ঢাকা , বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

এইচএমপিভি ভাইরাস আবারও আতঙ্ক মহামারির

পাঁচ বছর হলো করোনাকাল পার হয়েছে। করোনা মহামারিতে বিশ্বে মোট ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০ কোটিরও বেশি। অনেকেরই শঙ্কা, ২০২৫ সালে ফের করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। এই ভাইরাস নিয়ে নতুন মহামারির বার্তা দিয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে চীন আর জাপানে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। নতুন এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে জনসাধারণের মনে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ঝুঁকির বাইরে নয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলছেন, যেকোনো ভাইরাস যেকোনো সময়ে আচরণ পরিবর্তন করতে পারে। বিশ্বায়নের যুগে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও চলে আসতে পারে। তাই নতুন ভাইরাস এইচএমপিভির পরিস্থিতি নিয়ে বাড়তি প্রস্তুতি রাখতে হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব না। তবে হাম, কলেরা, বার্ডফ্লু এবং স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এইচএমপিভির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসকদের কপালে। যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষক ড. মাইকেল হেড গণমাধ্যমে বলেছেন, একটি মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে এখনও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সেটি নিশ্চিত না বলে আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিস-এক্স। আগামীর মহামারির প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে এবং মানুষের মৃত্যুহার পৌঁছাবে সর্বোচ্চ।
চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সময়ে হাসপাতালে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও। একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানের। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ৭ লাখেরও বেশি। চীনে প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি প্রকট হয়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা দেশটির সরকার সতর্কতা জারি করেনি।
তবে যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে করে যেকোনো সময়ে দেশটির সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলে দাবি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের। দেশটিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু এবং বৃদ্ধরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। জ্বর, নাক বন্ধ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও এই ভাইরাসের তীব্রতায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় রোগের তীব্রতা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে সক্ষম বলে অভিমত চিকিৎসকদের।
প্রায় দুই দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি ভাইরাস উপস্থিতি জানান দিলেও এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি কোনো টিকা। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এখনও পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক। আমরা সবসময় বলেছি ভাইরাসের ধরন যা-ই হোক এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা একই। অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। তাই বাংলাদেশেও ঝুঁকি মুক্ত নয়। বাংলাদেশেও আকাশ, নৌ ও স্থলপথে সর্তকতা বাড়াতে হবে।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

এইচএমপিভি ভাইরাস আবারও আতঙ্ক মহামারির

আপডেট টাইম : ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
পাঁচ বছর হলো করোনাকাল পার হয়েছে। করোনা মহামারিতে বিশ্বে মোট ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪০ কোটিরও বেশি। অনেকেরই শঙ্কা, ২০২৫ সালে ফের করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। এই ভাইরাস নিয়ে নতুন মহামারির বার্তা দিয়েছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে চীন আর জাপানে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। নতুন এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে জনসাধারণের মনে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ঝুঁকির বাইরে নয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলছেন, যেকোনো ভাইরাস যেকোনো সময়ে আচরণ পরিবর্তন করতে পারে। বিশ্বায়নের যুগে নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও চলে আসতে পারে। তাই নতুন ভাইরাস এইচএমপিভির পরিস্থিতি নিয়ে বাড়তি প্রস্তুতি রাখতে হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব না। তবে হাম, কলেরা, বার্ডফ্লু এবং স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এইচএমপিভির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসকদের কপালে। যুক্তরাজ্যের সাউথ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষক ড. মাইকেল হেড গণমাধ্যমে বলেছেন, একটি মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে এখনও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সেটি নিশ্চিত না বলে আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিস-এক্স। আগামীর মহামারির প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে এবং মানুষের মৃত্যুহার পৌঁছাবে সর্বোচ্চ।
চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সময়ে হাসপাতালে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও। একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানের। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ৭ লাখেরও বেশি। চীনে প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি প্রকট হয়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা দেশটির সরকার সতর্কতা জারি করেনি।
তবে যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে করে যেকোনো সময়ে দেশটির সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলে দাবি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের। দেশটিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু এবং বৃদ্ধরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। জ্বর, নাক বন্ধ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও এই ভাইরাসের তীব্রতায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় রোগের তীব্রতা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে সক্ষম বলে অভিমত চিকিৎসকদের।
প্রায় দুই দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি ভাইরাস উপস্থিতি জানান দিলেও এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি কোনো টিকা। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এখনও পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক। আমরা সবসময় বলেছি ভাইরাসের ধরন যা-ই হোক এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা একই। অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। তাই বাংলাদেশেও ঝুঁকি মুক্ত নয়। বাংলাদেশেও আকাশ, নৌ ও স্থলপথে সর্তকতা বাড়াতে হবে।