‘পোশাক শিল্পের চেয়ে বেশি রপ্তানি করা যাবে বাংলাদেশের জুয়েলারি’ এমন আশাবাদের কথা জানিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, পোশাক শিল্পের চেয়ে বেশি রপ্তানি করা যাবে মেড ইন বাংলাদেশের জুয়েলারি। আমরা যদি জুয়েলারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিয়ে এক সাথে কাজ করতে পারি, তবে আমরা পোশাক শিল্পের চেয়ে চারগুণ বেশি জুয়েলারি রপ্তানি করতে পারবো। জুয়েলারি রপ্তানি শুরু হলে বাংলাদেশের জিডিপিতে এই শিল্প বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। জুয়েলারি রপ্তানি করে দুই শতাংশ জিডিপি বাড়ানো সম্ভব।
আজ সোমবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এসব কথা বলেন।
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের কারিগরদের একটা খ্যাতি আছে। যদি আপনারা শিল্প কারখানা করেন, তবে আমি ৪০ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্লোর বাজুসকে দিতে পারি ঢাকার পাশেই। এই জুয়েলারি শিল্পকে আমার ছেলে (বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর) থাকলেও নিশ্চিত কিছু একটা করতো… আমি এটা বাজুসকে উপহার হিসেবে দিতে চাই। এখান থেকে আপনারা সারা বিশ্বে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেন। দেশের পণ্য দেশে রাখলে চলবে না, আমাদের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে হবে।
আহমেদ আকবর সোবহান আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫০ বছর পর একটি রিফাইনারির অনুমতি দিয়েছেন। অনেকের সন্দেহ ছিল, অনেক ব্যাংকের সন্দেহ ছিল, আদৌ বাংলাদেশ রিফাইনারি করতে পারবে! আমি দ্যর্থহীন কণ্ঠে বলবো, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব দেশ পারলে আমরা পারবো না কেন। ভারত পেরেছে, চীন পেরেছে আমরা পারবো না কেন? এটা আমাদের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, এই রিফাইনারি যুদ্ধ আমাদের জন্য বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। করোনার কারণে আমাদের রিফাইনারির কাজ বেশ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। আশা করি, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এই রিফাইনারির কাজ পুরোদমে শুরু হবে। আমি অনুরোধ করবো বাজুসকে, আমরা যে ফ্লোরটা দেবো প্রোডাকশন অ্যান্ড এক্সপোর্টের জন্য… সেখান থেকে আপনারা এখনই এক্সপোর্টের কাজ শুরু করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, বাজুসের সাবেক সভাপতি ও উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ডা. দীলিপ কুমার রায়, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বাজুসের সহ-সভাপতি গুলজার আহমেদ ও বাজুসের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রহুল আমিন রাসেল।
বাজুসের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখায় ৭ জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন সৈয়দ সামসুল আলম, কাজী সিরাজুল ইসলাম, সত্য রঞ্জন ব্রহ্ম, জগদীশ চন্দ্র সরকার, আলাউদ্দিন আহমেদ, খবির উদ্দিন ও আব্দুল লায়েস। তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
এদিন বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে উদযাপিত হয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য ‘সোনায় বিনিয়োগ ভবিষ্যতের সঞ্চয়’।
ঢাকা শহরে জুয়েলারি ব্যবসা করতে গিয়ে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে ১৯৬৬ সালের ১৭ জুলাই বাজুস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৫৭ বছর পূর্ণ করে ৫৮-তে পদার্পণ করলো বাজুস। সংগঠনের বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাকাসহ সারা দেশে ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা সাজে বর্ণিল সাজে। দেশের ৬২টি সাংগঠনিক জেলাও বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়। ৪৯১টি উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সারা দেশে ৪০ হাজার জুয়েলার্স পরিবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক মিলনমেলায় সামিল হয়। বারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন আয়োজনে ছিলা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, কেক কাটা, দর্শনীয় স্থানে ব্যানার ও পোস্টার ঝুলানো, আলোকসজ্জা এবং আলোচনা সভা ইত্যাদি।
বাজুসের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ক্রেতা সাধারণকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি বলেন, এ শিল্পের উন্নয়নে আমাদের আরও বিনিয়োগ করতে হবে এবং নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারেরও নীতি সহায়তা প্রদান করতে হবে।
সায়েম সোবহান আনভীর আরও বলেন, সরকার অনেক এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন করছে। এ শিল্পের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আশেপাশে একটা নিরাপদ জায়গা দরকার। পাশাপাশি যেসব উদ্যোক্তা জুয়েলারি কারখানা করবেন, তাদের ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা দিতে হবে। এ সুবিধা পাওয়া গেলে রপ্তানি আয়ের অন্যতম শীর্ষ খাতে পরিণত হবে জুয়েলারি শিল্প।
পরিশেষে বাজুসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশবাসীকে জানাতে চাই, জুয়েলারি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত। সরকারের নীতি সহায়তা, সঠিকভাবে উৎসাহ ও কর প্রণোদনা পেলে এ শিল্প তৈরি পোশাক শিল্পের মতো দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।