ময়মনসিংহ-৭(ত্রিশাল) আ. লীগ কোন্দলে লণ্ডভণ্ড, নতুন মুখের সন্ধানে ভোটাররা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকেই ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত। ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে নৌকা বিজয়ী হয়েছে কোন রকম বাধা ছাড়াই। যদিও ১৯৭৯ সালে, আওয়ামী লীগ থেকে দল বদল করে বিএনপি নেতা বনে গিয়ে আবুল মনসুর সাংসদ হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না যাওয়ায় জাতীয় পার্টির আনিসুর রহমান মানিক সাংসদ হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে অধিক আত্মবিশ্বাস ও কিছুটা দলীয় কোন্দলে মাত্র কিছু ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম তরফদার। এরপর থেকে একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগ এই আসনটি ধরে রাখলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে মহাজোট রক্ষার স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। তবুও কথিত আছে, অন্ধকারের নানান প্রভাব কাজে লাগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীকে পরাজিত করানো হয়েছে।
এই আসনটির একটি ভিন্ন মাত্রা হলো, নব্বইয়ের দশক থেকে এখানে কোন প্রার্থীই দুইবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান না। ২০১৪ সালের ইলেকশনে সাবেক সাংসদকে মনোনয়ন দিলেও তিনি এলাকায় ঢুকতে না পারায় এরশাদকে ছেড়ে দেয়া হয় আসনটি। ফলে যিনি যখন মনোনয়ন পান, তিনি বিজয়ী হয়েই নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করায় এবং এভাবে বর্তমানে তিনজন সাবেক সাংসদের তিনটি গ্রুপই মাঠে সক্রিয়। এর সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী পৌর মেয়র আনিছুজ্জামানের আরেকটি গ্রুপ।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এভাবেই আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাটি আজ বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রার্থীরা ধরাশায়ী হয়েছে। বিগত দুটি উপজেলা নির্বাচনেই দলের প্রার্থী, সাবেক সাংসদ আব্দুল মতিন সরকার বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আব্দুল মতিন সরকারের ছেলে যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম সরকার জুয়েল পরাজিত হয়েছে, যদিও বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র পাচটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হতে সক্ষম হয়েছে।

এসব পরাজয়ের একমাত্র কারণ দলীয় কোন্দল। ত্রিশাল উপজেলা পর্যায়ের গ্রুপিং-এর খেসারত দিচ্ছেন ওয়ার্ড, ইউনিয়নের কর্মীরা। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, এই চার গ্রুপের যে কেউ ভবিষ্যতে কোন নির্বাচনে লড়লে পরাজয় নিশ্চিত। কারণ, বিজয়ী করার জন্য তারা জোটবদ্ধ না হতে পারলেও, কাউকে পরাজিত করার জন্য মুহুর্তেই জোটবদ্ধ হয়ে মাঠে নামেন নেতারা। সাম্প্রতিক অতীতে এমনটাই দেখা গেছে। এখানে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, নৌকার বিরুদ্ধে নৌকা।

ক্ষমতাসীন দলটির এমন বেহাল অবস্থার সুযোগ নিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। জাতীয় পার্টির সাংসদ মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে, আওয়ামী লীগ বহুধাবিভক্ত, এমন মওকা হাতছাড়া করার পাত্র নিশ্চয়ই সরকারী আমলারা নন। একটু চোখ-কান খুলে তাকালেই পাওয়া যাবে অসংখ্য প্রমাণ, নেই কোন উন্নয়নের ছোয়া, হরহামেশা গ্রেফতার-হয়রানী চলছে যার যার খেয়াল খুশিমতো।

এ অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা একদম ফ্রেশার অথাৎ নতুন মুখের সন্ধান করছেন। যিনি কোন গ্রুপিংয়ের সঙ্গে জড়িত নন। আওয়ামী লীগের পরিক্ষীত ও নিবেদিতপ্রাণ প্রার্থী পেলে নৌকার ভোটাররা নৌকাতেই ভোট দিবেন, খোঁজ নিয়ে পুরো ত্রিশালের এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর