মার্বেল ও ক্রিস্টাল পাথরের তৈরি বঙ্গবন্ধুর বিশেষ প্রতিকৃতি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে দীর্ঘ দুই বছর ধরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মাস্টার্স পডুয়া হতদরিদ্র কারুশিল্পী মোবারক হোসেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য তৈরি করা এই প্রতিকৃতির ওজন ২ মণ ১৫ কেজি। আর এই সুন্দর প্রতিকৃতি এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমান এলাকার মানুষ। তবে এটি কাউকে স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না। কারুশিল্পী মোবারক হোসেন বলেন, এই প্রতিকৃতি কাউকে ধরতে দেওয়া হয় না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই আমি এটি তুলে দিতে চাই। ফেনীর দাগনভূঞার রাজাপুর ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামের মৌলভী বাড়ির মৌলভী আবদুর রশিদের দ্বিতীয় সন্তান ও ফেনী সরকারি কলেজের এমএসএসের শেষবর্ষের ছাত্র কারুশিল্পী মোবারক হোসেন (২৬)। ছাত্রাবস্থায়ই জীবিকার অন্বেষণে বাধ্য হয়ে বের হন কাজের সন্ধানে। শুরু করেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি। আর তা দিয়েই নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করেন। ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম মার্বেল দিয়ে মোবারকের তাজমহল নির্মাণের চিন্তাকে স্বাগত জানান পিতা আবদুর রশিদ। পিতার অনুপ্রেরণায় তিনি কাজ শুরু করেন। মূলত মোবারকের চিন্তা ছিল মার্বেল শুধু খেলনা নয়, এটি দিয়ে হতে পারে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। তাই তিনি রঙ-বেরঙের সাড়ে ১৭ হাজার আকর্ষণীয় মার্বেল দিয়ে তৈরি করেন ৪ ফুট উচ্চতার ৪৪ ইঞ্চি স্কয়ার ফুট দৈর্ঘ্যের ২১টি মিনার। এরপর এর চারপাশে চার রকমের ডিজাইন দিয়ে প্রায় আড়াই বছর পরিশ্রম করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে মোবারক দৃষ্টিনন্দন তাজমহল নির্মাণ করেন। মোবারকের পিতা অনুপ্রেরণা দেন মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতাকে নিয়ে কিছু করতে। আর তাই নিজ হাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি অঙ্কন করে তাতে মার্বেল ও ক্রিস্টাল পাথর দিয়ে ব্যতিক্রমী প্রতিকৃতির চিত্রকর্ম তৈরির সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তির বলে চরম দরিদ্রতার মাঝেও ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে শুরু করেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরির কাজ। আস্তে আস্তে সময় নিয়ে তৈরি করেন সাড়ে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা ও ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি প্রস্থের দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। এর মধ্যে দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার মার্বেল ও ক্রিস্টাল পাথর, লুকিং গ্লাস, গামারি কাঠের বোর্ড, ফ্রেম, ফরমিকা, এলইডি লাইট ও সিলিকন গাম ইত্যাদি। এছাড়াও কারুকাজসহ রয়েছে প্রতীকী ডিজাইন। এই কাজে তার মোট দুই লাখ টাকা ব্যয় হয়। এদিকে দীর্ঘ দুই বছর পর গত বৃহস্পতিবার কাজ শেষ হওয়ার খবর প্রচার হলে প্রতিকৃতিটি দেখতে দলে দলে মানুষ ভিড় করে তার বাড়িতে। তবে কীভাবে এ প্রতিকৃতি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া যাবে তা এখনও জানেন না মোবারক হোসেন। এদিকে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করেন, তিনি যেন এটি সংগ্রহের ব্যবস্থা নেন। হতদরিদ্র মোবারকের এই প্রতিকৃতি প্রধানমন্ত্রী যদি গ্রহণ করেন তা হলে তার শ্রম সার্থক হবে। মোবারক জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রীকে এই উপহারটি তিনি তুলে দিতে চান। এ প্রতিকৃতির কারুকাজে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই দাম হাঁকছেন। অনেকেই নানা প্রলোভনে ফেলে প্রতিকৃতিটি কিনতে চান। তবে নিজ সিদ্ধান্তে অটল মোবারক জানান, তিনি প্রতিকৃতিটি প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কাউকে দেবেন না। মোবারক হোসেন জানান, পড়ালেখা ও কাজের ফাঁকে অল্প অল্প মার্বেল ও ক্রিস্টাল পাথর জোগাড় করে তিনি বাড়িতে বসে প্রতিকৃতিটি তৈরি করেছেন। তবে বেশিরভাগ কাজই তিনি করেছেন রাতে। তিনি জানান, দুই বছর আগে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ও জমি বন্ধক রেখে ২০ হাজার টাকা দিয়ে এই কাজ শুরু করেন। বাকি টাকা টিউশনি করে জোগাড় করেছেন। প্রতিকৃতিটি তৈরির পর লোকজন ছুটে আসছে দেখতে। অনেকেই এই প্রতিকৃতির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে চায়, কিন্তু তিনি তাদের এর ছবি তুলতে দেন না। দাগনভূঞা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু পাগল এ ছেলেটি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার জন্য দুই বছর ধরে নানা অভাব-অনটনের মধ্যে থেকেও প্রতিকৃতিটি তৈরি করে ভালোবাসার যে নজির দেখিয়েছে-এমন বিরল ভালোবাসার জন্য সে সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর