‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে ছুটে আয়.’ অগ্রহায়ণ আসলেই এমন আহ্বানে যেন পুরো গ্রাম মেতে ওঠে। কৃষকের মুখে হাসি ফোটে, জীবনে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়।
আজ পয়লা অগ্রহায়ণ। এই অগ্রহায়ণকে ঘিরেই নবান্নের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে কৃষকের আঙ্গিনা। গ্রাম বাংলার কৃষকের ঘরে ঘরে আমন ধানকাটা মাড়াই চলছে পুরোদমে। গ্রামীণ জীবনে নবান্ন উৎসব একটি ঐতিহ্য।
বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয় নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম।
বগুড়া, রংপুর, নীলফামারীসহ কয়েকটি জেলার কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন। এছাড়াও রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বসবে গ্রামীণ মেলা। এ মেলা হয়ে উঠবে মানুষের মিলনমেলায়।
নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে তৈরি চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবকেই নবান্ন উৎসব বলা হয়। অনেক পরিবার আনন্দচিত্তে তৈরি করে নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর, পায়েসসহ নানা উপাদেয় খাদ্য।
গ্রামগঞ্জে এক সময় নবান্ন উৎসব অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করা হতো। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এ উৎসবে রীতিমত ভাটা পড়ে গেছে। তবে কৃষক ছাড়াও বিভিন্ন শহরের সাংস্কৃতিক সংগঠন নবান্ন উৎসব নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করে থাকে।
এদিকে কৃষকরা জানিয়েছেন, ‘নবান্ন উৎসবে একদিনের জন্য হলেও কৃষকের যে নির্মল আনন্দ তার প্রয়োজন আছে। যতদিন কৃষি আছে, ততদিন নবান্ন উৎসব চলবে।’
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই অঞ্চলের ৫ জেলায় সোয়া ৬ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম ধান রয়েছে এক লাখ হেক্টরের ওপরে। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে দাম বেশ ভালো থাকায় কৃষকরা রয়েছে বেশ চাঙা। প্রতি হেক্টর ৪ মণ করে উৎপাদন হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, কৃষিপ্রথা চালু হওয়ার পর থেকে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে। একসময় অগ্রহায়ণই ছিল বাংলা বছরের পয়লা মাস। ‘অগ্র’ মানে ‘প্রথম’। আর ‘হায়ণ’ অর্থ ‘মাস’।
গ্রামের মতো শহরেও ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়। জাতীয় নবান্নোত্সব উদযাপন পর্ষদ প্রতি বছর পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখে নবান্ন উৎসব উদযাপন করে। আজ ১ অগ্রহায়ণ ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে নবান্ন উৎসব ১৪৩১-এর আয়োজন করা হয়েছে।
‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে পালিত হচ্ছে নবান্ন উৎসব ১৪৩১। গ্রামীণ সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন।