৩০ দেশের কূটনীতিককে যা বলল বিএনপি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ৩০টি দেশের প্রতিনিধিদের জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক সূত্র জানায়, কূটনীতিকদের কাছে বিএনপি বলেছে, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলা পুরোটাই সাজানো। তাকে হয়রানি করতে এই মামলা করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় তাকে নির্বাচনে অযোগ্য করতে সরকার শাস্তি দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।’

বৈঠক শেষে কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক সম্পর্কে বলেছেন, ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। নাথিং মোর।’

এ সময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে বলেন, সরকারি খরচে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারাভিযান বন্ধ করতে হবে। না হলে বিএনপিকে জনসভা করার সুযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারাভিযানে নেমে গেছেন। স্পষ্টভাবে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। তার এই অবস্থানে প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আসলে কী। সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়। কিন্তু প্রায় এক বছর আগেই সরকারি দল রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করেছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, নির্বাচন কমিশন কতটুকু শক্ত!’

ইসির প্রতি মওদুদ আহমদ বলেন, তাদের এ ধরনের সরকারি খরচে প্রচারাভিযান করা বন্ধ করতে হবে। না হলে বিএনপিকেও জনসভা করার সুযোগ দিতে হবে। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রচারাভিযান লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা নয়। এখন দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী  আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেটে ভোট চাইছেন, আর বিএনপি আদালতের বারান্দায়।

এদিকে বৈঠক সম্পর্কে দলটির একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বিশেষ করে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টি কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়। কূটনৈতিকদের হাতে এ-সম্পর্কিত একটি ফাইলও হস্তান্তর করেছে দলটি।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, সরকার যে প্রতিহিংসামূলকভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়ে বিচারকাজ চালাচ্ছে, বিশেষ করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করার কোনো তথ্য-প্রমাণ না থাকার বিষয়টি কূটনীতিকদের কাছে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে নির্বাচন সামনে রেখে ‘তড়িঘড়ি’ করে এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করার বিষয়টি বলা হয়েছে কূটনীতিকদের।

বৈঠকে জাপান, নেদারল্যান্ড ও নেপালে রাষ্ট্রদূত ছাড়া ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনারসহ জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, মরক্কো, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, তুরস্ক, কুয়েত, ভ্যাটিকান সিটি, ভিয়েতনামসহ ৩০টির বেশি দেশের কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদের অংশ নিতে দেখা যায়নি।

বিএনপি মহাসচিব ছাড়া বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ফাহিমা মুন্নী ও রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর