ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে আলু-পেঁয়াজ-ডিমের দাম, চালেও নেই স্বস্তি

সড়কে ও বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় এর সুফল মিলতে শুরু করেছিল। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। চালের দামও আশানুরূপ কমেনি। এ নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন ক্রেতারা।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ১১০ টাকাতে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তা আবার বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক দিনের মাথায় পাইকারিতে দর আবার বেড়েছে। আড়তদারদের দাবি, সড়কে চাঁদাবাজি না থাকলেও সরবরাহ কম। ফলে দাম সেভাবে কমছে না।

শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা কানাই সাহা এবং কারওয়ানবাজারের ফয়েজ আহমেদ জানান, সবজি আর পেঁয়াজের বাজার এক রকম নয়। সবজি কাঁচা পণ্য, প্রতিদিন সেটার দাম ওঠানামা করে। অন্যদিকে পেঁয়াজ মজুদ করা যায়। দেশি পেঁয়াজে টান পড়েছে। বাজারে অনেকেই পেঁয়াজ কম করে ছাড়ছেন। তার ওপর আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ভারতেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। সে পেঁয়াজেও সুবিধা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। আমদানি বাড়ানো না হলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে আলুর দরেও বেজায় বেজার সাধারণ ভোক্তারা। কারণ আলু কিনতে এখন পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে প্রতি কিলোগ্রাম ৬০ টাকা। ব্যবসায়ীরা আগের মতোই বলছেন, হিমাগার থেকে কেনা আলুর দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। তাই খুচরায় দাম কমছে না।

মালিবাগ বাজারে একজন ক্রেতা আবু বক্কর আক্ষেপ করে বলছিলেন, সস্তার আলু এখন অযৌক্তিকভাবে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আলুর বাজারে নজর দেওয়া উচিত সরকারের। কৃষকের কাছ থেকে ১০-১৫ টাকায় কিনে তা ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

পেঁয়াজ ও আলুর মতো চালের দাম নিয়েও আক্ষেপ রয়েছে ক্রেতাদের। রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা ও চায়না ইরি এখনো বিক্রি হচ্ছে কিলোগ্রাম প্রতি ৫৪ টাকা পর্যন্ত। গত মাসে এর চেয়ে অন্তত ২ টাকা কমে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সরু বা মিনিকেট চাল বর্তমানে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং মাঝারি মানের বিআর-২৮ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা এখনো বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

মালিবাগ বাজারে আসা চালের ক্রেতা বরকত উল্লাহ্ গতকাল বলছিলেন, দেশে একের পর এক ভালো উৎপাদনের খবর দেখি। অথচ বাজারে তার প্রতিফলন নেই। সেই তো বেশি দামেই কিনে খেতে হচ্ছে। চালের পেছনে খরচ কেবল বাড়ছেই, কমছে না।

তবে কিছুটা স্বস্তি মিলছে সবজির বাজারে। সপ্তাহ দুয়েক আগে বেশিরভাগ সবজির দর ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল। করলা, বেগুন ও বরবটির দাম শতকের ঘর ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে এসব সবজির দাম কমেছে। ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁপে এখন ৩০ টাকায় নেমে এসেছে। প্রতি কিলোগ্রামে দাম কমে টোল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা ৫০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি, বেগুন ও শসা ৭০ টাকাতেও মিলছে। তবে করলা, কচুরলতি, কচুরমুখী, টমেটো, গাজর ও মুলার দাম আগের চেয়ে কিছুটা কম হলেও তা অনেক ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে। কাঁচামরিচের দামে বাজারভেদে ভিন্নতা দেখা গেছে। কোথাও প্রতি কিলোগ্রাম ২০০ টাকা, কোথাও ২৪০ টাকা।

সবজির পাশাপাশি মুরগি ও ডিমের দামও অতীতের তুলনায় কম রয়েছে। তবে ফার্মের ডিমের দাম নতুন করে ডজনপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে কোথাও কোথাও। মাঝে কিছুদিন এ ডিমের দাম ১৪৫ টাকা ডজন পর্যন্ত নেমে আসে। যা বর্তমানে ১৫০ টাকায় বিক্রি

হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারের দর অনেকটাই অপরিবর্তিত। চলতি মৌসুমে ক্রেতাদের নজর ইলিশে গেলেও দামের দাপটে ফিরে যেতে হচ্ছে। এক কিলোগ্রাম ওজনের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে কম-বেশি দেড় হাজার টাকা। আধা কিলোগ্রাম ওজনের ইলিশের দাম পড়ছে ১ হাজার ২০০ টাকার মতো।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বাড়ছে আলু-পেঁয়াজ-ডিমের দাম, চালেও নেই স্বস্তি

আপডেট টাইম : ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

সড়কে ও বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় এর সুফল মিলতে শুরু করেছিল। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। চালের দামও আশানুরূপ কমেনি। এ নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন ক্রেতারা।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ১১০ টাকাতে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তা আবার বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক দিনের মাথায় পাইকারিতে দর আবার বেড়েছে। আড়তদারদের দাবি, সড়কে চাঁদাবাজি না থাকলেও সরবরাহ কম। ফলে দাম সেভাবে কমছে না।

শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা কানাই সাহা এবং কারওয়ানবাজারের ফয়েজ আহমেদ জানান, সবজি আর পেঁয়াজের বাজার এক রকম নয়। সবজি কাঁচা পণ্য, প্রতিদিন সেটার দাম ওঠানামা করে। অন্যদিকে পেঁয়াজ মজুদ করা যায়। দেশি পেঁয়াজে টান পড়েছে। বাজারে অনেকেই পেঁয়াজ কম করে ছাড়ছেন। তার ওপর আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ভারতেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। সে পেঁয়াজেও সুবিধা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। আমদানি বাড়ানো না হলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে আলুর দরেও বেজায় বেজার সাধারণ ভোক্তারা। কারণ আলু কিনতে এখন পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে প্রতি কিলোগ্রাম ৬০ টাকা। ব্যবসায়ীরা আগের মতোই বলছেন, হিমাগার থেকে কেনা আলুর দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। তাই খুচরায় দাম কমছে না।

মালিবাগ বাজারে একজন ক্রেতা আবু বক্কর আক্ষেপ করে বলছিলেন, সস্তার আলু এখন অযৌক্তিকভাবে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আলুর বাজারে নজর দেওয়া উচিত সরকারের। কৃষকের কাছ থেকে ১০-১৫ টাকায় কিনে তা ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

পেঁয়াজ ও আলুর মতো চালের দাম নিয়েও আক্ষেপ রয়েছে ক্রেতাদের। রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা ও চায়না ইরি এখনো বিক্রি হচ্ছে কিলোগ্রাম প্রতি ৫৪ টাকা পর্যন্ত। গত মাসে এর চেয়ে অন্তত ২ টাকা কমে পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সরু বা মিনিকেট চাল বর্তমানে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং মাঝারি মানের বিআর-২৮ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা এখনো বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

মালিবাগ বাজারে আসা চালের ক্রেতা বরকত উল্লাহ্ গতকাল বলছিলেন, দেশে একের পর এক ভালো উৎপাদনের খবর দেখি। অথচ বাজারে তার প্রতিফলন নেই। সেই তো বেশি দামেই কিনে খেতে হচ্ছে। চালের পেছনে খরচ কেবল বাড়ছেই, কমছে না।

তবে কিছুটা স্বস্তি মিলছে সবজির বাজারে। সপ্তাহ দুয়েক আগে বেশিরভাগ সবজির দর ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল। করলা, বেগুন ও বরবটির দাম শতকের ঘর ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে এসব সবজির দাম কমেছে। ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁপে এখন ৩০ টাকায় নেমে এসেছে। প্রতি কিলোগ্রামে দাম কমে টোল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা ৫০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি, বেগুন ও শসা ৭০ টাকাতেও মিলছে। তবে করলা, কচুরলতি, কচুরমুখী, টমেটো, গাজর ও মুলার দাম আগের চেয়ে কিছুটা কম হলেও তা অনেক ক্রেতার নাগালের বাইরে রয়েছে। কাঁচামরিচের দামে বাজারভেদে ভিন্নতা দেখা গেছে। কোথাও প্রতি কিলোগ্রাম ২০০ টাকা, কোথাও ২৪০ টাকা।

সবজির পাশাপাশি মুরগি ও ডিমের দামও অতীতের তুলনায় কম রয়েছে। তবে ফার্মের ডিমের দাম নতুন করে ডজনপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে কোথাও কোথাও। মাঝে কিছুদিন এ ডিমের দাম ১৪৫ টাকা ডজন পর্যন্ত নেমে আসে। যা বর্তমানে ১৫০ টাকায় বিক্রি

হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারের দর অনেকটাই অপরিবর্তিত। চলতি মৌসুমে ক্রেতাদের নজর ইলিশে গেলেও দামের দাপটে ফিরে যেতে হচ্ছে। এক কিলোগ্রাম ওজনের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে কম-বেশি দেড় হাজার টাকা। আধা কিলোগ্রাম ওজনের ইলিশের দাম পড়ছে ১ হাজার ২০০ টাকার মতো।