ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

নতুন হিসাবে দেশে বেকার বেড়ে ২৬ লাখ ৬০ হাজার, বাড়বে আরো

দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে এখন ২৬ লাখ ৬০ হাজার। আগের বছরের একই সময়ে দেশে বেকার জনগোষ্ঠী ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। পাশাপাশি বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৪.৪৯ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৪.০৭ শতাংশ।

গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেকার বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার।গতকাল রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএস প্রথমবারের মতো এবার শ্রমশক্তি জরিপে ১৯তম আইসিএলএস অনুযায়ী বেকারত্বের হার প্রকাশ করেছে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই এখন এ পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকে।

দেশে সেপ্টেম্বর শেষে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজারে। এ হিসাব এক বছরের তুলনায় ৩৫ লাখ কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত এক বছরে দেশে তেমন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। সরকারি-বেসরকারি সব বিনিয়োগই কমেছে।

তা ছাড়া গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবও পড়েছে বিনিয়োগে। যার ফলে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে, বেকারত্বের হারও বেড়েছে।শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজারে। গত বছরের একই সময়ে দেশে কর্মে নিয়োজিত ছিলেন সাত কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কর্মজীবীর সংখ্যা কমেছে ৩৫ লাখ।

শ্রমশক্তি জরিপে সাধারণত কৃষি, শিল্প ও সেবা—এই তিন খাতের সামষ্টিক হিসাব তুলে আনা হয়। এই তিন খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে। এক বছরের ব্যবধানে এ পেশার ১৫ লাখ ৭০ হাজার জনগোষ্ঠী কাজ হারিয়েছেন। সেপ্টেম্বর শেষে এই জনগোষ্ঠী কমে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজারে।

এ ছাড়া অন্য খাতগুলোর মধ্যে শিল্প খাতে সাত লাখ ৬০ হাজার কর্মজীবী কমে এক কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল এক কোটি ২১ লাখ।

শিল্প খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের ধারাবাহিকতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তা ছাড়া বিনিয়োগের বাধার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকের উচ্চ সুদহার। এমন পরিস্থিতিতে বেকারত্বের হার আরো বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট, ব্যাংকের সুদের হার বেশি, নানা রকমের সমস্যা, ব্যাংকগুলোর চরম অসহযোগিতাসহ নানা কারণে একেবারেই বিনিয়োগ নেই।’

বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই, যাঁরা গত সাত দিনে এক ঘণ্টাও কাজ করেননি, কিন্তু কাজের জন্য গত সাত দিন ও আগামী দুই সপ্তাহের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এ ছাড়া গত ৩০ দিনে বেতন বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন, তাঁরাও বেকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবেন।

গত এক বছরে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ না থাকা আর গত জুলাই থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী।

তিনি বলেন, দেশে যত বেশি উৎপাদন বাড়বে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। গত বছর কিংবা গত জুলাই কিংবা আগস্টের শেষেও নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। বিনিয়োগ বাড়লেই দেশে উৎপাদন বাড়বে, ক্যাপাসিটি বাড়বে। তখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্বের হারও কমবে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশে বিনিয়োগ না আসায় অনেক কারাখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে পড়েছে, কর্মসংস্থানের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বিনিয়োগ আরো কমবে, অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে পড়বে, বেকারত্বের হার আরো বাড়বে।

বিবিএসের তৃতীয় প্রান্তিকের এ জরিপে প্রথমবারের মতো ১৩তম আইসিএলএস ও ১৯তম আইসিএলএস দুটি হিসাবই দেওয়া হয়েছে।  বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এ রোটেটিং প্যানেল স্যাম্পলিং ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফলটি ১৩তম ও ১৯তম আইসিএলএস (পরিসংখ্যানবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন) অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

নতুন হিসাবে দেশে বেকার বেড়ে ২৬ লাখ ৬০ হাজার, বাড়বে আরো

আপডেট টাইম : ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে এখন ২৬ লাখ ৬০ হাজার। আগের বছরের একই সময়ে দেশে বেকার জনগোষ্ঠী ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। পাশাপাশি বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৪.৪৯ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৪.০৭ শতাংশ।

গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেকার বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার।গতকাল রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএস প্রথমবারের মতো এবার শ্রমশক্তি জরিপে ১৯তম আইসিএলএস অনুযায়ী বেকারত্বের হার প্রকাশ করেছে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই এখন এ পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকে।

দেশে সেপ্টেম্বর শেষে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজারে। এ হিসাব এক বছরের তুলনায় ৩৫ লাখ কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত এক বছরে দেশে তেমন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। সরকারি-বেসরকারি সব বিনিয়োগই কমেছে।

তা ছাড়া গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবও পড়েছে বিনিয়োগে। যার ফলে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে, বেকারত্বের হারও বেড়েছে।শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য বলছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজারে। গত বছরের একই সময়ে দেশে কর্মে নিয়োজিত ছিলেন সাত কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কর্মজীবীর সংখ্যা কমেছে ৩৫ লাখ।

শ্রমশক্তি জরিপে সাধারণত কৃষি, শিল্প ও সেবা—এই তিন খাতের সামষ্টিক হিসাব তুলে আনা হয়। এই তিন খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে। এক বছরের ব্যবধানে এ পেশার ১৫ লাখ ৭০ হাজার জনগোষ্ঠী কাজ হারিয়েছেন। সেপ্টেম্বর শেষে এই জনগোষ্ঠী কমে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজারে।

এ ছাড়া অন্য খাতগুলোর মধ্যে শিল্প খাতে সাত লাখ ৬০ হাজার কর্মজীবী কমে এক কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল এক কোটি ২১ লাখ।

শিল্প খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের ধারাবাহিকতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তা ছাড়া বিনিয়োগের বাধার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকের উচ্চ সুদহার। এমন পরিস্থিতিতে বেকারত্বের হার আরো বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট, ব্যাংকের সুদের হার বেশি, নানা রকমের সমস্যা, ব্যাংকগুলোর চরম অসহযোগিতাসহ নানা কারণে একেবারেই বিনিয়োগ নেই।’

বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই, যাঁরা গত সাত দিনে এক ঘণ্টাও কাজ করেননি, কিন্তু কাজের জন্য গত সাত দিন ও আগামী দুই সপ্তাহের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এ ছাড়া গত ৩০ দিনে বেতন বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন, তাঁরাও বেকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবেন।

গত এক বছরে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ না থাকা আর গত জুলাই থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী।

তিনি বলেন, দেশে যত বেশি উৎপাদন বাড়বে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে। গত বছর কিংবা গত জুলাই কিংবা আগস্টের শেষেও নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। বিনিয়োগ বাড়লেই দেশে উৎপাদন বাড়বে, ক্যাপাসিটি বাড়বে। তখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্বের হারও কমবে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশে বিনিয়োগ না আসায় অনেক কারাখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে পড়েছে, কর্মসংস্থানের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বিনিয়োগ আরো কমবে, অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে পড়বে, বেকারত্বের হার আরো বাড়বে।

বিবিএসের তৃতীয় প্রান্তিকের এ জরিপে প্রথমবারের মতো ১৩তম আইসিএলএস ও ১৯তম আইসিএলএস দুটি হিসাবই দেওয়া হয়েছে।  বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এ রোটেটিং প্যানেল স্যাম্পলিং ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফলটি ১৩তম ও ১৯তম আইসিএলএস (পরিসংখ্যানবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন) অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে।