ভাসমান বাশেঁর সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জামালপুরে ঝাড়াকাটা নদীতে হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে বাশেঁর ভাসমান সাঁকোর উপর দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের হাজারো মানুষ। রেলিং বিহীন ঝুঁকিপুর্ণ এই সাঁকো দিয়েই তাদের চলাচল করতে হয়। পথচারী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, কৃষিপন্ন নিয়ে কৃষকের বাজারে যাতায়াতে দীর্ঘদিন ধরে দুভোর্গ পোহাচ্ছে । কবে নাগাদ সেতু নির্মাণ হবে বলতে পারেনা কেউ।

জনপ্রতিনিধিরা শুনায় আশার বানী। নাগরিক সুবিধাহীন দুর্গম চরের নাম বীর সগুনা। এ গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝাড়কাটা নদী। নদীর এপারে মেলান্দহ উপজেলার ঘোষের পাড়া ওপারে মাদারগঞ্জের গুনারীতলা ইউনিয়ন। সাঁকোর চারপাশের গ্রামীন মেঠোপথগুলোর অবস্থাও করুন। এ পথে যানবাহন চলে নৌকার মতো হেলেদুলে। মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ উপজেলার নোমান্সল্যান্ডে হওয়ায় এ অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

এই দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাড়কাটা নদীর উপর বাঁশের ভাসমান সাঁকো উপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে। যমুনার শাখা নদীটি বর্ষা মৌসুমে ভয়ংকর রুপ ধারন করলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দু’পাড়ের মানুষজনের। এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য বীর সগুনা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ (৬০) বলেন, ২০০৩ সালে বর্তমান পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য মির্জা আজম বীর সগুনা প্রাথমিক স্কুল মাঠে জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং আমি এমপি নির্বাচিত হই, আমার প্রথম কাজ হবে ঝাড়কাটা নদীর উপর সেতু নির্মান করা।

সেই প্রতিশ্রুতির ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেতু নির্মাণ হয়নি। জীবিতকালে সেতু নির্মান দেখে যেতে পারো কিনা জানিনা। বীর সগুনা গ্রামের আব্দুস সামাদ (৪৮) জানান, নদীর দক্ষিন পাশে বীর সগুনার সিংহভাগ মানুষ বসবাস করে উত্তর পাশে প্রাথমিক স্কুল। এই নড়বড়ে সাঁকোর উপর দিয়ে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। সাঁকো থেকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিক বার। সবচেয়ে বেশী ভুগান্তিতে পড়ে শিশু,বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মহিলারা।

নদীর উভয় পাশের মানুষ তাদের উৎপাদিত খাদ্যশস্যসহ নানা প্রকারের কাঁচামাল স্থানীয় বাজার বা মাদারগঞ্জের গুনারীতলা মেলান্দহের বেলতৈল ও হাজরাবাড়ী হাটে পরিবহনে সমস্যায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে র্দীঘদিন ধরে। অনেকেই যেতে না পেরে কাছের বাজারে স্বল্পমুল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করে লোকসান গুনছে। বীর সগুনা গ্রামের কৃষক সবুর মিয়া (৪৫) বলেন, আমাদের আবাদ করা ধান,পাট শাকসবজি হাট বাজারে নিয়ে যেতে কষ্ট হয়। বেশী মাল থাকলে সাঁকো পার হওয়া যায়না। আমাদের দূর্ভোগ নিয়ে চেয়ারম্যানরে বললে সে বলে ব্রীজ করবো, ইঞ্জিনিয়ার আইতাছে ইঞ্জিনিয়ার আইতাছে, ইঞ্জিনিয়ারও আসেনা ব্রীজও হয়না।

কলেজ ছাত্র মোখলেছুর রহমান (২৫) বলেন, ২০১৫ সালে আমি এইচএসসি পরিক্ষার্থী। আমাদের কেন্দ্রটা দুরে। সকাল ৮টা বেজে গেছে, তরিঘরি করে হাজবাড়ী কলেজ কেন্দ্রে পরিক্ষা দিতে যাওয়ার সময় সাঁকো পারাপারকালে পাঁ পিছলে এডমিট কার্ডটি পড়ে যায়। এডমিট কার্ডটি নদী থেকে তুলে নিয়ে যেতে সময় ও ভিজা এডমিট কার্ড নিয়ে পরিক্ষা কেন্দ্রে সমস্যায় পড়েছিলাম। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী নড়বড়ে সাঁকোর কারণে সময় মত স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে পারে না। তাই এই নদীর উপর সেতু নির্মাণ খুবই প্রয়োজন।

চাড়াল কান্দী গ্রামের সাদ্দাম হোসেন (২৮),বীরসগুনা গ্রামের ইদ্রিস আলী (৩০) ও কাহেত পাড়া গ্রামের মিন্টু মিয়া (৩৫) জানান, দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ড্রামের উপর বাঁশ বসিয়ে ভাসমান সাঁকোটি নির্মাণ করেছি। সেটিও এখন দুরবস্থা। যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মেলান্দহের ঘোষের পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বেলাল বলেন, আসলে সাঁকোটা দিয়ে মানুষের যাতায়াত কষ্ট হচ্ছে। ঝাড়কাটা নদীর উপর ব্রীজ হলে এখানকার মানুষের আত্ন সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এখনতো সরকারের সময় শেষ, মন্ত্রী মহোদয় সামনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দল সরকার গঠন করলে তার নজরে এনে এখানে সেতু নির্মানের চেষ্টা করা হবে।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর