বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ অপহৃত’ কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে খুঁজে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য চেয়েছে তার পরিবার।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানী শ্যামলী রিং রোডে ফরহাদ মজহারের বাসায় সাংবাদিকদের এই কথা জানিয়েছেন তার বন্ধু মোস্তাহির জহির। তিনি বলেন, ফরহাদ মজহারকে যে বা যারাই অপহরণ করে নিয়ে যাক না কেন, তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করার জন্য বাংলাদেশের প্রশাসন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তার পরিবার।
এ সময় ফরহাদ মজহারের আরেক বন্ধু গৌতম দাস বলেন, ভোর ৫টার দিকে শ্যামলীর রিং রোডের এক নম্বর বাসার সামনে থেকে কে বা কারা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার আধ ঘণ্টা পর ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর স্ত্রীর কাছে টেলিফোন আসে। ফোনে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনটি কেটে দেন।
এরপর বিষয়টি আদাবর থানার পুলিশকে জানানো হয় বলে জানান গৌতম। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফরহাদ মজহার কেন এত ভোরে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গৌতম দাস জানান, ফরহাদ মজহার রাত ৩ থেকে ৪টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। এরপর তিনি বিভিন্ন পড়াশোনা ও লেখালেখির কাজ করেন। কিন্তু কেন তিনি সোমবার এত সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি গৌতম দাস।
ফরহাদ মজহারকে বাসা থেকে বের হতে কেউ দেখেছে কি না জানতে চাইলে মোস্তাহির জহির জানান, তাঁকে বাসা থেকে বের হতে বাড়ির দু-একজন নিরাপত্তারক্ষী দেখেছেন। তবে তাঁকে কেউ নিয়ে গেছে কি না সেটি তাঁরা দেখেননি। এ ছাড়া ভবনের নিচে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় দেখা গেছে যে তিনি ভবন থেকে বের হচ্ছেন।
তবে মুক্তিপণের বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না বলেও জানান ফরহাদ মজহারের দুই বন্ধু।
শ্যামলীর রিং রোডের ফরহাদ মজহারের বাসায় তার পরিচিত অনেকেই এসেছেন। বাসায় তার স্ত্রী কলামিস্ট ও নারী অধিকারকর্মী ফরিদা আক্তারকে তারা সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সেখানে পুলিশের কর্মকর্তারাও উপস্থিত হয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা।
প্রসঙ্গত, লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার ভোররাতে তিনি মোহাম্মদপুর লিংক রোডের হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হন। আদাবর থানার ডিউটি অফিসার এসআই মহসিন আলী বলেন, ফরহাদ মজহার প্রতিদিনের মতো ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বাইরে যান। এরপর তিনি আর বাসায় ফিরেননি। তবে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজের ফোন থেকে কল করে স্ত্রী ফরিদা আখতারকে অপহরণের ঘটনা জানান তিনি। এসময় তিনি জানান, অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। তবে কে বা কারা তাকে অপহরণ করেছেন, সেটা জানাননি তিনি।
এদিকে বিএনপির জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘লেখক ফরহাদ মজহারকে আজ সকাল ৫টার দিকে তার বাসা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। প্রথমে উনার পরিচিত কোন ব্যক্তিকে দিয়ে ফোন করিয়ে উনার এপার্টমেন্ট থেকে নিচে নামানো হয় এবং তারপর অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর তাকে দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে ফোন করিয়ে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি তার স্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে ওই মোবাইল ট্র্যাক করে সেটির অবস্থান প্রথমে মানিকগঞ্জ এবং পরে মাগুরায় পাওয়া গেছে। এর থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে- তাকে সীমান্তের দিকে নেয়া হচ্ছে এবং হয়তো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। আমাদের জানা মতে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেসব প্রযুক্তি আছে, তা দিয়ে যে কোন মোবাইল ফোনকে তার সঠিক অবস্থানসহ সনাক্ত করা যায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত- অবিলম্বে সেইসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফরহাদ মজহারকে অপহরণকারীদের নিকট থেকে উদ্ধার করা।’
খোমেনি এহসান নামে একজন লিখেছেন, ‘কবি ফরহাদ মজহারকে সোমবার ভোরে রাজধানীর শ্যামলী থেকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বাসা থেকে পাঁচটা ছয় মিনিটের দিকে বের হন। পরে ৫টা ২৯ মিনিটে তিনি তার স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফোন করে বলেন ‘ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’। এরপর ফরহাদ মজহারের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পরে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তার ফোন থেকে ফোন করে ফরিদা আখতারের কাছে ৩৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এভাবে কয়েক বার ফোন করা হয়। পরে ফরহাদ মজহারকে অপহরণের বিষয়টি আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়। জানা গেছে তারা মোবাইল ট্র্যাকিং করে তার অবস্থান প্রথমে মানিকগঞ্জ ও পরে মাগুরায় পাওয়া যাচ্ছে। তাকে অপহরণকারীরা কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ ফরহাদ মজহারকে হেফাজত করুন।