ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন মাহবুব

খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমান। তাকে বগুড়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে দুই দফায় বদলি করা হয়। সেই বদলিকে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান। সেখানে যোগদান না করে দুবারই থেকেছেন খুলনা জেলা পরিষদে।

পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় হয়ে ওঠেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। পরিষদে গড়ে তোলেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। অবৈধভাবে উপার্জন করেন কোটি কোটি টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও নিয়েছেন প্রথম শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা। সেই ছিলেন জেলা পরিষদের অঘোষিত চেয়ারম্যান। পরিষদে তার কথাই শেষ কথা। তার দাপটে অফিসের কর্মচারীরা সব সময়ই থাকেন তটস্থ ও বদলি আতঙ্কে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ। বয়সে বৃদ্ধ হওয়ায় তিনি থাকতেন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এ সুযোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ছায়া চেয়ারম্যান। ভৌতিক প্রকল্প তৈরি ও দরপত্রবিহীন উন্নয়নকাজসহ পরিষদের সব ক্ষেত্রেই চলছে চরম নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতা।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকা লোপাটই ছিল তার মূল লক্ষ্য। এসব অপকর্ম ঠেকাতে ঢাল হিসাবে অবৈধভাবে বের করেন দৈনিক একটি পত্রিকা। যার সম্পাদক ছিলেন তিনি নিজেই। কোনো সাংবাদিক তার অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করতেন তিনি।

দুই দফা বদলি ঠেকিয়েছেন : খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমানকে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা পরিষদে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি বগুড়া জেলা পরিষদে যোগ না দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চাকরি করেন খুলনায়। এরপর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে আবারও বদলি করে। কিন্তু সেখানে যোগ না দিয়ে খুলনা জেলা পরিষদে বহাল তবিয়তে আছেন।

টাকা কামানোর জন্য নিতেন প্রকল্প : জেলা পরিষদ মালিকানাধীন খুলনা সদরে পরিত্যক্ত ডাকবাংলোর জমিতে ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুই বছর পর সেখানে মার্কেট তৈরি করে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মাহবুব। ডুমুরিয়ার চুকনগর ডাকবাংলোর জমি থেকে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করে। পরে সেই জমি ভুয়া ব্যক্তিদের নামে বরাদ্দ দিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় মাহবুব।

এছাড়া পাইকগাছার কপিলমুনির ডাকবাংলোর জমি, দাকোপের ডাকবাংলোর জমি ও রূপসায় ডাকবাংলোর জমি অন্তত ৩৫০ ব্যক্তিকে একসনা ইজারা দেওয়া হয়। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা হারে আদায় করেন মাহবুব। শুধু এসব জায়গা থেকে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় মাহবুব। যা জেলা পরিষদের কোষাগারে জমা হয়নি। প্রতি অর্থবছরে সামাজিক প্রকল্পের আওতায় মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, মন্দির-গির্জা, কবরস্থান-শ্মশান সংস্কার ও উন্নয়ন এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা জেলা পরিষদে ঘুস দিতে হতো। এ নিয়ম তৈরি হয় মাহবুব খুলনা জেলা পরিষদে যোগদানের পর।

চুকনগরের ব্যবসায়ী মাসুদ ইসলাম জানান, ‘ডাকবাংলোর জায়গায় তার চাচা শেখ কেরামত ও শেখ নুরুজ্জামানের নামে দুটি দোকানঘর ছিল। তাই নতুন মার্কেটে দোকানঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার ছিল। অথচ তারা দোকানঘরই পাননি। দুটি ঘরের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ৩০ লাখ টাকা চান। এত টাকা জোগাড় করতে না পারায় আমাদের বঞ্চিত করা হয়। পরে ওই দোকান দুটি ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়।’

গড়েছেন সম্পদের পাহাড় : মাহবুবুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে অফিস ভবনের পেছনে প্রকৌশলীদের ৩ তলা বাসভবনে সম্পূর্ণ একা বসবাস করেন। ফলে কমপক্ষে মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাড়া হিসাবে বছরে ২৪ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে পরিষদ।

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত ‘দৈনিক খুলনা’ পত্রিকার ছাপাখানা ক্রয় ও আনুষঙ্গিক কাজে ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় করেন। এছাড়া সামাজিক প্রকল্প বিক্রি, ঘুস গ্রহণ, সংস্থার ডাকবাংলোর জায়গা ইজারার নামে মার্কেট নির্মাণ করে দোকান বিক্রি, খেয়াঘাট ইজারা, মেরামত প্রকল্প ও এক হাজার আসনের অডিটোরিয়াম প্রকল্পে লুটপাট করে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। এসব টাকায় ঢাকার কাঁঠাল বাগানে ২২০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট কিনেছেন। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় পাঁচটি প্লট ও আলিশান বাড়ি।

এছাড়া খুলনার মোহাম্মদনগরে ১০ কাঠা জমির ওপর ভবন নির্মাণ করছেন। পুরো জায়গায় সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

গতি পায়নি দুদকের তদন্ত : মাহাবুবের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩০ জুন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার পরিচালককে পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু পরিচালক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তদন্তকাজ শুরুই করেননি। এছাড়া ২০২২ সালের ১১ আগস্ট মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে খুলনার তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার একটি আবেদনপত্রের তদন্ত করেন। তদন্তে মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি জ্ঞাপন করা পত্রে অ মুছে সম্মতি করে অর্থ আÍসাতের সত্যতা মেলে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমার যা সম্পদ রয়েছে তা দিয়ে চাকরি ছাড়ার পর কোনোরকমে দিন পার করতে হবে। আমি তিনতলার দ্বিতীয় তলায় থাকি। বাকিগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। কেউ আবেদন করে না।

তিনি বলেন, আমার সম্পদের হিসাব ইনকাম ট্যাক্স অফিসে দেওয়া রয়েছে। যারা আমার কাছ থেকে সুবিধা নিতে এসে পায়নি তারাই মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। ফ্ল্যাট ও জমি কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদনগরে জমি রয়েছে। সেখানে ভবিষ্যতে ভবন নির্মাণ করা হবে। ঢাকার কাঁঠাল বাগানের ফ্ল্যাটটি আমার নামে নয়। সাতক্ষীরায় কিছু সম্পদ রয়েছে যেগুলো আমি কিনেছি।’ আমাকে বদলি করা হয়েছে অনিয়মের মাধ্যমে। যা নিয়ে আমি আদালতে মামলা করেছি। সেই মামলায় স্থিতাবস্থা জারি রয়েছে।’

কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘লেখেন লেখেন আমার বিরুদ্ধে আজান দিয়ে লেখেন। লিখলে কিছু হয় না। মানুষের উপকার করলে দোষ হয়।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন মাহবুব

আপডেট টাইম : ১২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমান। তাকে বগুড়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে দুই দফায় বদলি করা হয়। সেই বদলিকে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান। সেখানে যোগদান না করে দুবারই থেকেছেন খুলনা জেলা পরিষদে।

পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় হয়ে ওঠেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। পরিষদে গড়ে তোলেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। অবৈধভাবে উপার্জন করেন কোটি কোটি টাকা। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও নিয়েছেন প্রথম শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা। সেই ছিলেন জেলা পরিষদের অঘোষিত চেয়ারম্যান। পরিষদে তার কথাই শেষ কথা। তার দাপটে অফিসের কর্মচারীরা সব সময়ই থাকেন তটস্থ ও বদলি আতঙ্কে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ। বয়সে বৃদ্ধ হওয়ায় তিনি থাকতেন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এ সুযোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ছিলেন ছায়া চেয়ারম্যান। ভৌতিক প্রকল্প তৈরি ও দরপত্রবিহীন উন্নয়নকাজসহ পরিষদের সব ক্ষেত্রেই চলছে চরম নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতা।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকা লোপাটই ছিল তার মূল লক্ষ্য। এসব অপকর্ম ঠেকাতে ঢাল হিসাবে অবৈধভাবে বের করেন দৈনিক একটি পত্রিকা। যার সম্পাদক ছিলেন তিনি নিজেই। কোনো সাংবাদিক তার অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করতেন তিনি।

দুই দফা বদলি ঠেকিয়েছেন : খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমানকে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা পরিষদে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি বগুড়া জেলা পরিষদে যোগ না দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চাকরি করেন খুলনায়। এরপর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে আবারও বদলি করে। কিন্তু সেখানে যোগ না দিয়ে খুলনা জেলা পরিষদে বহাল তবিয়তে আছেন।

টাকা কামানোর জন্য নিতেন প্রকল্প : জেলা পরিষদ মালিকানাধীন খুলনা সদরে পরিত্যক্ত ডাকবাংলোর জমিতে ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুই বছর পর সেখানে মার্কেট তৈরি করে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মাহবুব। ডুমুরিয়ার চুকনগর ডাকবাংলোর জমি থেকে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করে। পরে সেই জমি ভুয়া ব্যক্তিদের নামে বরাদ্দ দিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় মাহবুব।

এছাড়া পাইকগাছার কপিলমুনির ডাকবাংলোর জমি, দাকোপের ডাকবাংলোর জমি ও রূপসায় ডাকবাংলোর জমি অন্তত ৩৫০ ব্যক্তিকে একসনা ইজারা দেওয়া হয়। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা হারে আদায় করেন মাহবুব। শুধু এসব জায়গা থেকে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় মাহবুব। যা জেলা পরিষদের কোষাগারে জমা হয়নি। প্রতি অর্থবছরে সামাজিক প্রকল্পের আওতায় মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, মন্দির-গির্জা, কবরস্থান-শ্মশান সংস্কার ও উন্নয়ন এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা জেলা পরিষদে ঘুস দিতে হতো। এ নিয়ম তৈরি হয় মাহবুব খুলনা জেলা পরিষদে যোগদানের পর।

চুকনগরের ব্যবসায়ী মাসুদ ইসলাম জানান, ‘ডাকবাংলোর জায়গায় তার চাচা শেখ কেরামত ও শেখ নুরুজ্জামানের নামে দুটি দোকানঘর ছিল। তাই নতুন মার্কেটে দোকানঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার ছিল। অথচ তারা দোকানঘরই পাননি। দুটি ঘরের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ৩০ লাখ টাকা চান। এত টাকা জোগাড় করতে না পারায় আমাদের বঞ্চিত করা হয়। পরে ওই দোকান দুটি ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়।’

গড়েছেন সম্পদের পাহাড় : মাহবুবুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে অফিস ভবনের পেছনে প্রকৌশলীদের ৩ তলা বাসভবনে সম্পূর্ণ একা বসবাস করেন। ফলে কমপক্ষে মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাড়া হিসাবে বছরে ২৪ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে পরিষদ।

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত ‘দৈনিক খুলনা’ পত্রিকার ছাপাখানা ক্রয় ও আনুষঙ্গিক কাজে ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় করেন। এছাড়া সামাজিক প্রকল্প বিক্রি, ঘুস গ্রহণ, সংস্থার ডাকবাংলোর জায়গা ইজারার নামে মার্কেট নির্মাণ করে দোকান বিক্রি, খেয়াঘাট ইজারা, মেরামত প্রকল্প ও এক হাজার আসনের অডিটোরিয়াম প্রকল্পে লুটপাট করে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। এসব টাকায় ঢাকার কাঁঠাল বাগানে ২২০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট কিনেছেন। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায় পাঁচটি প্লট ও আলিশান বাড়ি।

এছাড়া খুলনার মোহাম্মদনগরে ১০ কাঠা জমির ওপর ভবন নির্মাণ করছেন। পুরো জায়গায় সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

গতি পায়নি দুদকের তদন্ত : মাহাবুবের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩০ জুন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার পরিচালককে পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু পরিচালক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তদন্তকাজ শুরুই করেননি। এছাড়া ২০২২ সালের ১১ আগস্ট মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে খুলনার তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার একটি আবেদনপত্রের তদন্ত করেন। তদন্তে মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি জ্ঞাপন করা পত্রে অ মুছে সম্মতি করে অর্থ আÍসাতের সত্যতা মেলে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমার যা সম্পদ রয়েছে তা দিয়ে চাকরি ছাড়ার পর কোনোরকমে দিন পার করতে হবে। আমি তিনতলার দ্বিতীয় তলায় থাকি। বাকিগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। কেউ আবেদন করে না।

তিনি বলেন, আমার সম্পদের হিসাব ইনকাম ট্যাক্স অফিসে দেওয়া রয়েছে। যারা আমার কাছ থেকে সুবিধা নিতে এসে পায়নি তারাই মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। ফ্ল্যাট ও জমি কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদনগরে জমি রয়েছে। সেখানে ভবিষ্যতে ভবন নির্মাণ করা হবে। ঢাকার কাঁঠাল বাগানের ফ্ল্যাটটি আমার নামে নয়। সাতক্ষীরায় কিছু সম্পদ রয়েছে যেগুলো আমি কিনেছি।’ আমাকে বদলি করা হয়েছে অনিয়মের মাধ্যমে। যা নিয়ে আমি আদালতে মামলা করেছি। সেই মামলায় স্থিতাবস্থা জারি রয়েছে।’

কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘লেখেন লেখেন আমার বিরুদ্ধে আজান দিয়ে লেখেন। লিখলে কিছু হয় না। মানুষের উপকার করলে দোষ হয়।’