ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিজার ছাড়াই ৫০৫ শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখালেন সানজানা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ হবিগঞ্জের মেয়ে সানজানা শিরীন। শনিবার পর্যন্ত সিজার ছাড়াই ৫০৫ শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন তিনি। প্রতিটি ডেলিভারি শেষ করেই নবজাতককে নিয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালে কাজ করছেন সানজানা। ১৭টি চা–বাগানের শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য কাজ করে এই হাসপাতাল। রোগীর সেবা করাই সানজানার কাজ, তবে পেশাগত কাজের বাইরেও নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন কিছু বাড়তি দায়িত্ব। যেমন- রক্তের প্রয়োজনের ছুটে যাওয়া, দরিদ্রদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাহায্য করা।

নরমাল ডেলিভারি প্রসঙ্গে সানজানা বলেন, নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য নরমাল ডেলিভারির কোনো বিকল্প নেই। সিজারে বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে মা অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সিজারে বাচ্চা হলে একজন নারী পুনরায় মা হতে গেলে ৯০.৭ শতাংশ ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় ছুরি-কাঁচি লেগে শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। মায়েরাও ইনফেকশনে ভোগেন। অথচ নরমাল ডেলিভারি করানোর দুই ঘণ্টার মধ্যে একজন মা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন।

সানজানা আরো বলেন, দেশে সিজারের মাধ্যমে শিশুর জন্মদানের হার বাড়ছে। এতে মা-শিশু দুজনের জীবনেই ঝুঁকি বাড়ছে। আমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সিজার ছাড়াই শিশুর জন্মে কাজ করতে চাই। এছাড়া হাসপাতালে রোগীদের রক্তের অভাব হয় প্রচুর। এসব আমাকে প্রতিদিনই দেখতে হয়। চেষ্টা করি মানুষের উপকার করার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রক্তের আহ্বানে প্রায়ই তার পোস্ট নজরে আসে। কখনো অভূতপূর্ব সাড়া পান, আবার কখনো কখনো নিরাশ হন। তবে শুধু ফেসবুকে জানিয়েই বসে থাকেন না। রক্তের গ্রুপ জানা আছে এমন পরিচিত মানুষকে ফোন করেন। রক্তদানে রাজি হলে সংগ্রহ করেন। তার এই নিরলস প্রচেষ্টায় প্রায়ই মুমূর্ষু রোগীরা রক্ত পেয়ে বেঁচে যান। তিনি বলেন, দরিদ্র রোগীরা যখন বিনামূল্যে রক্ত পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাদের হাসিমুখ দেখার মতো প্রশান্তির কিছু নেই।

শিরীন এইচএসসি পরীক্ষার পরই মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলে ভর্তি হন। কোর্স শেষ করে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি মৌলভীবাজারের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কাজ শুরু করেন। একই বছর ডিসেম্বরে মা মনি এনজিও’র এইচএস প্রজেক্টে প্যারামেডিক পোস্টে নিয়োগ পান তিনি। এরপর এফআইভিডিবিতে প্যারামেডিক পোস্টে সিলেটের জৈন্তাপুরেও কাজ করেন।

শিরীন বলেন, আমাদের জীবনটা যুদ্ধের। সব সময় সব জায়গায় যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। এখনো ভালো কাজ করতে যুদ্ধ করছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সিজার ছাড়াই ৫০৫ শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখালেন সানজানা

আপডেট টাইম : ০৮:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ মার্চ ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ হবিগঞ্জের মেয়ে সানজানা শিরীন। শনিবার পর্যন্ত সিজার ছাড়াই ৫০৫ শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন তিনি। প্রতিটি ডেলিভারি শেষ করেই নবজাতককে নিয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালে কাজ করছেন সানজানা। ১৭টি চা–বাগানের শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য কাজ করে এই হাসপাতাল। রোগীর সেবা করাই সানজানার কাজ, তবে পেশাগত কাজের বাইরেও নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন কিছু বাড়তি দায়িত্ব। যেমন- রক্তের প্রয়োজনের ছুটে যাওয়া, দরিদ্রদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাহায্য করা।

নরমাল ডেলিভারি প্রসঙ্গে সানজানা বলেন, নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য নরমাল ডেলিভারির কোনো বিকল্প নেই। সিজারে বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে মা অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সিজারে বাচ্চা হলে একজন নারী পুনরায় মা হতে গেলে ৯০.৭ শতাংশ ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় ছুরি-কাঁচি লেগে শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। মায়েরাও ইনফেকশনে ভোগেন। অথচ নরমাল ডেলিভারি করানোর দুই ঘণ্টার মধ্যে একজন মা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন।

সানজানা আরো বলেন, দেশে সিজারের মাধ্যমে শিশুর জন্মদানের হার বাড়ছে। এতে মা-শিশু দুজনের জীবনেই ঝুঁকি বাড়ছে। আমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সিজার ছাড়াই শিশুর জন্মে কাজ করতে চাই। এছাড়া হাসপাতালে রোগীদের রক্তের অভাব হয় প্রচুর। এসব আমাকে প্রতিদিনই দেখতে হয়। চেষ্টা করি মানুষের উপকার করার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রক্তের আহ্বানে প্রায়ই তার পোস্ট নজরে আসে। কখনো অভূতপূর্ব সাড়া পান, আবার কখনো কখনো নিরাশ হন। তবে শুধু ফেসবুকে জানিয়েই বসে থাকেন না। রক্তের গ্রুপ জানা আছে এমন পরিচিত মানুষকে ফোন করেন। রক্তদানে রাজি হলে সংগ্রহ করেন। তার এই নিরলস প্রচেষ্টায় প্রায়ই মুমূর্ষু রোগীরা রক্ত পেয়ে বেঁচে যান। তিনি বলেন, দরিদ্র রোগীরা যখন বিনামূল্যে রক্ত পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাদের হাসিমুখ দেখার মতো প্রশান্তির কিছু নেই।

শিরীন এইচএসসি পরীক্ষার পরই মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলে ভর্তি হন। কোর্স শেষ করে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি মৌলভীবাজারের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে কাজ শুরু করেন। একই বছর ডিসেম্বরে মা মনি এনজিও’র এইচএস প্রজেক্টে প্যারামেডিক পোস্টে নিয়োগ পান তিনি। এরপর এফআইভিডিবিতে প্যারামেডিক পোস্টে সিলেটের জৈন্তাপুরেও কাজ করেন।

শিরীন বলেন, আমাদের জীবনটা যুদ্ধের। সব সময় সব জায়গায় যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। এখনো ভালো কাজ করতে যুদ্ধ করছি।