-২৫ বছর নির্ধারণ এবং পেনশনের হার সর্বশেষ আহরিত বেতনের ৮০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। সরকারি পেনশন এবং পারিবারিক পেনশনভোগীদের জন্য মাসিক পেনশনের ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট চালু করা হয়।
সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের পারিবারিক পেনশন ৩০ শতাংশ হতে বাড়িয়ে বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের ন্যায় শতভাগ করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকি ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ প্রণয়ন করেছে সরকার। এ নীতিমালার আওতায় সরকারের ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক থেকে পাঁচ শতাংশ সরল সুদে (সুদের ওপর সুদ নয়) সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা।
সরকারের নবীন কর্মীরাও যেন একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ির মালিক হতে পারেন সেজন্য একটি নীতিমালা করার কথা জানিয়ে গত জুনে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছর থেকেই তা কার্যকর হবে। এরপর ৩০ জুলাই অর্থ বিভাগ থেকে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। আর আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৫৬ বছর। এ ঋণের সীমা ঠিক করা হয়েছে ২০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ সময় হবে ২০ বছর।
এ ঋণের জন্য ব্যাংক ১০ শতাংশ হারে সরল সুদ নেবে। অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ (সুদের ওপর সুদ) নেয়া হবে না। তবে ঋণগ্রহীতাকে দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাকিটা সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে ভর্তুকি হিসাবে। শুধু বেসামরিক সরকারি কর্মচারীরা যারা স্থায়ী পদে চাকরি করেন তারাই এই ঋণ পাবেন। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কেউ এই ঋণ পাবেন না।
এ ঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর চারটি সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সঙ্গে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এমওইউতে সই করেন।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, এ ঋণের আওতায় সব সরকারি কর্মচারীদের আনতে প্রায় ২ বছর সময় লাগবে। সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠান অটোমোশন হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা প্রাথমিকভাবে এ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তীতে সব কর্মকর্তাদের এ ঋণের আওতায় আনা হবে।