হে আমার বঙ্গজননী, ক্ষমা করো আমায়, আমি এক প্রবাসী
দেশে থাকি, বিদেশে থাকি, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।
আজ আমি ভন্ড, ছদ্ম বেশি দেশ প্রেমিক
আমার বিবেক আমায় প্রশ্ন করে, তুমি কোন দেশের নাগরিক ?
আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, আমি এমন দেশের নাগরিক –
যে দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দলীয় হাই কমান্ডের হুকুম প্রয়োজন
যে দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ধর্ম বিবেচিত হয় তুরুপের তাস হিসাবে!
যে দেশে বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলে অনেকে শরীরে জ্বালা ধরে
যে বজ্র কন্ঠে, যে আঙ্গুলের ইশারায় মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো বাংলার মানুষ
তাকে নিয়ে তোলে বন্দী জীবনের উদ্ভট প্রশ্ন?
যে দেশে মাওলানা ভাসানীর অবদান হারিয়ে যায় কালের গর্ভে
মুক্তি যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর অবদান ম্লান হয়
শহীদ জিয়ার সাহসী উচ্চারণ ,ঘোষণা নাকি পাঠকারী ,এই নিয়ে দন্ধ !
যে দেশে বিচার শুধু অভিজাত শ্রেনীর প্রাপ্য়, যে দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে
একটির সাথে আরেকটি জুড়ে দেয়া হয়,যে দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে
পাওয়া যায় ভন্ড প্রতারক খ্যাতি, এটার জন্য প্রতিবাদ হয়, ওটার জন্য কেন নয়!
যে দেশে শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, যৌতুকের বলি
গুম,খুন, রাহাজানি, লুটতরাজ, দুর্নীতি চলে আসছে আবহমান কাল ধরে
যে দেশে নির্বাচন কমিশন, কমিশনের আশায় খেলার পুতুল
যে দেশে মানবাধিকার সংস্থা, মুখে দেয় তালা সময়ে, অসময়ে খুলে যায় ,
যে দেশে যুদ্ধাপরাধীর
বিচার করতে লাগে কয়েক যুগ, যে দেশে স্বাধীনতা খন্ড বিখন্ড
যে দেশের মুক্তি যুদ্ধের বীর সেনানীরা দলে দলে বিভক্ত
যে দেশের মুক্তি যোদ্ধারা আজ চালায় রিক্সা ভ্যান
ফেরি করে জীবন জীবিকার জন্যে, যে দেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম নিয়ে চলে কুটিল রাজনীতি
ধর্মের মাঝে মাজহাব নামের গ্রুপিং, সংখ্যা গরিষ্ট, সংখ্যা লঘিস্ট গ্যাঁড়াকলে তৈরী হয় ইস্যু
ক্ষমতার পাশা খেলার প্রহসনে সাধারণ জনতার মৃত্যু ,
অফিসে আদালতে বাজারে পথে ঘাটে ঘরে বাইরে
দুশমন ,দুশমনি , অন্যায় অবিচার ,বেঁচে থাকার জন্য সাজতে হয় চামচা,চাটুকার!
যে দেশে কখনো সখনো, একটি হত্যার প্রতিবাদে সাইক্লোন উঠে পথে প্রান্তরে
একই সময়ে অন্য জায়গায় চলে নারকীয় হত্যাকান্ড, বর্বরতা !
খুনিরা মোটা তাজা হলেই পার পেয়ে যায় !
যে দেশে সাগর রুনির হত্যার প্রতিবাদে মিডিয়া অসহায়
ফেলানির লাশ কাঁটা তারে ঝুলে থাকলে কার কি আসে যায় !
পক্ষ পাতিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা, অবশ্যই ক্ষমতার পক্ষ!
দেশ প্রেম নয় নেতা প্রেমে মগ্ন হতে হয়, দেশের টাকা, জনগনের টাকা লোপাটের চলে মহোত্সব
যে দেশের সাহিত্যে বিচরণ করে অপরাজনীতির কীট, আমার কবিতা পরাধীন যে দেশে
সত্য বলতে, লিখতে মাত্রা দিয়ে তাল কাটে ছন্দের, গতি রোধ করে কবিতা পাঠের!
কবির কাব্যে ক্ষমতাসীনের পদ লেহন !
যে দেশে গনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় অগনতান্ত্রিক পথ, হোক ভোটার বিহীন নির্বাচন, না হয় তত্বাবধায়ক
যে দেশ শান্ত দেখলে ঘুম হারাম হয়ে যায় কুচক্রী মহলের,
গায়ে জ্বালা ধরে কতিপয় রাজনীতিকের উল্টা পাল্টা বয়ান চলে হরদম
বছরের পর বছর জনগনের টাকায় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আয়েস করে, সংসদ করে অকার্য্যকর
কেউবা আবার টিকে থাকতে বগলীয় বিরুধী হয়।
যে দেশে রাতে ব্যালট বাক্স পুরো হয়ে, দিনে গন্ডগোল পাকিয়ে দেয়া হয় সিল মোহরের বৈধতা
যে দেশে নিজের জান বাঁচাতে মুখে কুলুপ আঁটে সুশীল বুদ্ধিজীবী
জনগনের পক্ষে কথা বলতে যে দেশে সাংবাদিকের কলম শঙ্কিত, করে তাবেদারী
আপাতত সে দেশের গর্বিত নাগরিক আমি !
যদি ও দেশে স্বাধীনতার পর থেকেই ,একই ছবির প্রদর্শনী চলছেই মহা সমারোহে
কখনো সাদা কালো কখনো আংশিক রঙিন !
যে দেশে এক মা চায় তার সন্তান ঘরে থাক চোখের সামনে
আরেক মা জোর করে অর্থের জন্যে সন্তান বিদেশে পাঠায়
যে দেশে প্রবাসী প্রিয়জনের জন্য খেটে মরে
প্রিয়তমা পরকিয়ার স্বাদ লয় !
যে দেশে একজন করে আয়, একান্নবর্তী পরিবার তার উপর দায় চাপিয়ে দেয়
যে প্রবাসীর আয় হয় লোপাট ঘরে, বাইরে সব জায়গায়, শেষ পর্যন্ত দেশের রিজার্ভ লুট হয়ে যায় !
বেকার, বেকারত্বের অভিশাপে যুব সমাজ ভুল পথে পা বাড়ায়!
প্রবাসীরা, বিদেশের বিমান বন্দরে সন্মানিত হলেও, নিজ দেশে লাঞ্চিত, অপমানিত।
আফসোস, রক্তে কেনা স্বাধীনতা আর মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত মানচিত্রে
স্বাধিকার, সার্বভৌমত্ব সাধারণ জনগণ খুঁজে বেড়ায় !
কবি: মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু (সিঙ্গাপুর প্রবাসী)