ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জাকের-শামীমকে যে পুরস্কার দিতে বললেন উইন্ডিজ কিংবদন্তি স্ত্রীর করা যৌতুক মামলায় পুলিশ স্বামী কারাগারে হাইকোর্টে উপদেষ্টা হাসান আরিফের জানাজা অনুষ্ঠিত যারা দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করেছে, তাদের মূল্যায়ন করা হবে: টুকু আবাসন ব্যবসায় মন্দা দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস ‘আমি আমার নিয়মিত কাজে ফিরে যেতে পারলে খুশি হবো’ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে ভারতের তথ্য বিভ্রান্তিকর টঙ্গীতে বেইলি ব্রিজ ভেঙে ট্রাক নদীতে, বিকল্প পথে চলার অনুরোধ অর্থহীন’ এর সাবেক গিটারিস্ট পিকলু মারা গেছেন নোয়াখালী জেলা আমীর ইসহাক খন্দকার ‘ভারতের আশেপাশের দেশগুলোর কোনোটির সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক নেই’

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবিতে মাঠে নামছে বিএনপি

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে মাঠে নামছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা করছে দলটি। উদ্দেশ্যÑ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের পথে রাখা। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দ্রুত নির্বাচিত সরকার গঠন করা না গেলে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। এ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে আজ শনিবার থেকে সমমনা দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

গত বুধবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বৈঠকে অবিলম্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এতে সংশ্লিষ্ট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তাদের মতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকারের অবস্থান জনগণের চাহিদার পক্ষে। কিন্তু সরকারের কিছু ব্যক্তিবিশেষের মাঝে উচ্চাভিলাষ কাজ করছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের মনে সরকারকে নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করছে। এ বিভ্রান্তি দূর করা এবং সরকারকে নির্বাচনের পথে রাখা দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে দায়িত্ব মনে করছে বিএনপি।

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে। এতে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ সাম্প্রতিক বিষয়াদি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমমনাসহ অন্তত ৫০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বিএনপির। সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার এমন সময়ে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকাল ৪টায় ১২ দল, বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় এলডিপি এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। এতে অংশ নেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু। বাকি দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি পর্যায়ক্রমে বৈঠক করবে।

মহান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী ধারণা এবং পরবর্তীতে তার প্রেস সচিবের তরফে সম্ভাব্য নির্বাচনের যে ধারণা দেওয়া হয়েছে, সেটিকে ‘অস্পষ্ট ও হতাশাজনক’ বলে মনে করে বিএনপি। দলটি মনে করে, ফ্যাসিবাদীদের দেশবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্বাচনই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং সেদিকেই তাদের ফোকাস করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এখনও সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ না বলায় প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারছে না ইসি। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সরকারের ওপর রোডম্যাপের চাপ অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে বড় বড় সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। গত বুধবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা এমন প্রস্তাব দেন।

বিএনপি এখন রাষ্ট্র মেরামতের দলীয় রূপরেখা ৩১ দফাকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করছে। বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার পর এখন জেলাভিত্তিক কর্মশালা চলছে। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হচ্ছেন। জেলা পর্যায়ে এ কার্যক্রম শেষ হলে নির্বাচনের দাবিতে আরও সোচ্চার হবে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এর দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ মাঠে নামতে পারে বিএনপি।

জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্ভাব্য কী কর্মসূচি দেওয়া যায়, এ নিয়েও একাধিক নেতা বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ, সরকার ফেল করলে, সেটি হবে সামগ্রিক ব্যর্থতা। বিএনপি এ সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না। তারা চান, সরকার একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের কাজ সম্পন্ন করুক। যে কারণে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া উচিত হবে না। এ সরকার ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার ফসল। তারা ব্যর্থ হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এ কারণে বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং জনগণ যে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন, সেটি তুলে ধরে সারাদেশে বড় বড় সমাবেশ করা।

বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত দাবির মধ্যে বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে একটা ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সেখানে তিনি বলেন ‘মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’ জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার এ ভাষণ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ নিয়ে দলের কোনো নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেননি। তারা মনে করছেন, সরকার নির্বাচনের জন্য ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত যে সম্ভাব্য সময়ের ধারণা দিয়েছেন, সেটি দীর্ঘ সময়। যেটা এক ধরনের সময়ক্ষেপণ।

বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো প্রাথমিকভাবে এবং প্রধানতম সংস্কার বলে মনে করি। এই সরকারের প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব হলোÑ একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। আর সে জন্য কিছু আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও মাঠপর্যায়ের সংস্কার দরকার আছে। আমরা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এ ক্ষেত্রে সংস্কারে চার থেকে ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বানÑ গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে আমরা যেন কোনো কৌশল প্রয়োগ না করি। ভোটের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ভোটের আয়োজন করতে হবে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেন, সরকার দ্রুত নির্বাচন চায়। তবে এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা সরকারের ওপর অযাচিত চাপ তৈরির চেষ্টা করছে। নির্বাচন বিলম্বের এটিও অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। বিএনপি মনে করে, এ বিষয়টি সরকারকেই মোকাবিলা করতে হবে। ‘পতিত’ ফ্যাসিবাদের দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র এবং জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশার আলোকে ছাত্রদের রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝিয়ে আস্থায় নিতে হবে এবং এটি সরকারের দায়িত্ব।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো তাড়াহুড়া করছেন না। বরং সরকারকে তারা সহায়তা করতে চান এবং সেটা করছেনও। এজন্য সরকারকে তারা যৌক্তিক সময় দিচ্ছেন। তবে গত ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ এখন যেহেতু ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে, তাছাড়া এতদিন নির্বাচনের ওপর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোও যেহেতু আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল; তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন সরকারের উচিত, রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তাহলে দলগুলো একদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারবে, অন্যদিকে সরকারের সংস্কার কার্যক্রমেও সহায়তা করতে পারবে। কারণ, মেয়াদের প্রায় সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও সরকার সুনির্দিষ্টভাবে কী করতে চায়, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। নির্বাচনের ব্যাপারে তারা এখনও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেনি, এটিই দলটির হতাশার জায়গা। কারণ বিএনপি এই সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং নির্বাচনমুখী সংস্কারই প্রধানতম সংস্কার হওয়া উচিত। সেদিকে ফোকাস করে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে খুব দ্রুত আলোচনায় বসা উচিত। কারণ, কয়েক দফা বৈঠক হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন নিয়ে সরকারের এখনও কোনো আলোচনা হয়নি।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের ধারা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, বিএনপি সেটিকে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপি মনে করে, ওই রায়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলেও সেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ফরম্যাট কী হবে, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার প্রয়োজন আছে। নেতারা বলছেন, দেশে পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়, সেটা যাতে না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক মতৈক্য প্রয়োজন; যাতে এই ব্যবস্থাকে আরও গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী করা যায়। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, এবারই সুযোগ বাংলাদেশকে সঠিক পথে নেওয়ার। সেক্ষেত্রে নির্বাচন বিলম্বিত হলে তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

জাকের-শামীমকে যে পুরস্কার দিতে বললেন উইন্ডিজ কিংবদন্তি

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবিতে মাঠে নামছে বিএনপি

আপডেট টাইম : ৩ ঘন্টা আগে

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে মাঠে নামছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা করছে দলটি। উদ্দেশ্যÑ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের পথে রাখা। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দ্রুত নির্বাচিত সরকার গঠন করা না গেলে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। এ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে আজ শনিবার থেকে সমমনা দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

গত বুধবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বৈঠকে অবিলম্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এতে সংশ্লিষ্ট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তাদের মতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকারের অবস্থান জনগণের চাহিদার পক্ষে। কিন্তু সরকারের কিছু ব্যক্তিবিশেষের মাঝে উচ্চাভিলাষ কাজ করছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের মনে সরকারকে নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করছে। এ বিভ্রান্তি দূর করা এবং সরকারকে নির্বাচনের পথে রাখা দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে দায়িত্ব মনে করছে বিএনপি।

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে। এতে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ সাম্প্রতিক বিষয়াদি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমমনাসহ অন্তত ৫০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বিএনপির। সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার এমন সময়ে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকাল ৪টায় ১২ দল, বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় এলডিপি এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। এতে অংশ নেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু। বাকি দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি পর্যায়ক্রমে বৈঠক করবে।

মহান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী ধারণা এবং পরবর্তীতে তার প্রেস সচিবের তরফে সম্ভাব্য নির্বাচনের যে ধারণা দেওয়া হয়েছে, সেটিকে ‘অস্পষ্ট ও হতাশাজনক’ বলে মনে করে বিএনপি। দলটি মনে করে, ফ্যাসিবাদীদের দেশবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্বাচনই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং সেদিকেই তাদের ফোকাস করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এখনও সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ না বলায় প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারছে না ইসি। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সরকারের ওপর রোডম্যাপের চাপ অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে বড় বড় সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। গত বুধবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা এমন প্রস্তাব দেন।

বিএনপি এখন রাষ্ট্র মেরামতের দলীয় রূপরেখা ৩১ দফাকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করছে। বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার পর এখন জেলাভিত্তিক কর্মশালা চলছে। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হচ্ছেন। জেলা পর্যায়ে এ কার্যক্রম শেষ হলে নির্বাচনের দাবিতে আরও সোচ্চার হবে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এর দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ মাঠে নামতে পারে বিএনপি।

জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্ভাব্য কী কর্মসূচি দেওয়া যায়, এ নিয়েও একাধিক নেতা বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ, সরকার ফেল করলে, সেটি হবে সামগ্রিক ব্যর্থতা। বিএনপি এ সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না। তারা চান, সরকার একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের কাজ সম্পন্ন করুক। যে কারণে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া উচিত হবে না। এ সরকার ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার ফসল। তারা ব্যর্থ হলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এ কারণে বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং জনগণ যে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন, সেটি তুলে ধরে সারাদেশে বড় বড় সমাবেশ করা।

বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত দাবির মধ্যে বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে একটা ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সেখানে তিনি বলেন ‘মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’ জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার এ ভাষণ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ নিয়ে দলের কোনো নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেননি। তারা মনে করছেন, সরকার নির্বাচনের জন্য ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত যে সম্ভাব্য সময়ের ধারণা দিয়েছেন, সেটি দীর্ঘ সময়। যেটা এক ধরনের সময়ক্ষেপণ।

বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো প্রাথমিকভাবে এবং প্রধানতম সংস্কার বলে মনে করি। এই সরকারের প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব হলোÑ একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। আর সে জন্য কিছু আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও মাঠপর্যায়ের সংস্কার দরকার আছে। আমরা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এ ক্ষেত্রে সংস্কারে চার থেকে ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বানÑ গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে আমরা যেন কোনো কৌশল প্রয়োগ না করি। ভোটের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ভোটের আয়োজন করতে হবে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেন, সরকার দ্রুত নির্বাচন চায়। তবে এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা সরকারের ওপর অযাচিত চাপ তৈরির চেষ্টা করছে। নির্বাচন বিলম্বের এটিও অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। বিএনপি মনে করে, এ বিষয়টি সরকারকেই মোকাবিলা করতে হবে। ‘পতিত’ ফ্যাসিবাদের দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র এবং জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশার আলোকে ছাত্রদের রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝিয়ে আস্থায় নিতে হবে এবং এটি সরকারের দায়িত্ব।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো তাড়াহুড়া করছেন না। বরং সরকারকে তারা সহায়তা করতে চান এবং সেটা করছেনও। এজন্য সরকারকে তারা যৌক্তিক সময় দিচ্ছেন। তবে গত ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ এখন যেহেতু ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে, তাছাড়া এতদিন নির্বাচনের ওপর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোও যেহেতু আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল; তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন সরকারের উচিত, রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তাহলে দলগুলো একদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারবে, অন্যদিকে সরকারের সংস্কার কার্যক্রমেও সহায়তা করতে পারবে। কারণ, মেয়াদের প্রায় সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও সরকার সুনির্দিষ্টভাবে কী করতে চায়, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। নির্বাচনের ব্যাপারে তারা এখনও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেনি, এটিই দলটির হতাশার জায়গা। কারণ বিএনপি এই সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং নির্বাচনমুখী সংস্কারই প্রধানতম সংস্কার হওয়া উচিত। সেদিকে ফোকাস করে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে খুব দ্রুত আলোচনায় বসা উচিত। কারণ, কয়েক দফা বৈঠক হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন নিয়ে সরকারের এখনও কোনো আলোচনা হয়নি।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের ধারা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, বিএনপি সেটিকে স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপি মনে করে, ওই রায়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলেও সেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ফরম্যাট কী হবে, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার প্রয়োজন আছে। নেতারা বলছেন, দেশে পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়, সেটা যাতে না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক মতৈক্য প্রয়োজন; যাতে এই ব্যবস্থাকে আরও গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী করা যায়। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, এবারই সুযোগ বাংলাদেশকে সঠিক পথে নেওয়ার। সেক্ষেত্রে নির্বাচন বিলম্বিত হলে তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।