মসজিদ নিয়ে গর্ব করা : মসজিদ আল্লাহর ঘর।
কারো ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটানো : মসজিদে পার্শ্ববর্তী মুসল্লির অসুবিধা করে উচ্চৈঃস্বরে জিকির করা, এমনকি কোরআন তিলাওয়াত করাও নিষিদ্ধ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে ইতিকাফ করছিলেন। তিনি শুনতে পেলেন সাহাবিরা উচ্চ আওয়াজে কোরআন তিলাওয়াত করছে। তাদের তিলাওয়াত শুনে তিনি পর্দা খুলে বলেন, ‘মুসল্লি তার রবের সঙ্গে কানে কানে কথা বলে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ করে সে তার রবের সঙ্গে কী বলছে। আর তোমাদের কেউ যেন একে অপরের ওপরে উচ্চৈঃস্বরে কোরআন তিলাওয়াত না করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৩২)
দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ : মসজিদে মানুষ নামাজ আদায় করতে আসে। দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। পেঁয়াজ, রসুন, মুলা, বিড়ি, সিগারেট ও তামাকজাতীয় কোনো কিছু খেয়ে মসজিদে যাওয়া দোষণীয়। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) খায়বার যুদ্ধের সময় বলেন, ‘যে ব্যক্তি এসব গাছের কোনো একটি খায়, অর্থাৎ রসুন বা অনুরূপ স্বাদ ও গন্ধের কোনো কিছু খায় সে যেন মসজিদে না আসে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৩৫)
ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, বিড়ি, সিগারেট ও তামাকজাতীয় সব বস্তু হারাম। আর তাতে আছে উৎকট দুর্গন্ধ, যা পরিত্যাগ করা প্রত্যেক মুসল্লির জন্য অত্যাবশ্যক।
কারুকার্য ও নকশা করা : উলামায়ে কেরাম মসজিদ কারুকার্যমণ্ডিত করা অপছন্দ করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন নবী করিম (সা.) একটি নকশা অঙ্কিত কাপড়ে সালাত আদায় করলেন এবং (সালাত শেষে) বলেন, ‘এ কাপড়ের নকশা ও কারুকার্য আমার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। এটা নিয়ে আবু জাহমের কাছে যাও এবং সাদামাটা মোটা চাদরখানা আমাকে এনে দাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫২)
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মসজিদ উচ্চ ও চাকচিক্যময় করে নির্মাণ করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, অবশ্যই তোমরা মসজিদগুলোকে চাকচিক্যময় করবে, যেভাবে ইহুদি-খ্রিস্টানরা (গির্জা) চাকচিক্যময় করেছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৮)
সহবাস করা : মসজিদে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীগমন কোরো না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় থাকো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)
তবে মসজিদে ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা ও খোঁজখবর নেওয়ায় কোনো অসুবিধা নেই। আর এই বিধান সব সময়ের জন্য।
নিজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নির্ধারণ করা : আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন কাকের ঠোকরের মতো (তাড়াতাড়ি) সিজদা করতে, চতুষ্পদ জন্তুর মতো বাহু বিছাতে এবং উটের মতো মসজিদের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে নিতে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৬২)
আজানের পর মসজিদ থেকে বের না হওয়া : কেউ মসজিদে অবস্থানকালে কোনো সালাতের জন্য আজান হয়ে গেলে ওজর ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া উচিত নয়। আবু শাসা (রা.) বলেন, আসরের সালাতের আজান হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এই ব্যক্তি আবুল কাসিম (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৪)
তবে পবিত্রতা অর্জনের জন্য, টয়লেটে অথবা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া জায়েজ আছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, (একবার) সালাতের ইকামত দেওয়া হয়ে গেল, লোকেরা তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বেরিয়ে এলেন এবং সামনে এগিয়ে গেলেন, তখন তাঁর ওপর গোসল ফরজ ছিল। তিনি বলেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অপেক্ষা করো। অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং গোসল করলেন, অতঃপর ফিরে এলেন, তখন তাঁর মাথা থেকে পানি টপ টপ করে পড়ছিল। অতঃপর সবাইকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৪০)
কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে সেখানে না বসা : জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তোমার ভাইকে তার স্থান থেকে না ওঠায় এবং তাকে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে সে স্থানে না বসে। তবে তাকে বলবে, তুমি জায়গা প্রশস্ত করো। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৮১)