ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গানে গানে বাংলাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন দুই জাপানি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ চেহারা দেখে যেকেউ বলবে, তিনি জাপানি। যখন কথা বলবেন তার সঙ্গে, মনে হবে বাংলাদেশি! একজন জাপানি হয়েও শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলেন তিনি। ওয়াতানাবে এতটাই বাংলাপ্রেমী যে, নিজেকে যতটা না জাপানি পরিচয় দেন, তারচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বাংলাদেশি হিসেবে। বাংলা এতটাই তার পছন্দ যে, আনমনে বাংলা বলে চলেন, ইচ্ছেমতো প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লিখে চলেন বাংলা।

পুরো নাম মায়ে ওয়াতানাবে। তার স্বামী শুনসুকে মিজুতানিও বাংলাকে একইভাবে ভালোবাসেন। ‘বাজনা বিট’ নামের একটি বাংলা গানের দল করেছেন এ দম্পত্তি। তারা গানে গানে বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতি এক আড্ডায় বাংলা প্রেম নিয়ে অকপটে বলেন এ দম্পত্তি।

গল্পের শুরুটা করলেন শুনসুকে মিজুতানি। দু’জনের মধ্যে তিনিই প্রথম বাংলাদেশে আসেন। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসি। তখন কাজের প্রয়োজনে খুব ভয়ে ভয়েই পা রাখি এদেশে। যখন এদেশে আসি, এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করি তখন বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে যাই। গ্রামে গিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে চলাফেরা করেছি। জাপান তো একটা উন্নত দেশ, কিন্তু সেদেশে হিউম্যানিটি হারিয়ে গেছে। যেটা বাংলাদেশের ভেতরে আমি দেখি। তখনই বাংলাদেশে বাকি জীবনটা কাটানোর স্বপ্ন দেখি এবং থাকতে শুরু করি।‘বাজনা বিট’ নামের একটি বাংলা গানের দল করেছেন এ দম্পত্তি

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাস শুরু করেন এ দুই জাপানি। এরমধ্যে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন। তাদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো দেশ বাংলাদেশ। এখানকার মানুষের মধ্যে যে ভাষা প্রেম, তা আর কোথাও নেই। এদেশের মানুষের দেখাদেখি শুনসুকে-ওয়াতানাবেও বাংলাকে ভালোবেসেছন। তারা জানেন বায়ান্নর গল্প। প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে যান শহিদ মিনারে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ গানটির চারলাইন গাইতে গাইতে ফুল দেন বেদি স্পর্শ করে। এসময় তার চোখে অশ্রু ঝরে।

ওয়াতানাবে বলেন, আমরা একুশের কয়েকবার শহীদ মিনারে যাই। যখন লাইনে দাঁড়িয়ে ফুল দিই, আর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি শুনি, তখন অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। মানুষ নিজের প্রাণ আর রক্ত দিয়েছে যে ভাষার জন্য, সেই ভাষা শিখে অনেক ভালো লাগছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি জাতি তার ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শিখেছে।

বাংলাদেশে এসে এ দুই দম্পত্তি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। শুধু বাংলা ভাষা নয়; এদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কেও ভালো জ্ঞান আছে তাদের। এদেশের মানুষের ভাবনা ও ভালোবাসার মধ্যে তারা খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের আরেক জীবন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

গানে গানে বাংলাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন দুই জাপানি

আপডেট টাইম : ১০:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ চেহারা দেখে যেকেউ বলবে, তিনি জাপানি। যখন কথা বলবেন তার সঙ্গে, মনে হবে বাংলাদেশি! একজন জাপানি হয়েও শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলেন তিনি। ওয়াতানাবে এতটাই বাংলাপ্রেমী যে, নিজেকে যতটা না জাপানি পরিচয় দেন, তারচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বাংলাদেশি হিসেবে। বাংলা এতটাই তার পছন্দ যে, আনমনে বাংলা বলে চলেন, ইচ্ছেমতো প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লিখে চলেন বাংলা।

পুরো নাম মায়ে ওয়াতানাবে। তার স্বামী শুনসুকে মিজুতানিও বাংলাকে একইভাবে ভালোবাসেন। ‘বাজনা বিট’ নামের একটি বাংলা গানের দল করেছেন এ দম্পত্তি। তারা গানে গানে বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতি এক আড্ডায় বাংলা প্রেম নিয়ে অকপটে বলেন এ দম্পত্তি।

গল্পের শুরুটা করলেন শুনসুকে মিজুতানি। দু’জনের মধ্যে তিনিই প্রথম বাংলাদেশে আসেন। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসি। তখন কাজের প্রয়োজনে খুব ভয়ে ভয়েই পা রাখি এদেশে। যখন এদেশে আসি, এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করি তখন বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে যাই। গ্রামে গিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে চলাফেরা করেছি। জাপান তো একটা উন্নত দেশ, কিন্তু সেদেশে হিউম্যানিটি হারিয়ে গেছে। যেটা বাংলাদেশের ভেতরে আমি দেখি। তখনই বাংলাদেশে বাকি জীবনটা কাটানোর স্বপ্ন দেখি এবং থাকতে শুরু করি।‘বাজনা বিট’ নামের একটি বাংলা গানের দল করেছেন এ দম্পত্তি

২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাস শুরু করেন এ দুই জাপানি। এরমধ্যে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন। তাদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো দেশ বাংলাদেশ। এখানকার মানুষের মধ্যে যে ভাষা প্রেম, তা আর কোথাও নেই। এদেশের মানুষের দেখাদেখি শুনসুকে-ওয়াতানাবেও বাংলাকে ভালোবেসেছন। তারা জানেন বায়ান্নর গল্প। প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে যান শহিদ মিনারে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ গানটির চারলাইন গাইতে গাইতে ফুল দেন বেদি স্পর্শ করে। এসময় তার চোখে অশ্রু ঝরে।

ওয়াতানাবে বলেন, আমরা একুশের কয়েকবার শহীদ মিনারে যাই। যখন লাইনে দাঁড়িয়ে ফুল দিই, আর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি শুনি, তখন অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। মানুষ নিজের প্রাণ আর রক্ত দিয়েছে যে ভাষার জন্য, সেই ভাষা শিখে অনেক ভালো লাগছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি জাতি তার ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শিখেছে।

বাংলাদেশে এসে এ দুই দম্পত্তি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। শুধু বাংলা ভাষা নয়; এদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কেও ভালো জ্ঞান আছে তাদের। এদেশের মানুষের ভাবনা ও ভালোবাসার মধ্যে তারা খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের আরেক জীবন।