হাওরাঞ্চলে ফেয়ার প্রাইস বন্ধ উৎকণ্ঠায় হাজারও পরিবার

হাওরাঞ্চলে ১০ টাকা কেজি (ফেয়ার প্রাইস) চাল ক্রয় করা বন্ধ হওয়ায় হতাশায় ভুগছে হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। এই পরিবারগুলো ছিল অতিদরিদ্র। মধ্যস্বত্ব ভোগীরা কিছু সুবিধা পেলেও বেশির ভাগ অতিদরিদ্র পরিবার এর সুফল পেয়েছিল। বর্তমানে ফেয়ার প্রাইস পাওয়া ওইসব পরিবার সরকার ঘোষিত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ৩৮ কেজি চাল ও নগদ  ৫শ’ টাকা পাওয়ার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। এদিকে ওএমএস চালও সঠিকভাবে পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসী। সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। দুপুরের আগেই শেষ হয়ে যায় চাল বিতরণ। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১০ টাকা কেজি (ফেয়ার প্রাইস) চাল পাওয়া ওই পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের দাবি করলেও দিচ্ছে না। যার ফলে তারা এখন কিভাবে দিন পার করবে এ নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। কারণ এলাকায় কোনো কাজ নেই, হাওরে মাছ নেই অভাব কড়া নাড়ছে ঘরে ঘরে। জানা যায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি জেলার ৯১ হাজার ৫৯০ পরিবার ১০ টাকা কেজি (ফেয়ার প্রাইস) চাল ক্রয় করে চলছিল। চলতি বছরের ৩০শে এপ্রিল এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি জেলার প্রতিটি উপজেলায় বোরো ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধ হাওরগুলোর ফসল হানির কারণে সর্বত্রই হাহাকার বিরাজ করছে। ফসল হানরি পর ১৯শে এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কাছে সুনামগঞ্জের সকল সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকসহ উপস্থিত সবাই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রেখে আরো ১ লাখ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। দাবি জানানোর পর আশ্বাসও পাওয়া যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর কাছ থেকে। এর পর জেলা প্রশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সুনামগঞ্জের জন্য নিয়মিত রাখা ও কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পৃথক পৃথকভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু এর পর এক মাস পার হলেও এখনও পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যলয় থেকে জানা যায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সুনামগঞ্জের ৯১ হাজার ৫৯০টি পরিবার গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এবং চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে ১০ টাকা কেজি ধরে ৩০ কেজি চাল ক্রয় করার সুযোগ পায়। কিন্তু এবার জেলার ৯০ ভাগ বোরো ফসল অকাল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পর ৩০শে এপ্রিল এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন জেলায় অকাল বন্যায় ৩ লক্ষাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ৩৮ কেজি চাল ও নগদ ৫শ’ টাকা দেয়া হচ্ছে। ফেয়ার প্রাইজ পাওয়া ওই পরিবারগুলো খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ভিজিএফ এর চাল ও নগদ টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তাহিরপুর উপজেলার আক্তার মিয়া, আলীম উদ্দিন, জয়নাল মিয়া, নজিন উদ্দিনসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ওই পরিবারগুলো জানান, ১০ টাকা কেজি ধরে চাল পাওয়ায় আমরা আর কোনো সুযোগ পাই না। ১০ টাকা কেজি চাল বন্ধ হয়ে গেছে এখন কিভাবে চলতাম। হাওরের বোরো ধান সব ডুবছে এত দিন ১০ টাকা কেজি চাল পাইয়া কোনো রকমে চলছিলাম অহন বন্ধ হইয়া গেছে কি করমু বুজতাছি না। আবার চালুর দাবি জানাই, না হইলে আমরারে ভিজিএফ কার্ড দেওয়ার দাবি জানাই।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে আবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হবে। এটি বছরের ২টি সময়ে ৫ মাসের জন্য চালু হয়েছিল। গত এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় প্যাকেজ শেষ হয়েছে। এখন আপাতত বন্ধ থাকবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এতদিন যাদের ফেয়ার প্রাইসে চাল কিনার সামর্থ্য ছিল তারাই কিনেছে। ফেয়ার প্রাইস একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় নি আবার চালু হবে। এ ছাড়া এখন ও এমএস চালু আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নিয়মিত রাখা ও কার্ডের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করেছিলাম এখনোও কোনো চিঠি পাই নি।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর