দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে ভালো কিছু ঘটবে না, এমন আভাস আগেই ছিল এবং হয়েছেও তাই। গতকাল রোববার শুরু থেকেই দরপতনে লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। ধস নেমেছে সূচকে। তলানিতে ঠেকেছে লেনদেনও।
দেশজুড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন গড়িয়েছে সরকার পতনের আন্দোলনে। শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলন এবং সরকারি দলের জমায়েত কর্মসূচি ঘোষণায় এদিন স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ জন্য সচেতনভাবেই অনেকে বাসাবাড়ি থেকে বের হননি।
দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে কিছু কিছু ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান কার্যালয় ছাড়া বন্ধ ছিল শাখাগুলো। যান চলাচল সীমিত থাকায় হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল।
অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাবে শুরু থেকেই বিক্রির চাপে লেনদেন হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। বিক্রির চাপের কারণ ছিল মার্জিন ঋণ সমন্বয়। বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিকদের বিক্রির চাপ
বেশি ছিল।
এ বিষয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুবউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেল প্রেসার ছিল, বাই সাইড স্ট্রং ছিল না। ব্যক্তিদের চেয়েও প্রাতিষ্ঠানিকদের বিক্রির চাপটা বেশি ছিল। অ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য এটা হয়েছে।’
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে দরপতনের তালিকায়। দিনশেষে শেয়ারের দরপতন হয়েছে ৩৭২টির, বিপরীতে বেড়েছে কেবল ৬টির। আর আগের দিনের দরেই হাতবদল হয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
ঢালাও দরপতনের প্রভাবে সূচক নেমে গেছে প্রায় দেড় মাস আগের অবস্থানে। সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স এক দিনেই কমেছে ১০৪ পয়েন্ট! সূচকটি অবস্থান করছে ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্টে, যা গত ২৪ জুনের পর সর্বনিম্ন। ওই দিন সূচকের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ২২০ পয়েন্টে।
অনিশ্চয়তার কারণে এমনিতেই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। ফলে যাঁদের মার্জিন ঋণে শেয়ার কেনা রয়েছে, তাঁরাই সমন্বয়ের জন্য বিক্রি করেছেন। নতুন করে শেয়ার কেনায় অনাগ্রহী ছিলেন সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী।
সব মিলিয়ে দিনভর বাজারটিতে হাতবদল হয়েছে ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট, যা আগের কর্মদিবসের চেয়ে ৩৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেশি। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ৫৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
চলমান পরিস্থিতির কারণেই পুঁজিবাজারে এমন পতন হয়েছে বলে মনে করেন মোস্তফা মাহবুবউল্লাহ। তিনি বলেন, অন্য কোনো কারণ নেই। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণেই পতন হয়েছে। আজকের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে বাজার সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিত হবে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় লেনদেন চালু রাখাই উচিত হয়নি।