আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ মিশন শেষ। বাংলাদেশের জন্য সেই শেষটা হয়েছে মনে রাখার মতো। সিরিজের শেষ ম্যাচে বুধবার নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ৬ নাম্বারে উঠে গেছে টাইগাররা। ডাবলিনের সেই সুখময় সময়কে সঙ্গী করেই মাশরাফি বিন মর্তুজার দল পা রেখেছে ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডে।
বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মাঠে নামার আগে দারুণ আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। শুধু তাই নয়, এই জয়ে বিশ্ব র্যাংকিংয়ের উন্নতির সঙ্গে ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সরাসরি খেলার সম্ভাবনাটাও বেড়ে গেছে। আগামী বিশ্বকাপে আয়োজক ইংল্যান্ডসহ র্যাংকিংয়ের শীর্ষ আট দল সরাসরি খেলার যোগ্যতা পাবে। র্যাংকিংয়ে উন্নতিটাকে তাই বেশ বড় করেই দেখছেন মাশরাফি, ‘অবশ্যই অনেক অর্থ বহন করে (ছয়ে ওঠা)। আমরা ক্রমে উন্নতি করছি। আশা করি দল আরও ভালো করবে। এখনো পথের অনেক বাকি। দেখা যাক কি হয়।’
স্বস্তির জয়, অনেক প্রাপ্তির জয়, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়া এক জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মিশনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আয়ারল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় টিম বাংলাদেশ। স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ২টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টা) এয়ার লিংগাস এয়ারলাইন্সে রওনা হয় টাইগাররা। ১ ঘণ্টা ৫ মিনিটের ভ্রমণ শেষে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে পা রাখেন তারা। আয়ারল্যান্ড ছাড়ার আগে মাশরাফির কণ্ঠে ঝরেছে দলের আত্মবিশ্বারে কথা, ‘শেষ দুটি ম্যাচে আমরা খুব ভালো খেললাম। দলের আত্মবিশ্বাস এই মুহূর্তে আকাশছোঁয়া।’
আগামী ১ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে টাইগারদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মিশন। ওটা এবারের আসরের উদ্বোধনী ম্যাচও বটে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অবশ্য দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। ২৭ মে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে নামছে বাংলাদেশ। এরপর ৩০ মে ভারতের বিপক্ষে খেলবে দ্বিতীয় ও শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ। এই দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মধ্যে পাকিস্তানের চেয়ে এখন অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে পাকিস্তান এখন ৮ নাম্বার দল।
আয়ারল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ভিন্নতা আছে উইকেটের চরিত্রেও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে সেই ভিন্নতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুতি ম্যাচ দুটোকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখছেন মাশরাফি, ‘মূল প্রতিযোগিতার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আয়ারল্যান্ডের চেয়ে ইংল্যান্ডের উইকেট পুরোপুরি ভিন্ন। তবে ভারত এবং পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে আমরা উইকেটের ব্যাপারে একটা ধারণা পাব। সুতরাং প্রস্তুতি ম্যাচ দুটোও আমাদের জন্য বড় ম্যাচ।’
দারুণ জয়ে টাইগাররা আত্মবিশ্বাসী হলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ কিছু ভুল করেছে। শেষ ম্যাচে ফিল্ডিংটা মোটেও ভালো হয়নি। শুরুর বোলিংটাও ছিল হতাশা জাগানিয়া। তবে শেষদিকে দারুণভাবেই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। দলের এই প্রত্যাবর্তনে খুশি মাশরাফি। তবে ভুলত্রুটিগুলোও নজর এড়ায়নি তার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো কিছু করে দেখাতে দুটো প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিতে চান টাইগার দলপতি, ‘আজকে (বুধবার) আমরা অনেক ক্যাচ ছেড়েছি। আশা করি, আরও বড় মঞ্চে সেরকম কিছু হবে না।’
দারুণ ব্যাটিং করে যাচ্ছেন তামিম ইকবাল। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও ছন্দে আছেন। সাবি্বর, মোসাদ্দেক, মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরাও দারুণ করছেন। বোলিংয়ে মুস্তাফিজ-রুবেলকে সঙ্গে নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাশরাফি। তবে নিজের সেরা ছন্দে নেই সাকিব আল হাসান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ফর্মহীনতা কিছুটা হলেও ভাবাচ্ছে সমর্থকদের। মাশরাফি অবশ্য বিষয়টা নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছেন না। আস্থা রাখছেন ডেপুটির ওপর।
মাশরাফির বিশ্বাস, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই স্বরূপে ফিরবেন সাকিব। ভালো করবেন দলের অভিজ্ঞরা। সাকিবকে তিনি মনে করেন সেই অভিজ্ঞতারই অংশ। এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেছেন, ‘আমাদের দলের ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতাটা অমূল্য। আমাদের আছে তামিম, সাকিব। যদিও সাকিব খুব ভালো ফর্মে নেই, কিন্তু আমি নিশ্চিত, সে স্বরূপে ফিরবে। তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ সবাই খুব ভালো ফর্মে আছে। আশা করছি, আমরা আরও ভালো করব।’