ঢাকা , সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের রোগে নাকাল শিশু ও বয়স্করা চট্টগ্রামে ডায়রিয়া ঢাকায় শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা বেশি

বছরের শুরুতেই দেশব্যাপী জেকে বসেছে তীব্র শীত। পৌঁষের মাঝামাঝি এসে ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাসে প্রকৃতিতে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। বিশেষ করে রেসিপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (এআরআই) বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বর্তমানে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগীদের বেশির ভাগই শীতের রোগের কথা বলছেন। রোগের ধরন ও তীব্রতা অনুসারে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন। যাদের বেশির ভাগই বয়স্ক ও শিশু। এই রোগীদের বড় একটি অংশ উত্তরাঞ্চলের মানুষ। তবে চট্টগ্রামে শীতজনিত ডায়রিয়া এবং ঢাকা বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক-নার্স, রোগী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

চিকিৎসকরা যুগান্তরকে বলছেন, ঋতু পরিবর্তনজনিত ঠান্ডার কারণে রোগের প্রকোপ বাড়ছে। অনেকে কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিলতাসহ জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছরের (২০২৪) ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি দুই মাসে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৬ জন। এ হিসাবে দৈনিক ১ হাজার ৮০৯ রোগী হাসপাতালে সেবা নিয়েছেন। এ সময় একজন মারা গেছেন।

অন্যদিকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে এ সময়ের মধ্যে ৪৪ হাজার ৫৯২ জন অর্থাৎ দৈনিক ৬৯৬ রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এমআইএস-এর তথ্য বলছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এআরআই বা ঠান্ডা-কাশিজনিত শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা নিয়ে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালে ২৪৫ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫৫৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ বিভাগে এআরআই রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৪ জন এবং ডায়রিয়ায় ১৩৪ জন। চট্টগ্রামে এআরআই রোগে ১৫০ জন এবং ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭২৩ জন। রাজশাহীতে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ২২ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৯ জন। রংপুরে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৫৩ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৬ জন। খুলনায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ১৩৫ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭১ জন। বরিশালে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ২৯ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ জন। একইভাবে সিলেট বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৮৫ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৪ জন। সবমিলে ২৪ ঘণ্টায় আট বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১৩ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৪১ জন। তবে এ সময় কারও মৃত্যু ঘটেনি।

গত কয়েকদিন তীব্র ঠান্ডা পড়ায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। দৈনিক হাজারখানেক রোগী আসছে। অভিভাবকদের বেশির ভাগই শিশুর সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস উপসর্গের কথা বলছেন।

পাশেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহিঃ ও জরুরি বিভাগে সব বয়সি রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, শীতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাটাইসিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস সমস্যা দেখা দেয়। এবার ডেঙ্গুর পরেই শিশু শীতজনিত রোগে ভুগছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। যাদের জটিলতা বেশি, তাদের ভর্তি করা হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে শীতজনিত ফ্লু ও আরএস ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, রেসেপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, অ্যাজমাজনিত পালমোনারি প্রবলেম, জ্বর ও ডায়রিয়া নিয়ে আসছেন। অনেকের অবজারভেশনে ভর্তি করা হচ্ছে। অনেকের পরিস্থিতি বুঝে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়েই বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।

শীতকালীন ডায়রিয়া নিয়ে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৬৭৫ শিশু ভর্তি হচ্ছে। তাদের বড় অংশ রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আইসিডিডিআর,বির চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অনেক শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ডায়রিয়া নিয়ে ৮৫০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৪৭৯ শিশু ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম এবং ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ায় ফ্লু, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। ফলে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় শিশু অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুকে সুস্থ রাখতে শীতের কাপড় পরাতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে, মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না, বাড়ির বাইরে অহেতুক বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। শিশুর ঠান্ডা লাগলে, কাঁশি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, খারাপ নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষায় সরকারের ইপিআই কর্মসূচিতে প্রতিষেধক টিকা আছে। যেগুলো নিয়মিত নিতে হবে। নিউমোনিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করে ছোট শিশুদের। শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। জন্মের পরপরই শালদুধ দিতে হবে। ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো এবং ছয় মাস পর বুকের দুধের সঙ্গে স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে দেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, রংপুরসহ ১৩ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শীতের রোগে নাকাল শিশু ও বয়স্করা চট্টগ্রামে ডায়রিয়া ঢাকায় শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা বেশি

আপডেট টাইম : ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫

বছরের শুরুতেই দেশব্যাপী জেকে বসেছে তীব্র শীত। পৌঁষের মাঝামাঝি এসে ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাসে প্রকৃতিতে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। বিশেষ করে রেসিপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (এআরআই) বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বর্তমানে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগীদের বেশির ভাগই শীতের রোগের কথা বলছেন। রোগের ধরন ও তীব্রতা অনুসারে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন। যাদের বেশির ভাগই বয়স্ক ও শিশু। এই রোগীদের বড় একটি অংশ উত্তরাঞ্চলের মানুষ। তবে চট্টগ্রামে শীতজনিত ডায়রিয়া এবং ঢাকা বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক-নার্স, রোগী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

চিকিৎসকরা যুগান্তরকে বলছেন, ঋতু পরিবর্তনজনিত ঠান্ডার কারণে রোগের প্রকোপ বাড়ছে। অনেকে কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিলতাসহ জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছরের (২০২৪) ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি দুই মাসে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৬ জন। এ হিসাবে দৈনিক ১ হাজার ৮০৯ রোগী হাসপাতালে সেবা নিয়েছেন। এ সময় একজন মারা গেছেন।

অন্যদিকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে এ সময়ের মধ্যে ৪৪ হাজার ৫৯২ জন অর্থাৎ দৈনিক ৬৯৬ রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এমআইএস-এর তথ্য বলছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এআরআই বা ঠান্ডা-কাশিজনিত শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা নিয়ে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালে ২৪৫ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫৫৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ বিভাগে এআরআই রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৪ জন এবং ডায়রিয়ায় ১৩৪ জন। চট্টগ্রামে এআরআই রোগে ১৫০ জন এবং ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭২৩ জন। রাজশাহীতে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ২২ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৯ জন। রংপুরে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৫৩ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৬ জন। খুলনায় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ১৩৫ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭১ জন। বরিশালে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ২৯ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ জন। একইভাবে সিলেট বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ৮৫ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৪ জন। সবমিলে ২৪ ঘণ্টায় আট বিভাগে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১৩ এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৪১ জন। তবে এ সময় কারও মৃত্যু ঘটেনি।

গত কয়েকদিন তীব্র ঠান্ডা পড়ায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। দৈনিক হাজারখানেক রোগী আসছে। অভিভাবকদের বেশির ভাগই শিশুর সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস উপসর্গের কথা বলছেন।

পাশেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহিঃ ও জরুরি বিভাগে সব বয়সি রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, শীতে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাটাইসিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস সমস্যা দেখা দেয়। এবার ডেঙ্গুর পরেই শিশু শীতজনিত রোগে ভুগছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। যাদের জটিলতা বেশি, তাদের ভর্তি করা হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে শীতজনিত ফ্লু ও আরএস ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, রেসেপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, অ্যাজমাজনিত পালমোনারি প্রবলেম, জ্বর ও ডায়রিয়া নিয়ে আসছেন। অনেকের অবজারভেশনে ভর্তি করা হচ্ছে। অনেকের পরিস্থিতি বুঝে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়েই বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।

শীতকালীন ডায়রিয়া নিয়ে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৬৭৫ শিশু ভর্তি হচ্ছে। তাদের বড় অংশ রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। আইসিডিডিআর,বির চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অনেক শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ডায়রিয়া নিয়ে ৮৫০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৪৭৯ শিশু ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম এবং ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ায় ফ্লু, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। ফলে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় শিশু অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুকে সুস্থ রাখতে শীতের কাপড় পরাতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে, মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না, বাড়ির বাইরে অহেতুক বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। শিশুর ঠান্ডা লাগলে, কাঁশি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, খারাপ নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষায় সরকারের ইপিআই কর্মসূচিতে প্রতিষেধক টিকা আছে। যেগুলো নিয়মিত নিতে হবে। নিউমোনিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করে ছোট শিশুদের। শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। জন্মের পরপরই শালদুধ দিতে হবে। ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো এবং ছয় মাস পর বুকের দুধের সঙ্গে স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে দেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, রংপুরসহ ১৩ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।