ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণের আভাস পাওয়া গেছে। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এক ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা জোরেশোরে আজ থেকে শুরু করছে। সিলেটে এক সমাবেশের মধ্য দিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে একটি রোডম্যাপও ঘোষণা করবেন। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিতে দলটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সারা দেশে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। খবর যুগান্তর’র।

 

অন্যদিকে বিএনপি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হল, যে ফর্মুলায় হোক না কেন বিএনপি নির্বাচনের মাঠে থাকবে। যদিও বৃহৎ এ দলটি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টাই চালিয়ে যাবে। অপরদিকে রাজনীতির নানা পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারও আগাম নির্বাচন দেয়ার পথে এগোচ্ছে। হঠাৎ যে কোনো সময় এমন ঘোষণা আসতে পারে। রাজনীতির নানা অংকের হিসাব কষে এমনটিই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সেদিকেই গড়াবে। অক্টোবর থেকে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনীতির আবহাওয়া এখন পর্যন্ত সে রকম মেরুকরণের আভাস-ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করে বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা শুক্রবার জানান, সরকার মুখে যত কথাই বলুক না কেন, এটি তাদের আসল কথা নয়। নানা কারণে সরকারকে আগাম জাতীয় নির্বাচন দিতেই হবে। সে জন্য আওয়ামী লীগ তার সুবিধামতো একটি সময় ও সুযোগ খুঁজছে। আর পর্দার আড়ালে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ইতিমধ্যে গোপনে তারা মাঠ জরিপের কাজ শেষ করেছে। তাই যে কোনো সময় আগাম নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু কূটনৈতিক ভূমিকা সামনে চলে আসতে পারে। তারা বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের এভাবে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামার মধ্যে গভীর রহস্য ও অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। তাই গত সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নির্বাচনে আগ্রহী নেতাদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। আর জাতীয় পার্টি নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে থাকলে বিএনপিও বসে থাকবে না।

 

এদিকে সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে- ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। তারপরও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। মাঝখানে তাদের পেট্রল বোমার আন্দোলন অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। এখন নির্বাচন ছাড়া দলকে পুনর্জীবিত করার আর কোনো পথ নেই।

 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অতীত অভিজ্ঞতা বলে দেয়- এরশাদের জাতীয় পার্টি সরকার গঠনে একটা নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার প্রথম ধাপ ছাড়া বাকি সব কটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের আগে ও সরকার গঠনে জাতীয় পার্টি অন্যতম নিয়ামক শক্তির ট্রাম্পকার্ডে পরিণত হয়েছে। নানা সমালোচনা থাকলেও এটিই এখন বাস্তবতা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আরও বড় ফ্যাক্টর হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আভাস দিচ্ছেন। এই যখন অবস্থা তখন এভাবে ঘোষণা দিয়ে এইচএম এরশাদের নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। কেননা, কোনো তথ্য কিংবা ফলযোগ না থাকলে এভাবে জাতীয় পার্টির আগাম নির্বাচনী প্রচারণায় নামার কথা নয়।

 

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার শুক্রবার বলেন, যে কোনো বড় রাজনৈতিক দলেরই চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া। জাতীয় পার্টি ৯ বছর ক্ষমতায় ছিল। এরপর অনেক দিন থেকে দলটি ক্ষমতার বাইরে। তবে যারাই এ সময়ের মধ্যে ক্ষমতায় এসেছে তারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় গেছে। এমন অবস্থায় জাতীয় পার্টি এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দলকে শক্তিশালী করবে। এজন্য তারা আগেভাগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই শনিবার সিলেটে সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন পথে যাত্রা করবে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, যদি নির্ধারিত সময়েও নির্বাচন হয় তাহলে আরও দুই বছর আমাদের হাতে সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করা হবে। সিলেটের পর দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে জাতীয় পার্টি পর্যায়ক্রমে সমাবেশ করবে। সবশেষে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আবুল মকসুদ বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের একটি অংশ। এ পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও। এটা একটি পদ। প্রধান দল আওয়ামী লীগের আগে নির্বাচনী প্রচার শুরু করা অর্থহীন মনে হয় না। যেখানে ২০ দলীয় জোটের দাবি, দ্রুত নির্বাচন। আর সরকারি দলের নেতারা বলছেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়। তাছাড়া সোয়া দুই বছর আগে কোনো দলের নির্বাচন প্রচারের নজিরও দেখা যায় না। তাই বলব, দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের নামে তামাশা চায় না।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটাই হচ্ছে একতরফা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে কোনো ভোটই হয়নি। দেশে ও বিদেশে এ সরকার কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। সবাই জানে, এ সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই আমরা বলে আসছি, সবার অংশগ্রহণে দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশে গণতন্ত্রও ফিরে আসবে। সরকার বলছে, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়। আর সেখানে এরশাদ নির্বাচনের প্রচারে নামছেন। তারপরও বলব, এরশাদের এ নির্বাচনী প্রচার যদি অতি শিগগিরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত হয়ে থাকে, তাহলে তাকে ওয়েলকাম জানাই। বিএনপি এ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কিনা জানতে চাইলে ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপি হচ্ছে মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল, ইলেকশনের দল। বিএনপি সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে যাচ্ছেন তা আগাম নির্বাচনেরই ইঙ্গিত বহন করে। ক্ষমতাসীন দল তখনই নির্বাচন দেয় যখন তারা অত্যন্ত শক্তিশালী থাকে। তাই হয়তো সরকার ভাবছে এখন নির্বাচন দিলে ভালো হবে। সম্প্রতি এক খবরের কাগজে দেখলাম এখন সবাই আওয়ামী লীগ করে। তিনি বলেন, যেহেতু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন গ্রহণ যোগ্যতা পায়নি, সেহেতু আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির নেতারা ভারত সফর করেছেন। আর বাংলাদেশে এখন ভারতের ভূমিকার গুরুত্ব রয়েছে।

 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরোক্ষভাবে অনেক প্রভাব রয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর দেশটির জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলও যার নতুন মাত্রা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানাভাবে ভারতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো দেশ কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে ভূমিকা রাখুক তা কেউ চায় না।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির

আপডেট টাইম : ১০:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০১৬
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণের আভাস পাওয়া গেছে। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এক ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা জোরেশোরে আজ থেকে শুরু করছে। সিলেটে এক সমাবেশের মধ্য দিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে একটি রোডম্যাপও ঘোষণা করবেন। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিতে দলটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সারা দেশে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। খবর যুগান্তর’র।

 

অন্যদিকে বিএনপি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হল, যে ফর্মুলায় হোক না কেন বিএনপি নির্বাচনের মাঠে থাকবে। যদিও বৃহৎ এ দলটি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টাই চালিয়ে যাবে। অপরদিকে রাজনীতির নানা পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারও আগাম নির্বাচন দেয়ার পথে এগোচ্ছে। হঠাৎ যে কোনো সময় এমন ঘোষণা আসতে পারে। রাজনীতির নানা অংকের হিসাব কষে এমনটিই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সেদিকেই গড়াবে। অক্টোবর থেকে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনীতির আবহাওয়া এখন পর্যন্ত সে রকম মেরুকরণের আভাস-ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করে বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা শুক্রবার জানান, সরকার মুখে যত কথাই বলুক না কেন, এটি তাদের আসল কথা নয়। নানা কারণে সরকারকে আগাম জাতীয় নির্বাচন দিতেই হবে। সে জন্য আওয়ামী লীগ তার সুবিধামতো একটি সময় ও সুযোগ খুঁজছে। আর পর্দার আড়ালে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ইতিমধ্যে গোপনে তারা মাঠ জরিপের কাজ শেষ করেছে। তাই যে কোনো সময় আগাম নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু কূটনৈতিক ভূমিকা সামনে চলে আসতে পারে। তারা বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের এভাবে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামার মধ্যে গভীর রহস্য ও অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। তাই গত সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নির্বাচনে আগ্রহী নেতাদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। আর জাতীয় পার্টি নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে থাকলে বিএনপিও বসে থাকবে না।

 

এদিকে সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে- ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। তারপরও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। মাঝখানে তাদের পেট্রল বোমার আন্দোলন অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। এখন নির্বাচন ছাড়া দলকে পুনর্জীবিত করার আর কোনো পথ নেই।

 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অতীত অভিজ্ঞতা বলে দেয়- এরশাদের জাতীয় পার্টি সরকার গঠনে একটা নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার প্রথম ধাপ ছাড়া বাকি সব কটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের আগে ও সরকার গঠনে জাতীয় পার্টি অন্যতম নিয়ামক শক্তির ট্রাম্পকার্ডে পরিণত হয়েছে। নানা সমালোচনা থাকলেও এটিই এখন বাস্তবতা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আরও বড় ফ্যাক্টর হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আভাস দিচ্ছেন। এই যখন অবস্থা তখন এভাবে ঘোষণা দিয়ে এইচএম এরশাদের নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। কেননা, কোনো তথ্য কিংবা ফলযোগ না থাকলে এভাবে জাতীয় পার্টির আগাম নির্বাচনী প্রচারণায় নামার কথা নয়।

 

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার শুক্রবার বলেন, যে কোনো বড় রাজনৈতিক দলেরই চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া। জাতীয় পার্টি ৯ বছর ক্ষমতায় ছিল। এরপর অনেক দিন থেকে দলটি ক্ষমতার বাইরে। তবে যারাই এ সময়ের মধ্যে ক্ষমতায় এসেছে তারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় গেছে। এমন অবস্থায় জাতীয় পার্টি এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দলকে শক্তিশালী করবে। এজন্য তারা আগেভাগেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই শনিবার সিলেটে সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন পথে যাত্রা করবে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন, যদি নির্ধারিত সময়েও নির্বাচন হয় তাহলে আরও দুই বছর আমাদের হাতে সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করা হবে। সিলেটের পর দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরে জাতীয় পার্টি পর্যায়ক্রমে সমাবেশ করবে। সবশেষে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে জাতীয় পার্টি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আবুল মকসুদ বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের একটি অংশ। এ পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও। এটা একটি পদ। প্রধান দল আওয়ামী লীগের আগে নির্বাচনী প্রচার শুরু করা অর্থহীন মনে হয় না। যেখানে ২০ দলীয় জোটের দাবি, দ্রুত নির্বাচন। আর সরকারি দলের নেতারা বলছেন, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়। তাছাড়া সোয়া দুই বছর আগে কোনো দলের নির্বাচন প্রচারের নজিরও দেখা যায় না। তাই বলব, দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের নামে তামাশা চায় না।

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটাই হচ্ছে একতরফা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে কোনো ভোটই হয়নি। দেশে ও বিদেশে এ সরকার কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি। সবাই জানে, এ সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই আমরা বলে আসছি, সবার অংশগ্রহণে দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশে গণতন্ত্রও ফিরে আসবে। সরকার বলছে, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়। আর সেখানে এরশাদ নির্বাচনের প্রচারে নামছেন। তারপরও বলব, এরশাদের এ নির্বাচনী প্রচার যদি অতি শিগগিরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত হয়ে থাকে, তাহলে তাকে ওয়েলকাম জানাই। বিএনপি এ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কিনা জানতে চাইলে ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপি হচ্ছে মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল, ইলেকশনের দল। বিএনপি সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে যাচ্ছেন তা আগাম নির্বাচনেরই ইঙ্গিত বহন করে। ক্ষমতাসীন দল তখনই নির্বাচন দেয় যখন তারা অত্যন্ত শক্তিশালী থাকে। তাই হয়তো সরকার ভাবছে এখন নির্বাচন দিলে ভালো হবে। সম্প্রতি এক খবরের কাগজে দেখলাম এখন সবাই আওয়ামী লীগ করে। তিনি বলেন, যেহেতু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন গ্রহণ যোগ্যতা পায়নি, সেহেতু আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির নেতারা ভারত সফর করেছেন। আর বাংলাদেশে এখন ভারতের ভূমিকার গুরুত্ব রয়েছে।

 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরোক্ষভাবে অনেক প্রভাব রয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর দেশটির জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলও যার নতুন মাত্রা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানাভাবে ভারতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো দেশ কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে ভূমিকা রাখুক তা কেউ চায় না।