উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আগামী নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবার সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আপনাদেরই সংগঠন। এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন, যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, বাংলা ভাই হয়। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এমনকি জনগণের টাকা, এতিমখানার টাকা চুরি করে খায়। ’ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরীর অদূরে পবা উপজেলার হরিয়ান চিনিকল মাঠের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের মানুষ আর দরিদ্র থাকবে না। আজকে পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।

বিশ্বসভায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। তাহলেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। ’

বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের স্থান হবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে অনেক অভিভাবক আছেন, মা-বাবারা আছেন, ভাই-বোনেরা আছেন, শিক্ষকরা আছেন, মসজিদের ইমাম সাহেবরা আছেন; আমি আপনাদের সকলের কাছে আবেদন রেখে যাচ্ছি, সেটা হলো—আপনারা আপনাদের ছেলে-মেয়ে যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তারা কার সঙ্গে মেশে, কোথায় যায়, কিভাবে চলে, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো কি না, বিপথে চলে গেল কি না তা দেখতে হবে। ’

প্রধানমন্ত্রী সবার দোয়া কামনা করে বলেন, ‘আপনারা যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন, তা যেন পালন করতে পারি। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। ওপরে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না। এই বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে ইনশাআল্লাহ প্রতিষ্ঠিত করব, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব—এটাই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা। ’

মসজিদের ইমামদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম। ইসলামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের কোনো জায়গা নাই। ইসলাম মানুষ হত্যাকে কখনোই সমর্থন করে না। কাজেই কেউ হত্যা করে বেহেশতে যাবে না। দোজখে যাবে। এটাই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা। কাজেই প্রত্যেকে ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, ইসলাম যে উন্নতির ধর্ম সেটা ভালোভাবে প্রচার করবেন। ’

বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবারে নিহতদের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পিতা-মাতা-ভাইসহ সব হারিয়ে আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি একটাই কারণে—আমার বাবা চেয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। আমার বাবা চেয়েছিলেন বাংলার মানুষ মোটা ভাত খাবে। এ দেশের কৃষক, এ দেশের শ্রমিক, এ দেশের মেহনতি মানুষের কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। আপনারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আপনাদের দোয়া চাই। ’

বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে উপস্থিত হলে হাজারো মানুষের করতালি ও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো জনসভাস্থল। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভাস্থল থেকেই একযোগে রাজশাহীর ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন।

পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, রাজশাহীতেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক উদ্বোধন করা হলো।

গেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার বাড়ি করে দেওয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তরে একসময় মঙ্গা ছিল। আমরা মঙ্গা চিরতরে দূর করেছি। কৃষির উত্পাদন বেড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এগুলোতে ৩০ ধরনের ওষুধ ফ্রি বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ’

সভায় অন্যদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, আয়েন উদ্দিন এমপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর