হটস্পট হয়ে উঠছে ঢাকা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ধেয়ে আসছে ঢাকার দিকে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ। এদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে সংক্রমণের গতিতে দেশের অন্যান্য এলাকা ছাড়িয়ে গেছে রাজধানী। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) ২৮৫৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। একই সময়ে সারা দেশে শনাক্ত হয়েছেন ৬২১৪ জন (ঢাকার হিসাবসহ)। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শুধু শনাক্ত নয়, মৃত্যুও বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় শুধু ঢাকা বিভাগেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন ঢাকা জেলায়। এক সপ্তাহে ১০ শতাংশের বেশি নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

অনেক হাসপাতালে ইতোমধ্যে খালি নেই আইসিইউ শয্যা। জটিল রোগীকে বাঁচাতে তাদের স্বজনরা আইসিইউর জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেড়াচ্ছেন। সীমান্তবর্তী জেলার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাও এখন করোনার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠছে। সীমান্তবর্র্তী জেলা-উপজেলার হাসপাতালের চিত্রও ভয়াবহ, খালি নেই শয্যা।

মেঝেতে রেখেই চলছে অনেক রোগীর চিকিৎসা। তৃণমূল পর্যায়ে অনেক হাসপাতালে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকটও। অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। অধিকাংশ গ্রামের মানুষ করোনার নমুনা পরীক্ষা করছে না। অথচ তারা জ্বর-কাশিতে ভুগছেন। বেশির ভাগ হাটবাজারে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। জোর করেও তাদের মাস্ক পরানো যাচ্ছে না। জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েও তেমন কাজ হচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে দেশে করোনা কেড়ে নিয়েছে ৮৫৯ জনের প্রাণ। আগের সপ্তাহে মারা যায় ৫৮৭ জন। এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ সময় ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা বাড়লেও শনাক্ত বেড়েছে ৫১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

গত এক সপ্তাহে সুস্থতার হার বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে শনিবার দুপুরে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, ঢাকার বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করোনা আক্রান্ত জটিল রোগী আসেন। তার দ্রুত আইসিইউ প্রয়োজন।

রোগীর স্বজনরা আইসিইউর জন্য নানা উপায়ে দেন দরবার শুরু করেন। কিন্তু সেখানে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। বাধ্য হয়ে তারা অন্য হাসপাতালে ছুটে যান। একই চিত্র মহাখালী করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালেও। ৭০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। প্রায় এক ঘণ্টা দেনদরবারের পর নিশ্চিত হয় সোনার হরিণ আইসিইউ।

এমন চিত্র রাজধানীর প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের। এ প্রসঙ্গে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ ভাগ করে নতুন রোগী বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগে এমন পরিস্থিতি ছিল না। আগামী কয়েকদিনেও হয়তো রোগী বাড়বে। এরপর লকডাউনের সুফল পাওয়া যেতে পারে। তবে এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।

করোনায় ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ও শনাক্তের হার কমলেও বেড়েছে মৃত্যু। তবে আগের দিনের তুলনায় সাত হাজার ৩২৫টি নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে। একদিনে দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মারা যায় ১৩৪ জন। যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগের দিন মৃত্যু হয় ১৩২ জনের। রোববার দেশে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

সবমিলিয়ে করোনায় দেশে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪৯১২। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৬২১৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৮৪৮৩। এ নিয়ে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হয়েছে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৬। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

আগের দিন এ হার ছিল ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। সরকারি হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩৭৭৭ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ৮ লাখ ২৯ হাজার ১৯৯ জন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৬৬টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১২৮টি, জিন এক্সপার্ট ৪৭টি, র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ৩৯১টি।

এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার ৭০৩টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২২ হাজার ৬৮৭টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৮১টি। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৫৭ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৮৪ ও নারী ৫০ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১০৭ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ২০ জন ও বাড়িতে সাতজন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩ জন, খুলনা বিভাগে ৩৯ জন, বরিশাল বিভাগে তিনজন, সিলেট বিভাগে একজন, রংপুর বিভাগে ১৫ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে চারজন রয়েছেন।

তাদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৬৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৩০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে চারজন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর