ভোটের পর ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে ধান-চালের বাজার। কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে বস্তাপ্রতি (৭৫ কেজি) ধানের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা। আর ধানের সাথে পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে চালের দামও। বাজারে প্রকারভেদে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ১০ টাকা।
আমন মৌসুমের শেষে এসে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা এর সুফল তেমন ভোগ করতে না পারলেও বেশি দামে চাল কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ ধানের হাট শুক্রবার ও সোমবার বসে। দিনাজপুর ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে এই হাটে ধান কিনতে আসেন ক্রেতারা। ভরা আমন মৌসুমে ধানের দাম আশানুরূপ না থাকলেও ভোটের পরে বেড়েছে ধানের দাম।
শুক্রবার সকালে এই হাটে ধান কিনতে আসা সলিল বসাক জানান, দশ দিন আগে এই হাটে ব্রি-৫১ জাতের প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) ধান বিক্রি হয় ২ হাজার ২৫০ টাকা। আর আজ তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকায়। অনুরূপ বিআর-১১ জাতের ধান ২২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪৫০ টাকা, ব্রি-৪৯ ধান ২১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪৪৫ টাকা, গুটি স্বর্ণ ২২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪৩০ টাকা এবং সুমন স্বর্ণ ২২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০০ টাকা। অর্থাৎ দশ দিনের ব্যবধানে প্রতিবস্তায় ধানের দাম বেড়েছে ২শ থেকে আড়াইশ টাকা। আর সুগন্ধিযুক্ত ধানের দাম বেড়েছে আরও বেশি। ১০ দিনের ব্যবধানে সুগন্ধি জাতের জিরা ধান ৪৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সলিল বসাক জানান, রাইস মিলগুলোতে এখন ধানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বেড়েছে ধানের দাম। ভোটের আগে কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে চললেও ভোটের পর মিল মালিকরা চাল উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ভরা আমন মৌসুমে ধানের দাম তেমন বেশি না থাকলেও এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এর সুফল পাচ্ছেন না কৃষক। বাড়তি দামের বাড়তি লাভ পাচ্ছে ধান কিনে রাখা মজুতদাররা।
বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার কৃষক খোরশেদ আলী জানান, আবাদের সময় দোকানে থাকা বকেয়া সারের দাম আর শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে কাটা-মাড়াই শেষেই ধান বিক্রি করতে হয়েছে। এখন কৃষকের কাছে ধান নেই। ধান আছে মজুতদারদের কাছে। তাই ধানের দাম এখন বাড়লে কৃষকের তেমন লাভ নেই, লাভ মজুদদারদের। কৃষক খোরশেদ আলী বলেন, আমন-কাটা মাড়াইয়ের সময় এই দাম থাকলে এর সুফল পেতেন তারা।
এদিকে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে বেড়েছে চালের দাম। কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে প্রকারভেদে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৬ টাকা থেকে ১০ টাকা।
শুক্রবার দিনাজপুর শহরের প্রধান চালের বাজার বাহাদুরবাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চাল ২৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩১০০ টাকায়, বিআর-২৮ জাতের চাল ২৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৯০০ টাকায়, বিআর-২৯ জাতের চাল ২৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৬০০ টাকায়, সুমন স্বর্ণ চাল ২১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০০ টাকায় এবং গুটিস্বর্ণ জাতের চাল প্রতিবস্তা ২১০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজি প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। কেজিতে যা দাঁড়ায় ৬ টাকা থেকে ১০ টাকা।
বাহাদুরবাজারে চাল কিনতে আসা মনসুর আলী জানান, হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাল কিনতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লে নির্দিষ্ট আয় দিয়ে তারা চলবে কী করে। চাল কিনতে এসে রেগে গিয়ে এ প্রশ্ন করেন তিনি।
বাহাদুরবাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, ভোটের সময় এক সপ্তাহ সরকারে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে ৩০ টাকা কেজির চাল বিক্রিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির চাল সরবরাহ বন্ধ ছিল। এ কারণেই বাজারে চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বাহাদুরবাজারের চাল বিক্রেতা লিয়াকত আলী জানান, মিল মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, ধানের দাম বাড়লে চালের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায়ী নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে আজকাল অনেকেই স্টক বিজনেসের নামে এসব ভোগ্যপণ্য মজুদ করছেন। বর্তমানে মিলমালিকদের চাইতে স্টক ব্যবসায়ীদের গুদাম ঘরে বেশি ধান আছে। মৌসুমের শুরুতে বেশি দামে কিনে মজুদ করছেন। পরে মিলমালিকরাই এসব ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে আরও বেশি দামে কিনছেন। চালের বাজার বেশি হওয়ার এটাই মূল কারণ। তাছাড়া মিল মালিকদের উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রায় এক সপ্তাহ সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৩০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রি বন্ধ ছিল। এছাড়া সরকারের অন্যান্য খাদ্য কর্মসূচি বন্ধ ছিল। এ কারণেই বাজারের চালের ওপর চাপ পড়েছে। এটি চালের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে খাদ্য বিভাগের দিনাজপুর শহরের ডিলার আবু হোসেন জানান, গত সোমবার থেকে আবার চালু হয়েছে ৩০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রি। চাল বিক্রি আবার শুরু হওয়ায় বাজারে কিছুটা চাপ কমবে বলে জানান তিনি।