ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস ৫ আগস্টের পর ভুয়া মামলা তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার হবে, জানালেন নতুন আইজিপি আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির জুয়ার অ্যাপের প্রচারে নাম লেখালেন বুবলীও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, যা বললেন তোফায়েল আহমেদ সামনে অসম্ভব শক্তির অদৃশ্য দেয়াল অপেক্ষা করছে: তারেক রহমান বহু শাসক দেখেছি, পরিবর্তন দেখিনি : ফয়জুল করীম গ্যাসের জন্য আ.লীগ আমলে ২০ কোটি টাকা ঘুস দিয়েছি

স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের মানুষ

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ও নয়ার হাটে প্রায় তিন হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে মাছ শিকার ও কৃষি কাজে। অব্যাহত নদী ভাঙন ও প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এসব মানুষের কপালে জোটে না প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও। তাদের চিকিৎসা সেবায় সরকারিভাবে তেমন কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। তাদের মতে ওই এলাকার প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ভরসা এক গ্রাম্য চিকিৎসক ও কবিরাজ।

চর সিন্দুর্না ও নয়ারহাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। ওই এলাকার বাবুল মিয়া, আহেলা বেগম, ছাদেকুল ইসলাম ও জমসের আলী জানায়, এই এলাকার মানুষের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসা সেবা না পাওয়া। চরে বসবাস করায় তাদের বিভিন্ন রোগ-বালাই লেগেই থাকে। বিশেষ করে যখন বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে যায় ও পানি নেমে যাওয়ার সময় ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ প্রকট আকার ধারণ করে। সে সময় শিশু, নারী ও বৃদ্ধারা বেশি বিপদে পড়েন। চিকিৎসা না পাওয়ায় দুর্ভোগ আর ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌছে। সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে শিশু ও গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও  প্রায় ঘটে।

তারা আরো জানান, তাদের চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট ও হাতীবান্ধা শহর থেকে অনেক দিন পরপর দুই-একটি টিম চরে আসে। তারা কিছু ওষুধপত্র দিয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিনে তাদের দেখা মিলে না। হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের পক্ষ থেকে আগে কিছু ওষুধপত্র দেয়া হলেও এখন সেটিও বন্ধ আছে। তাই তাদের ভরসা এখন স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক ও কবিরাজের ওপরে।

সূত্র জানায়, সরকারি উদ্যোগে ২০০৬ সালে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। যাতায়তের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় ও স্বাস্থ্য কর্মীদের গাফিলতির কারণে নিয়মিত খোলা হয় না ক্লিনিকটি। নদী ভাঙনের ফলে ক্লিনিকের এই ঘরও নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।

নয়ারহাট এলাকার বানিয়া মামুদ বলেন, এখানে চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। চিকিৎসার জন্যে শহরে যেতে হয়। যার সামর্থ্য যেমন সেইভাবেই চিকিৎসা নেয়। গর্ভবতীদের সমস্যা চরম আকারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় দাই দিয়ে কাজ না হলে শেষ মুহূর্তে শহরে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় প্রায়ই মা অথবা বাচ্চার মৃত্যু ঘটে।

স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য আম্বিয়া বেগম বলেন, চরে কোনো চিকিৎসা নেই। নদী পাড় হয়ে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। নারী ও শিশুরা হঠাৎ অসুস্থ হলে বিপাকে পড়তে হয়। এখানকার মানুষেরা সামান্য প্রাথমিক চিকিৎসাও ঠিকঠাক মতো পায় না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বার বার জানিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। আর কতবার বললো? এখানকার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই জনপ্রতিনিধি।

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী বলেন, আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে পারি না। সেখানকার মানুষদের শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে তিন সদস্যের টিম ওই চরে যায়। ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন তারা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন

স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের মানুষ

আপডেট টাইম : ০৩:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ জুন ২০১৭

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ও নয়ার হাটে প্রায় তিন হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে মাছ শিকার ও কৃষি কাজে। অব্যাহত নদী ভাঙন ও প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এসব মানুষের কপালে জোটে না প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও। তাদের চিকিৎসা সেবায় সরকারিভাবে তেমন কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। তাদের মতে ওই এলাকার প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ভরসা এক গ্রাম্য চিকিৎসক ও কবিরাজ।

চর সিন্দুর্না ও নয়ারহাট এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। ওই এলাকার বাবুল মিয়া, আহেলা বেগম, ছাদেকুল ইসলাম ও জমসের আলী জানায়, এই এলাকার মানুষের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসা সেবা না পাওয়া। চরে বসবাস করায় তাদের বিভিন্ন রোগ-বালাই লেগেই থাকে। বিশেষ করে যখন বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে যায় ও পানি নেমে যাওয়ার সময় ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ প্রকট আকার ধারণ করে। সে সময় শিশু, নারী ও বৃদ্ধারা বেশি বিপদে পড়েন। চিকিৎসা না পাওয়ায় দুর্ভোগ আর ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌছে। সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে শিশু ও গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও  প্রায় ঘটে।

তারা আরো জানান, তাদের চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট ও হাতীবান্ধা শহর থেকে অনেক দিন পরপর দুই-একটি টিম চরে আসে। তারা কিছু ওষুধপত্র দিয়ে যায়। তবে দীর্ঘদিনে তাদের দেখা মিলে না। হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের পক্ষ থেকে আগে কিছু ওষুধপত্র দেয়া হলেও এখন সেটিও বন্ধ আছে। তাই তাদের ভরসা এখন স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক ও কবিরাজের ওপরে।

সূত্র জানায়, সরকারি উদ্যোগে ২০০৬ সালে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। যাতায়তের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় ও স্বাস্থ্য কর্মীদের গাফিলতির কারণে নিয়মিত খোলা হয় না ক্লিনিকটি। নদী ভাঙনের ফলে ক্লিনিকের এই ঘরও নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।

নয়ারহাট এলাকার বানিয়া মামুদ বলেন, এখানে চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। চিকিৎসার জন্যে শহরে যেতে হয়। যার সামর্থ্য যেমন সেইভাবেই চিকিৎসা নেয়। গর্ভবতীদের সমস্যা চরম আকারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় দাই দিয়ে কাজ না হলে শেষ মুহূর্তে শহরে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময় প্রায়ই মা অথবা বাচ্চার মৃত্যু ঘটে।

স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য আম্বিয়া বেগম বলেন, চরে কোনো চিকিৎসা নেই। নদী পাড় হয়ে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। নারী ও শিশুরা হঠাৎ অসুস্থ হলে বিপাকে পড়তে হয়। এখানকার মানুষেরা সামান্য প্রাথমিক চিকিৎসাও ঠিকঠাক মতো পায় না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বার বার জানিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। আর কতবার বললো? এখানকার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই জনপ্রতিনিধি।

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী বলেন, আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে পারি না। সেখানকার মানুষদের শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। প্রতি সপ্তাহে তিন সদস্যের টিম ওই চরে যায়। ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন তারা।