অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক এমপি-প্রতিমন্ত্রী ও উপসহকারী প্রকৌশলীর নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এ ছাড়া একই দিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউরের রিমান্ড এবং দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক ক্রিকেটার দুর্জয়ের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
তাদের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে পৃথক দুটি মামলা করা হয় বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।
প্রথম মামলায় আসামি সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১২ কোটি ৮১ লাখ ১৪ হাজার ৩৮৯ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া তার নিজ নামের ৯টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ২৭৭ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
দ্বিতীয় মামলায় মেহের আফরোজের বিরুদ্ধে সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৬ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া নিজ নামে ৯টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ১২ কোটি ৩২ লাখ ১৯ হাজার ১১৭ টাকা জমা হওয়ার তথ্য মিলেছে।
সাবেক ক্রিকেটার দুর্জয়ের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ : জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে লালমাটিয়ার ২ হাজার ৫২৩ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, পূর্বাচলের ৩ কাঠার প্লট, ভূমি ও তিনটি গাড়ি এবং ১০টি ব্যাংক হিসাব ও দুটি বীমা পলিসির হিসাব রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক তাপস ভট্টাচার্য্যরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
অবৈধ সম্পদের মামলায় আসামি স্ত্রীসহ সাবেক এমপি সরওয়ার : এদিকে সাড়ে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি আ ক ম সরওয়ার জাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করা হয়েছে বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন। দুদক জানায়, সরওয়ার জাহানের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে প্রথম মামলায়। অন্যদিকে তার স্ত্রী মাহমুদা সিদ্দিকার নামেও পৃথক মামলা করেছে দুদক। ওই মামলায় স্ত্রী সঙ্গে আসামি হয়েছেন সরওয়ার জাহান। মাহমুদার নামে ১ কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা : আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার অপরাধে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এস্টিমেটর (প্রাক্কলনিক) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন সিকদারের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম মামলা করেছে দুদক। মামলায় তার স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার দৈনিক আমাদের সময়ে ‘নিজেরটা ঠিক রেখে বরাদ্দপত্র দেন এস্টিমেটর আনোয়ার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেখানে তার আয়বহির্ভূত সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
এনবিআরের মতিউরের রিমান্ড আবেদন : স্ত্রীকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করার মামলায় ‘ছাগলকা-ে’ আলোচনায় আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে দুদক। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব আগামী ২৭ জানুয়ারি আসামির উপস্থিতিতে শুনানির দিন ঠিক করেছেন। গত ৬ জানুয়ারি মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে দুদক।
দুর্নীতির অভিযোগ এনসিটিবি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রিট : দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন এ আবেদন করেন। আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন, ছাপার কাজে ?প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি টাকা ব্যয় করেছে এনসিটিবি। সরকারের অর্থ অপচয় হয়েছে এবং এখানে দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, মামলা বা রিটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আইনি বিষয় আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে।