নদীতে ইলিশ কম ধরা পড়ার কারণ হিসেবে বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বঙ্কিম চন্দ বলেন, গত বছর আর চলতি বছরের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। গত বছর এত তাপমাত্রা ছিল না। এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে নদ-নদীর পানি গরম থাকায় উজানে ইলিশ কম আসায় ধরা পড়ছে না।
তার মতে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসকে ইলিশের মূল মৌসুম ধরা হয়। মে-জুন-জুলাইকে ধরা হয় ‘ডাল সিজন’ হিসেবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদনে হেরফের হচ্ছে।
বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস ছিল বৃষ্টিহীন। মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হলেও এপ্রিলে আবার অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। তবে সামনে বৃষ্টি হলে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বৃষ্টি না হলে ইলিশের দেখা মেলে না
বঙ্গোপসাগরতীরের পাথরঘাটার মানুষ আফসার মাঝি। তিন যুগের বেশি সময় ধরে গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরছেন। বাতাসের গতি-প্রকৃতি আর আকাশ দেখে ইলিশ শিকারে যান। বাতাসের গতি আর আকাশ দেখেই বলে দিতে পারেন মাছের উপস্থিতি।আফসার মাঝি বলেন, ‘ইলিশ হলো ঝাঁকের মাছ। একটা জালে বাধলে অন্যরাও তেড়েফুঁড়ে এসে ঢোকে। যখন বাধে না তখন একটাও বাধে না। পানির রং দেখে মাঝি জাল ফেলার স্থান নির্ধারণ করেন। সাদা ও সবুজ পানিতে মাছ বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হলে সাগরের কোনো কোনো জায়গা সাদা বর্ণ ধারণ করে। বৃষ্টির মিঠা পানি সমুদ্রের লোনা পানির সঙ্গে যখন মেশে, তখন তা ইলিশ মাছকে খুব আকর্ষণ করে। সে পানিতে মাছের গায়ে চর্বি জমে, আর পেটে আসে ডিম। বৃষ্টি না হলে মাছ লুকিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে। তাকে তখন খুঁজে পাওয়া জেলের সাধ্যের বাইরে।’
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, জুলাই ও আগস্ট মাসে যখন বৃষ্টিপাত বেশি হয়, পানির স্রোত বেড়ে যায়, তখন ইলিশের পরিমাণ বেশি হয়। এখন যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত শুরু হয়, তাহলে ইলিশ আসা শুরু করবে। এ ছাড়া ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম অক্টোবর-নভেম্বর মাস সামনে। তখন হয়তো পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আমাদের বর্ষা মৌসুমে এখন হেরফের হচ্ছে। ইলিশের প্রজনন, উৎপাদনেও তাই হেরফের হচ্ছে।’