ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে লিচু চাষে সাফল্য

লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক। পরীক্ষামূলকভাবে নিজের খামারবাড়িতে বোম্বাই জাতের লিচু গাছে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন তিনি। মঞ্জুরুল হক জানান, প্রতিটি ব্যাগ তিনি কিনেছেন সাড়ে তিন টাকা দরে। একটি ব্যাগে জায়গা হয়েছে ২৫ থেকে ৩০টি লিচুর। লিচুর দুই-তিনটি থোকায় ব্যাগ ভরে গেছে। ১৫ বছর বয়সের বোম্বাই জাতের একটি গাছ থেকে তিনি গত বছর চার হাজার পিস লিচু পেয়েছিলেন। এবার ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে লিচু পেয়েছেন প্রায় ছয় হাজার। মঞ্জুরুল হক আরও জানান, লিচুর বড় সমস্যা সান বার্ন অর্থাত্ রোদে পুড়ে যাওয়া। এরপর পোড়া জায়গা ফেটে লিচু পচে যায়। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সাধারণত একটি থোকায় যে পরিমাণ লিচু ধরে, তার সবই পুষ্ট হয়ে ফলে পরিণত হয় না। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিটি লিচুই ফলে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া এ প্রযুক্তি ব্যবহারে লিচুকে পোকা ও রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। ছিদ্রকারী পোকামাকড় লিচু নষ্ট করে। গান্ধী পোকা লিচুর বোঁটার রস চুষে খায়, ফলে লিচু নষ্ট হয়ে ঝরে যায়। এই পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারে পোকামাকড় ও ছত্রাকজনিত রোগের হাত থেকে লিচুকে রক্ষা করা যায়। ফলে কৃষককে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এতে টাকার যেমন সাশ্রয় হয়, কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন না পড়ায় পরিবেশও দূষণ হয় না। মঞ্জুরুল হক বলেন, লিচুর আরেকটি সমস্যা হল, চামচিকা, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির উত্পাত। এসব প্রাণীর লিচু খুব পছন্দ। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে চামচিকা, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির হাত থেকে লিচু থাকে সুরক্ষিত। আর ব্যাগের ভেতর সুরক্ষিত অবস্থায় থাকায় সব লিচু আকারে বড় হয়, রঙ হয় টকটকে লাল। তিনি জানান, ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এবারের ঝড়-বাতাসেও তার গাছ থেকে কোনো লিচু ঝরে পড়েনি। ফলে উত্পাদন বেড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এসব লিচু শতভাগ রাসায়নিকমুক্ত। মঞ্জুরুল হক বলেন, চাষিদের মধ্যে এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণের আগে তিনি নিজে ব্যবহার করে দেখলেন। তাতে ফল ভালো পাওয়া গেল। এছাড়া ফ্রুট ব্যাগিং করা লিচু স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এক সপ্তাহ বেশি গাছে রাখা যায়। এতে দামও বেশি পাওয়া যায়। প্রযুক্তিটি চাষিদের মাঝে সম্প্রসারণ করা গেলে তারা লাভবান হবে। তিনি বলেন, সাধারণত লিচু চাষিরা যে হারে গাছে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করে, ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিতে তার প্রয়োজন হয় না। লিচুর ফুল আসার আগে একবার গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। আর ব্যাগিং করার কয়েক দিন আগে একটি ছত্রাকনাশক ও একটি কীটনাশক স্প্রে করলেই হবে। এরপর লিচু পাকার ২৫ থেকে ৩০ দিন আগে ব্যাগিং করতে হবে।     মঞ্জুরুল হকের খামারবাড়িতে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে লিচু চাষ পরিদর্শন করে এসেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালন মো. আবদুল হান্নান ও পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরে মওলা। অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, লিচু গাছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মঞ্জুরুল হক সফলতা পেয়েছেন। তার এই সফলতা কাজে লাগাবে কৃষি বিভাগ। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, পাবনার ঈশ্বরদীতে কিছু কিছু লিচু গাছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। তবে রাজশাহীর চাষিরা এখনও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে না। রাজশাহীতে পরীক্ষামূলক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়ায় আগামী বছর থেকে তা ব্যবহারের জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে লিচু চাষে সাফল্য

আপডেট টাইম : ০৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০১৭

লিচুতে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হয়েছেন রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক। পরীক্ষামূলকভাবে নিজের খামারবাড়িতে বোম্বাই জাতের লিচু গাছে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন তিনি। মঞ্জুরুল হক জানান, প্রতিটি ব্যাগ তিনি কিনেছেন সাড়ে তিন টাকা দরে। একটি ব্যাগে জায়গা হয়েছে ২৫ থেকে ৩০টি লিচুর। লিচুর দুই-তিনটি থোকায় ব্যাগ ভরে গেছে। ১৫ বছর বয়সের বোম্বাই জাতের একটি গাছ থেকে তিনি গত বছর চার হাজার পিস লিচু পেয়েছিলেন। এবার ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে লিচু পেয়েছেন প্রায় ছয় হাজার। মঞ্জুরুল হক আরও জানান, লিচুর বড় সমস্যা সান বার্ন অর্থাত্ রোদে পুড়ে যাওয়া। এরপর পোড়া জায়গা ফেটে লিচু পচে যায়। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সাধারণত একটি থোকায় যে পরিমাণ লিচু ধরে, তার সবই পুষ্ট হয়ে ফলে পরিণত হয় না। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিটি লিচুই ফলে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া এ প্রযুক্তি ব্যবহারে লিচুকে পোকা ও রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। ছিদ্রকারী পোকামাকড় লিচু নষ্ট করে। গান্ধী পোকা লিচুর বোঁটার রস চুষে খায়, ফলে লিচু নষ্ট হয়ে ঝরে যায়। এই পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারে পোকামাকড় ও ছত্রাকজনিত রোগের হাত থেকে লিচুকে রক্ষা করা যায়। ফলে কৃষককে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এতে টাকার যেমন সাশ্রয় হয়, কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন না পড়ায় পরিবেশও দূষণ হয় না। মঞ্জুরুল হক বলেন, লিচুর আরেকটি সমস্যা হল, চামচিকা, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির উত্পাত। এসব প্রাণীর লিচু খুব পছন্দ। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করলে চামচিকা, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির হাত থেকে লিচু থাকে সুরক্ষিত। আর ব্যাগের ভেতর সুরক্ষিত অবস্থায় থাকায় সব লিচু আকারে বড় হয়, রঙ হয় টকটকে লাল। তিনি জানান, ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এবারের ঝড়-বাতাসেও তার গাছ থেকে কোনো লিচু ঝরে পড়েনি। ফলে উত্পাদন বেড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এসব লিচু শতভাগ রাসায়নিকমুক্ত। মঞ্জুরুল হক বলেন, চাষিদের মধ্যে এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণের আগে তিনি নিজে ব্যবহার করে দেখলেন। তাতে ফল ভালো পাওয়া গেল। এছাড়া ফ্রুট ব্যাগিং করা লিচু স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এক সপ্তাহ বেশি গাছে রাখা যায়। এতে দামও বেশি পাওয়া যায়। প্রযুক্তিটি চাষিদের মাঝে সম্প্রসারণ করা গেলে তারা লাভবান হবে। তিনি বলেন, সাধারণত লিচু চাষিরা যে হারে গাছে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করে, ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিতে তার প্রয়োজন হয় না। লিচুর ফুল আসার আগে একবার গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। আর ব্যাগিং করার কয়েক দিন আগে একটি ছত্রাকনাশক ও একটি কীটনাশক স্প্রে করলেই হবে। এরপর লিচু পাকার ২৫ থেকে ৩০ দিন আগে ব্যাগিং করতে হবে।     মঞ্জুরুল হকের খামারবাড়িতে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে লিচু চাষ পরিদর্শন করে এসেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালন মো. আবদুল হান্নান ও পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরে মওলা। অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, লিচু গাছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মঞ্জুরুল হক সফলতা পেয়েছেন। তার এই সফলতা কাজে লাগাবে কৃষি বিভাগ। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, পাবনার ঈশ্বরদীতে কিছু কিছু লিচু গাছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। তবে রাজশাহীর চাষিরা এখনও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে না। রাজশাহীতে পরীক্ষামূলক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়ায় আগামী বছর থেকে তা ব্যবহারের জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।