ঢাকা , বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন মামলায় ফেঁসে যাচ্ছে ভণ্ডপীর

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  এবার নতুন করে আরেকটি মামলায় ফেঁসে যাচ্ছে ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ার। দেশের প্রচলিত আইন না মেনে ‘এএইচপি’ নামে অনলাইন টেলিভিশন চালাতো এ ভণ্ডপীর। এজন্য তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের হতে যাচ্ছে।

৬ আগস্ট রোববার এ ব্যাপারে কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল বলেন, ‘এএইচপি’ নামে অনলাইন টেলিভিশন ছিলো আহসান হাবিব পিয়ারের প্রতারণার অন্যতম মাধ্যম। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করে প্রতারণা করেছে। দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী এভাবে টেলিভিশন চালানো যায় না। এজন্য তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হবে।

সম্প্রতি, প্রতারিত নারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জ্বিন ভূত তাড়ানোর নাম করে পর্নো ভিডিও ধারণকারী ও ভণ্ড পীর আহসান হাবিব পিয়ারকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। পরে তাকে আদালতে পাঠালে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের কুকর্মের কথা শিকার করে পিয়ার।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকায় গাড়ি-বাড়িসহ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছে পিয়ার।

প্রসঙ্গত, ‘ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ার শতাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক মিলন করেছে’ এমন ১০০টি ভিডিও পেয়েছে পুলিশ। ইমো-তে অসংখ্য নারীর সঙ্গে পিয়ারের ‘সেক্সুয়াল চ্যাটিং’ ও ভিডিও ক্লিপও জব্দ হয়েছে। সে ইসলাম প্রচারের নামে বিদেশ থেকে লাখ লাখ টাকা এনেছে।

দুই দিনের রিমান্ডে পুলিশকে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে এ ভণ্ডপীর।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ইসলাম প্রচারের নামে সাহায্য হিসেবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিকাশের মাধ্যমেও অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। দুই দিনের রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিতে শুরু করেছে ভণ্ডপীর পিয়ার। তার গ্রেপ্তারের পর বেশ কয়েকজন প্রতারিত নারী তথ্য দিতে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আসেন, এমনকি ফোনেও তথ্য দিচ্ছেন।

পিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এমন একজন দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়ার জ্বিন ভূত তাড়ানোর নাম করে ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে শতাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। এ কাজে তার বাসা ও উত্তরার কয়েকটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করেছে।

ওই কর্মকর্তারা জানান, উত্তরায় ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া নিয়ে সে নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে ও কৌশলে ভিডিও ধারণ করেছে। ভিডিওগুলো পরবর্তীতে তার কম্পিউটার ও মোবাইলে রাখে।

গ্রেপ্তারের সময় কিছু ভিডিও উদ্ধার হলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর সে আরো ভিডিও ধারণের তথ্য দেয়। পরবর্তীতে ভিডিওগুলো গোয়েন্দাদের দেয়।

গোয়েন্দাদের এক প্রশ্নে পিয়ার জানায়, বাসার পাশাপাশি উত্তরায় ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া নিয়ে সে এ কাজ করেছে। ভিডিও ধারণ করা নারীদের বয়স সবার ৩০ এর নিচে।

এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়ার তার ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য দেয়। গোয়েন্দারা তার অ্যাকাউন্টে গত কয়েকমাসে ২০ লাখ টাকার লেনদেন দেখতে পান। তার অ্যাকাউন্টে আসা টাকা দেশের বিভিন্ন এলাকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো থেকে আসা। ইসলাম প্রচারের নামে প্রবাসী ও মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিকরা তার অ্যাকাউন্টে টাকাগুলো পাঠিয়েছে। এছাড়াও বিকাশের মাধ্যমেও প্রবাসী ও দেশের লোকদের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে। মূলত ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও ছেড়ে লোকজনের সহানুভূতি অর্জন করে সে। আর এভাবেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সব মিলিয়ে ৩০ লাখের বেশি টাকা লেনদেন করেছে গত কয়েকমাসে।

গোয়েন্দারা বলেন, তার আরো কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কি না, জানার চেষ্টা চলছে।

নাটোরের এক প্রতারিত তরুণী এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি সৌদি আরবে থাকার সময় ফেসবুকের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয়। ফেসবুকে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে সে প্রেমের অফার দেয়। ইসলাম ও নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেয়।

তিনি বলেন, বুধবার তার গ্রেপ্তারের খবর শোনার পর তিনি গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, সে আসলেই একজন ভণ্ড। ইসলামের লেবাসে তার মতো অসংখ্য নারীর সঙ্গে সে প্রতারণা করেছে। তার শাস্তিও দাবি করেন তিনি।

প্রতারিত আরেক নারী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর সে ইসলাম প্রচারের কথা বলে। নিজেকে অসহায় উল্লেখ করে তার কাছ থেকেও টাকা চায়। তিনি ৪ মাসে তাকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনিও পিয়ারের শাস্তি দাবি করেন।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, তার কাছ থেকে প্রতারণার সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নিজেকে ইসলামের লেবাসে এভাবে প্রতারণার ঘটনা বিরল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা তার কাছ থেকে ১০০টির বেশি পর্নো ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছি। প্রত্যেকটি ভিডিওর পৃথক নারীর। এছাড়াও তার ইমো-তে ‘সেক্সুয়াল চ্যাটিং’ পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, তার গ্রেপ্তারের খবরে অসংখ্য নারী অভিযোগ করছেন। আমরা প্রতারিত নারীদের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

নতুন মামলায় ফেঁসে যাচ্ছে ভণ্ডপীর

আপডেট টাইম : ০২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  এবার নতুন করে আরেকটি মামলায় ফেঁসে যাচ্ছে ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ার। দেশের প্রচলিত আইন না মেনে ‘এএইচপি’ নামে অনলাইন টেলিভিশন চালাতো এ ভণ্ডপীর। এজন্য তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের হতে যাচ্ছে।

৬ আগস্ট রোববার এ ব্যাপারে কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল বলেন, ‘এএইচপি’ নামে অনলাইন টেলিভিশন ছিলো আহসান হাবিব পিয়ারের প্রতারণার অন্যতম মাধ্যম। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করে প্রতারণা করেছে। দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী এভাবে টেলিভিশন চালানো যায় না। এজন্য তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হবে।

সম্প্রতি, প্রতারিত নারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জ্বিন ভূত তাড়ানোর নাম করে পর্নো ভিডিও ধারণকারী ও ভণ্ড পীর আহসান হাবিব পিয়ারকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। পরে তাকে আদালতে পাঠালে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুদিনের রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের কুকর্মের কথা শিকার করে পিয়ার।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকায় গাড়ি-বাড়িসহ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছে পিয়ার।

প্রসঙ্গত, ‘ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ার শতাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক মিলন করেছে’ এমন ১০০টি ভিডিও পেয়েছে পুলিশ। ইমো-তে অসংখ্য নারীর সঙ্গে পিয়ারের ‘সেক্সুয়াল চ্যাটিং’ ও ভিডিও ক্লিপও জব্দ হয়েছে। সে ইসলাম প্রচারের নামে বিদেশ থেকে লাখ লাখ টাকা এনেছে।

দুই দিনের রিমান্ডে পুলিশকে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে এ ভণ্ডপীর।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ইসলাম প্রচারের নামে সাহায্য হিসেবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিকাশের মাধ্যমেও অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। দুই দিনের রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিতে শুরু করেছে ভণ্ডপীর পিয়ার। তার গ্রেপ্তারের পর বেশ কয়েকজন প্রতারিত নারী তথ্য দিতে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আসেন, এমনকি ফোনেও তথ্য দিচ্ছেন।

পিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এমন একজন দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়ার জ্বিন ভূত তাড়ানোর নাম করে ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে শতাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। এ কাজে তার বাসা ও উত্তরার কয়েকটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করেছে।

ওই কর্মকর্তারা জানান, উত্তরায় ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া নিয়ে সে নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে ও কৌশলে ভিডিও ধারণ করেছে। ভিডিওগুলো পরবর্তীতে তার কম্পিউটার ও মোবাইলে রাখে।

গ্রেপ্তারের সময় কিছু ভিডিও উদ্ধার হলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর সে আরো ভিডিও ধারণের তথ্য দেয়। পরবর্তীতে ভিডিওগুলো গোয়েন্দাদের দেয়।

গোয়েন্দাদের এক প্রশ্নে পিয়ার জানায়, বাসার পাশাপাশি উত্তরায় ঘণ্টা চুক্তিতে রুম ভাড়া নিয়ে সে এ কাজ করেছে। ভিডিও ধারণ করা নারীদের বয়স সবার ৩০ এর নিচে।

এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়ার তার ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য দেয়। গোয়েন্দারা তার অ্যাকাউন্টে গত কয়েকমাসে ২০ লাখ টাকার লেনদেন দেখতে পান। তার অ্যাকাউন্টে আসা টাকা দেশের বিভিন্ন এলাকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো থেকে আসা। ইসলাম প্রচারের নামে প্রবাসী ও মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিকরা তার অ্যাকাউন্টে টাকাগুলো পাঠিয়েছে। এছাড়াও বিকাশের মাধ্যমেও প্রবাসী ও দেশের লোকদের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে। মূলত ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও ছেড়ে লোকজনের সহানুভূতি অর্জন করে সে। আর এভাবেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সব মিলিয়ে ৩০ লাখের বেশি টাকা লেনদেন করেছে গত কয়েকমাসে।

গোয়েন্দারা বলেন, তার আরো কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কি না, জানার চেষ্টা চলছে।

নাটোরের এক প্রতারিত তরুণী এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি সৌদি আরবে থাকার সময় ফেসবুকের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয়। ফেসবুকে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে সে প্রেমের অফার দেয়। ইসলাম ও নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেয়।

তিনি বলেন, বুধবার তার গ্রেপ্তারের খবর শোনার পর তিনি গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি বলেন, সে আসলেই একজন ভণ্ড। ইসলামের লেবাসে তার মতো অসংখ্য নারীর সঙ্গে সে প্রতারণা করেছে। তার শাস্তিও দাবি করেন তিনি।

প্রতারিত আরেক নারী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর সে ইসলাম প্রচারের কথা বলে। নিজেকে অসহায় উল্লেখ করে তার কাছ থেকেও টাকা চায়। তিনি ৪ মাসে তাকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনিও পিয়ারের শাস্তি দাবি করেন।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, তার কাছ থেকে প্রতারণার সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নিজেকে ইসলামের লেবাসে এভাবে প্রতারণার ঘটনা বিরল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা তার কাছ থেকে ১০০টির বেশি পর্নো ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছি। প্রত্যেকটি ভিডিওর পৃথক নারীর। এছাড়াও তার ইমো-তে ‘সেক্সুয়াল চ্যাটিং’ পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, তার গ্রেপ্তারের খবরে অসংখ্য নারী অভিযোগ করছেন। আমরা প্রতারিত নারীদের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছি।