খোলা আকাশের নিচে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো পরিবার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দুই মাসের বেশী আগে দিনাজপুরের সকল এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হাজার হাজার কাঁচা ঘর-বাড়ী মিশে গেছে মাটির সাথে। ধ্বংস হওয়া বাড়ী-ঘরের পাশে কোন রকমে একপ্রকার খোলা আকাশের নীচে বসবাস হাজার হাজার পরিবার বাস করছে। ঋণ করে পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া আমন ক্ষেত আবাদ করলেও ফসল ঘরে আসতে দেরী আছে। পেটের ক্ষুদা নিবারন করতে ঋণের পরিমান বেড়ে গেছে। ঘর নির্মাণ করবে কি দিয়ে। আশ্বাস ছিল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন করবে সরকার। কিন্তু পুনর্বাসন দূরের কথা টিনও পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্থ। তবে বেশ কিছু এলাকায় টিন দেয়া হয়েছে যা রাজনৈতিক ও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাদের তালিকা মোতাবেক। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। এ অবস্থায় বানভাসী মানুষদের নিজ ভিটেমাটিতে ধ্বংস স্তুপের মধ্যে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কোন পথ খুজে পাচ্ছে না।
গত আগষ্ট মাসে দিনাজপুর অঞ্চলে স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ বন্যা বয়ে যায়। সরকারী হিসাবে জেলার ৭৮টি ইউনিয়ন ও ৮ টি পৌর এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৫৯২৯৯ টি বাড়ী ঘর পূরোপূরী ধ্বংস হয়ে গেছে। মাঠের চিত্র আরো বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলা। দু্িট উপজেলার ৯০ শতাংশ কাঁচা ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। আমন ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ জন আশ্রয়স্থল থেকে নিজেদের বাড়ী ফিরে। কিন্তু কাঁচা ঘর ভেঙ্গে পুরো উঠোন কর্দমাক্ত হয়ে যায়। হাতে টাকা না থাকায় কোন ভাবে মাথার উপর কাপড় ঝুলিয়ে কেউ বা গাছের নিচকে ঘড় বানিয়ে বসবাস করতে থাকে। এ অবস্থা এখনো বিরাজ করছে অনেক গ্রামে।
বিরলের ধর্মপুর, ভান্ডারা মুখলিশপুর সদরের মাঝাডাঙ্গা, চেতড়া, গাবুড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মাটির ঘরের কাদা সরানো সম্ভব হয়নি। নিজেই দিন মজুর করে খাওয়া জোগাড় করছে। বাড়ী-ঘরের কাঁদা সরানোর জন্য হাজিরা লাগাবে কি ভাবে। আবদুল করিম নামে এক কৃষি শ্রমিক তার ভাঙ্গা ঘর দেখিয়ে বললো মেরামত করা সম্ভব না। নুতনভাবে ঘর তৈরী করতে হবে। দিনমজুর করে যা পাচ্ছি তা দিয়ে পরিবারের খাওয়া জোটানই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সে জানালো বন্যায় ঘরের কিছু বাঁচাতে পারিনি। বাঁচেনি জমির ফসল। নুন থেকে চাল সব কিছুই টাকা দিয়ে কিনে খেতে হচ্ছে। বন্যার পানি থাকা অবস্থায় আশ্রয় কেন্দ্রে খিচুড়ী পেয়েছিল। কিন্তু এখন কেউ খোঁজ নেয় না।
বানভাসী মানুষদের মতে, বন্যার সময় কিস্তি আদায় বন্ধ ছিল। এখন আবার কিস্তি আদায় শুরু হয়েছে। ঋন নিয়ে আবাদ করা ক্ষেতের ফসল পানির দামে বিক্রি করে কিস্তি পরিশোধ আর খাওয়া যোগাতে হচ্ছে। ফলে ধান পাকলেও সেই ধান ঘরে আনতে পারবো না। আর ধান থেকে টাকা না পেলে ইরি-বোরো ধান আবাদ করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় সাহায্য হোক আর ঋন হোক যে কোন উপায়ে অর্থেও যোগান না দেয়া হলে দিনমজুর আর কৃষকদের ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো যাবে না।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর