করোনা মহামারিতে বেড়েছে বহুমাত্রিক নারী নির্যাতন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যাসহ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের মতো বিভিন্ন অপরাধের ১ হাজার ৪৫১টি ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৭৯৪টি। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে সমাজের বিশিষ্টজনেরা বলেন, করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা যেমন বেড়েছে তেমনি তা বহুমাত্রিক আকার ধারণ করেছে। তারা বলেন, নির্যাতনের শিকার হলেও নারীর পোশাকপরিচ্ছেদ ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে হচ্ছে আলোচনা।

সমাজ-রাষ্ট্র তো নয়ই, পরিবারও নির্যাতনের শিকার নারীর পাশে দাঁড়ায় না। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হলে তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এ সংস্কৃতি অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত হওয়ায় নারী নির্যাতনের বিষয়ে মনোযোগ হারাচ্ছে।

এমন বাস্তবতার মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরের কিশোরী ইয়াসমিনকে একদল পুলিশ পৈশাচিকভাবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে হত্যা করে। প্রতিরোধ গড়ে ওঠে দিনাজপুরসহ সারা দেশে। তারপর থেকে দিবসটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, কোভিডের সময় পারিবারিক সহিংসতা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারী নির্যাতন খুব বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে শিশুদের ওপর নির্যাতন। এসময় নারীর ওপর পারিবারিক সহিংসতা একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। যৌন সহিংসতা, পারিবারিক কলহ, শারীরিক নির্যাতন, হত্যা, তালাক, যৌতুকের জন্য অত্যাচার, বিকৃত যৌনতাও ভিন্ন রূপে কোভিডের সময় আবির্ভূত হয়েছে। অফিস ও স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার ফলে অবসর সময়ে পুরুষ ও শিশুরা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, এখন সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা একটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেছে। নারীর প্রতি সহিংস ঘটনা ঘটলেও তার দিকেই আঙুল ওঠে। তার পোশাক ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মুখরোচক আলোচনা উঠে এবং শেষে তাকেই দায়ী করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারীর পাশে সমাজ ও রাষ্ট্র তো নয়ই পরিবারও দাঁড়ায় না। তাই তো নারীর প্রতি সহিংসতা হলে তেমন প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়া গড়ে ওঠে না। অপরাধের শাস্তির জন্য আইন প্রয়োগ হচ্ছে না। আইন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে কার্যকর হচ্ছে না। এ সংস্কৃতি অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এসময় এমন অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন যারা আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি—এমন তথ্য প্রকাশ করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশ করা জরিপে দেশের ২৭টি জেলায় করা জরিপে দেখা যায়, এসময় ৪ হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। বাল্যবিবাহ হয়েছে ৩৩টি। জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ শিশু আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, স্বামীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৪৮ নারী, মানসিক নির্যাতনের শিকার ২ হাজার আট জন, যৌন নির্যাতনের শিকার ৮৫ জন এবং অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৩০৮ জন নারী।

এর বাইরে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন চার নারী, হত্যা করা হয়েছে এক জনকে এবং যৌন হয়রানি করা হয়েছে ২০ নারীকে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম সমন্বয়ক অর্পিতা দাস বলেন, লকডাউনে ঘরে থাকা চাকরি হারানো মানুষ নারীর ওপর চড়াও হচ্ছেন।

নির্যাতনের হার গ্রামেই বেশি। স্কুল বন্ধ থাকায়, কাজ না থাকায় এ সময় শিশু নির্যাতনের হার বেশি। কোভিডের সময় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের মূল দায়িত্বটা ছিল সরকারের।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর