ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈমান মূল ভিত্তি হল ইসলামের

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাঁচটি রোকন বা স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। ঈমান তার মধ্যে একটি। অন্য চারটি হচ্ছে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। এ পাঁচটি রোকনের মধ্যে ঈমানের গুরুত্ব সর্বাধিক। বলা যেতে পারে, ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান। ঈমান না থাকলে ধর্মের কিছুই থাকে না। ঈমান না থাকলে অন্য রোকনগুলো গুরুত্বহীন, এমনকি অসম্পূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত এগুলো কিছুটা বাহ্যিক অর্থাৎ দৃশ্যমান। এর অর্থ এগুলো পালন করলে তা দেখা যায়। কিন্তু ঈমান সম্পূর্ণ অন্তরের ব্যাপার; তাই এতে লৌকিকতার বিন্দুমাত্র স্পর্শ নেই, যা অন্যগুলোয় থাকতে পারে।
‘ঈমান’ শব্দের অর্থ বিশ্বাস। প্রাথমিক ও মূল বিশ্বাস স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ ও তাঁর নবীর (সা.) ওপর। কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রাসুল এ দুইটি বাক্যে সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের প্রাথমিক শর্ত। এ ছাড়া আরও কতকগুলো বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থপন করা ঈমানের অঙ্গ। সেগুলো হচ্ছে।

ফেরেশতাদের ওপর বিশ্বাস
আল্লাহর মাখলুকাতে অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছেন। তারা পাপ, পানাহার ও নিদ্রামুক্ত। আল্লাহর নির্দেশে তারা বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত। তাদের মধ্যে চারজন ফেরেশতা প্রধান। তারা হলেন হজরত জিবরাঈল (আ.), যার দায়িত্ব নবী-রাসুলদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া। হজরত মিকাঈল (আ.), যার দায়িত্ব সব প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করা। হজরত আজরাঈল (আ.), যার দায়িত্ব সব প্রাণির রুহ কবজ করা এবং হজরত ইসরাফিল (আ.), যার দায়িত্ব নির্ধরিত সময়ে আল্লাহর হুকুমে শিঙ্গায় ফুঁক দিয়ে কেয়ামত সংঘটিত করা। এছাড়া আরও কয়েকজন ফেরেশতার মধ্যে মানুষের পাপ-পুণ্য লিপিবদ্ধ করার দায়িত্বে নিয়োজিত কিরামান কাতিবিন, মৃত্যুর পর কবরের মধ্যে সওয়াল করার দায়িত্বে নিয়োজিত মুনকির নকির প্রমুখ। এই ফেরেশতাদের সাধারণ চোখে দেখা যায় না। তবু তাঁদের অস্তিত্ব ও কর্মের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অঙ্গ।

আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস
হজরত জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে নবী-রাসুলদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত বাণীগুলো আসমানি কিতাব নামে অভিহিত। মোট ১০৪টি আসমানি কিতাবের মধ্যে ৪টি প্রধান। হজরত মুসা (আ.) এর ওপর নাজিল হয় তাওরাত। হজরত দাউদ (আ.) এর ওপর নাজিল হয় জাবুর। হজরত ঈসা (আ.) এর ওপর নাজিল হয় ইঞ্জিল এবং সর্বশেষ হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর নাজিল হয় আল কোরআন। কোরআন শরিফ নাজিলের পর পূর্ববর্তী সব কিতাব আল্লাহ কর্তৃক বাতিল ঘোষিত হয়ে যায়।

নবী-রাসুলদের ওপর বিশ্বাস
পৃথিবী সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজার, মতান্তরে ২ লাখ ৩৬ হাজার নবী পৃথিবীতে আগমন করেন। তাদের কয়েকজন নিজস্ব শরিয়তধারী রাসুল। আর আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল ও সর্বশেষ নবী। এ তথ্যে পুরোপুরি বিশ্বাস রাখতে হবে। এটি ঈমানের অন্যতম শর্ত।

কেয়ামতের ওপর বিশ্বাস
আল্লাহর সৃষ্ট এ পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। কেয়ামতের সৃষ্টি হবে। আল্লাহর নির্দেশে সব মৃত মানুষ আবার জীবিত হবে। তাদের পৃথিবীতে কৃতকর্মের বিচার হবে। পাপীরা দোজখে যাবে। পুণ্যবানরা পরম শান্তিময় বেহেশতের চিরবাসিন্দা হবে। এসব তথ্যে সামান্যতম অবিশ্বাস থাকলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
ঈমান প্রতিষ্ঠার পথ একটি নয়, বহু। হাদিস শরিফে আছে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শাখা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস (কাঁটা) সরিয়ে ফেলা।’ অর্থাৎ যে কোনো জনহিতকর মহৎ কর্মই ঈমানবিশেষ।
মোটামুটি ৭০টি কাজের মাধ্যমে ঈমান অর্জিত হতে পারে। এসব কাজকে পদ্ধতিগতভাবে বিভিন্ন অংশে ভাগ করা যায়। যেমন ঈমানের কিছু কার্যপ্রক্রিয়া আছে, যা কখনই দৃশ্যমান নয়, শুধু অন্তর দিয়ে সমাধা করত হয়। এর সংখ্যা ৩০টি। যেমন ১. আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা; ২. আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করা; ৩. সব ফেরেশতা ও তাদের কার্যবিধি বিষয়ে বিশ্বাস রাখা; ৪. আল্লাহর আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস রাখা; ৫. রাসুল ও নবীদের ওপর বিশ্বাস রাখা; ৬. কেয়ামতে বিশ্বাস রাখা; ৭. অন্তরে আল্লাহকে ভয় করা; ৮. সব কাজে আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করা; ৯. আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ভোগ করে শোকর গুজার করা; ১০. সৎকাজের পুরস্কার বেহেশতে এ কথা বিশ্বাস করা; ১১. অসৎকাজের শাস্তি দোজখে হবে বলে বিশ্বাস করা; ১২. অন্তরে আল্লাহর প্রতি মহব্বত রাখা; ১৩. অন্তরে রাসুল (সা.) এর প্রতি মহব্বত রাখা; ১৪. ইসলাম ধর্মের প্রতি অন্তরে মহব্বত রাখা; ১৫. মন্দ কাজে মনে মনে তওবা করা; ১৬. প্রতিশ্রুতি পালন করা; ১৭. হিংসা বর্জন করা; ১৮. অন্যের ক্ষতি কামনা থেকে বিরত থাকা; ১৯. দয়াশীল হওয়া; ২০. আল্লাহর দেয়া তকদিরে বিশ্বাস করা; ২১. সর্বকর্মে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে ধৈর্য ধারণ করা; ২২. অন্তরে নম্রতা পোষণ করা; ২৩. পার্থিব মায়ায় মোহগ্রস্ত না হওয়া; ২৪. চোগলখুরি থেকে বিরত থাকা; ২৫. ক্রোধ দমন করা; ২৬. আল্লাহর দেওয়া যে কোনো বিধানে সন্তুষ্ট থাকা; ২৭. সবার প্রতি বন্ধু ভাব পোষণ করা; ২৮. অন্তরে লজ্জাশীলতার মনোভাব পোষণ করা; ২৯. সব কাজ আল্লাহর নামে শুরু করা এবং ৩০. সর্বদা অন্যের উপকার সাধনে ব্রতী হওয়া। এগুলো সম্পূর্ণ অন্তরের ঈমান।
জবানের দ্বারা কিছু ঈমান অর্জিত হয়। যেমন ১. কলেমা পাঠ করা; ২. কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা; ৩. ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করা; ৪. অন্যকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা; ৫. আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা, ৬. আল্লাহর নাম জিকির করা; ৭. অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে নিজকে বিরত রাখা।
বাহ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা কিছু কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে ঈমান অর্জিত হয়। এর মধ্যে ১৬টি কাজ নিজে নিজেই করতে হয়। এতে অন্যের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। তা হলো ১. সর্বদা নিজকে পাকসাফ রাখা; ২. নিয়মিত নামাজ পড়া; ৩. ফরজ রোজা করা; ৪. জাকাত দেওয়া (প্রযোজ্য ব্যক্তির জন্য); ৫. হজ করা (সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য); ৬. ধর্মপ্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করা; ৭. রমজান মাসে এতেকাফ করা; ৮. কোনো অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করা; ৯. মান্নত করলে তা পূরণ করা; ১০. লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা; ১১. সত্য সাক্ষ্য প্রদান করা; ১২. কোরবানি করা (সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য); ১৩. ব্যবসায় সততা রক্ষা করা; ১৪. জানাজায় অংশগ্রহণ করা ও প্রয়োজনে তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা; ১৫. কাফফারা আদায় করা এবং ১৬. শিগগির ঋণ পরিশোধ করা।
এছাড়া কিছু কিছু কাজ আছে, যা অন্য লোকদের সঙ্গে সম্পাদনের মাধ্যমে ঈমান সুরক্ষিত হয়। এ ধরনের কাজের সংখ্যা ৬টি। যথা ১. যৌবনে বিয়ের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষা করা; ২. বাবা-মায়ের খেদমত করা; ৩. বৈধ পদ্ধতিতে সন্তানাদি লালন-পালন করা; ৪. পরিবারের হক আদায় করা; ৫. আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং ৬. সংসার পরিচালনায় বৈধতা বজায় রাখা।
এছাড়া আরও ১৮টি কাজ রয়েছে, যা সর্বসাধারণের সঙ্গে সম্পাদন করা ঈমানের অঙ্গ। সেগুলো হচ্ছে ১. সৎকর্মে ঐক্যবদ্ধ থাকা; ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি অনুগত থাকা; ৩. ন্যায় বিচার করা; ৪. দ্বীনের পথে জিহাদ করা; ৫. প্রতিবেশীর প্রতি সুসম্পর্ক বজায় বাখা; ৬. ব্যবসায়ে অংশীদারদের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া; ৭ অন্যের সৎকর্মে সহায়তা করা; ৮. ইসলামের রাষ্ট্রীয় দ-বিধি কায়েম করা; ৯. সম্পদের সদ্ব্যবহার করা; ১০. অন্যের হাঁচির জবাব দেয়া; ১১. সৎকর্মে আদেশ ও অসৎকর্মে বাধা প্রদান করা; ১২. সালামের জবাব দেওয়া; ১৩. অশোভনীয় রঙ-তামাশা থেকে দূরে থাকা; ১৪. অভাবীকে ঋণ প্রদান করা; ১৫. কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট না দেওয়া; ১৬. অন্যের আমানতের খেয়ানত না করা; ১৭. আত্মকলহ দীর্ঘস্থায়ী না করা এবং ১৮. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (কাঁটা) সরিয়ে ফেলা। মোটামুটি এই ৭০টি কাজ সম্পাদন করতে পারলে ঈমান অর্জিত ও সুরক্ষিত হতে পারে।
তাই প্রকৃত মুসলমান হওয়ার জন্য, আলাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদের সবকিছুর আগে শুদ্ধ ঈমানদার হতে হবে। আর তার জন্য এ নিবন্ধে আলোচিত গুণগুলোর অনুশীলন প্রয়োজন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈমান মূল ভিত্তি হল ইসলামের

আপডেট টাইম : ০২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাঁচটি রোকন বা স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত। ঈমান তার মধ্যে একটি। অন্য চারটি হচ্ছে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। এ পাঁচটি রোকনের মধ্যে ঈমানের গুরুত্ব সর্বাধিক। বলা যেতে পারে, ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান। ঈমান না থাকলে ধর্মের কিছুই থাকে না। ঈমান না থাকলে অন্য রোকনগুলো গুরুত্বহীন, এমনকি অসম্পূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত এগুলো কিছুটা বাহ্যিক অর্থাৎ দৃশ্যমান। এর অর্থ এগুলো পালন করলে তা দেখা যায়। কিন্তু ঈমান সম্পূর্ণ অন্তরের ব্যাপার; তাই এতে লৌকিকতার বিন্দুমাত্র স্পর্শ নেই, যা অন্যগুলোয় থাকতে পারে।
‘ঈমান’ শব্দের অর্থ বিশ্বাস। প্রাথমিক ও মূল বিশ্বাস স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ ও তাঁর নবীর (সা.) ওপর। কলেমা ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রাসুল এ দুইটি বাক্যে সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের প্রাথমিক শর্ত। এ ছাড়া আরও কতকগুলো বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থপন করা ঈমানের অঙ্গ। সেগুলো হচ্ছে।

ফেরেশতাদের ওপর বিশ্বাস
আল্লাহর মাখলুকাতে অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছেন। তারা পাপ, পানাহার ও নিদ্রামুক্ত। আল্লাহর নির্দেশে তারা বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত। তাদের মধ্যে চারজন ফেরেশতা প্রধান। তারা হলেন হজরত জিবরাঈল (আ.), যার দায়িত্ব নবী-রাসুলদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া। হজরত মিকাঈল (আ.), যার দায়িত্ব সব প্রাণীর জীবিকার ব্যবস্থা করা। হজরত আজরাঈল (আ.), যার দায়িত্ব সব প্রাণির রুহ কবজ করা এবং হজরত ইসরাফিল (আ.), যার দায়িত্ব নির্ধরিত সময়ে আল্লাহর হুকুমে শিঙ্গায় ফুঁক দিয়ে কেয়ামত সংঘটিত করা। এছাড়া আরও কয়েকজন ফেরেশতার মধ্যে মানুষের পাপ-পুণ্য লিপিবদ্ধ করার দায়িত্বে নিয়োজিত কিরামান কাতিবিন, মৃত্যুর পর কবরের মধ্যে সওয়াল করার দায়িত্বে নিয়োজিত মুনকির নকির প্রমুখ। এই ফেরেশতাদের সাধারণ চোখে দেখা যায় না। তবু তাঁদের অস্তিত্ব ও কর্মের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অঙ্গ।

আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস
হজরত জিবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে নবী-রাসুলদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত বাণীগুলো আসমানি কিতাব নামে অভিহিত। মোট ১০৪টি আসমানি কিতাবের মধ্যে ৪টি প্রধান। হজরত মুসা (আ.) এর ওপর নাজিল হয় তাওরাত। হজরত দাউদ (আ.) এর ওপর নাজিল হয় জাবুর। হজরত ঈসা (আ.) এর ওপর নাজিল হয় ইঞ্জিল এবং সর্বশেষ হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর নাজিল হয় আল কোরআন। কোরআন শরিফ নাজিলের পর পূর্ববর্তী সব কিতাব আল্লাহ কর্তৃক বাতিল ঘোষিত হয়ে যায়।

নবী-রাসুলদের ওপর বিশ্বাস
পৃথিবী সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজার, মতান্তরে ২ লাখ ৩৬ হাজার নবী পৃথিবীতে আগমন করেন। তাদের কয়েকজন নিজস্ব শরিয়তধারী রাসুল। আর আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল ও সর্বশেষ নবী। এ তথ্যে পুরোপুরি বিশ্বাস রাখতে হবে। এটি ঈমানের অন্যতম শর্ত।

কেয়ামতের ওপর বিশ্বাস
আল্লাহর সৃষ্ট এ পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। কেয়ামতের সৃষ্টি হবে। আল্লাহর নির্দেশে সব মৃত মানুষ আবার জীবিত হবে। তাদের পৃথিবীতে কৃতকর্মের বিচার হবে। পাপীরা দোজখে যাবে। পুণ্যবানরা পরম শান্তিময় বেহেশতের চিরবাসিন্দা হবে। এসব তথ্যে সামান্যতম অবিশ্বাস থাকলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
ঈমান প্রতিষ্ঠার পথ একটি নয়, বহু। হাদিস শরিফে আছে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শাখা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস (কাঁটা) সরিয়ে ফেলা।’ অর্থাৎ যে কোনো জনহিতকর মহৎ কর্মই ঈমানবিশেষ।
মোটামুটি ৭০টি কাজের মাধ্যমে ঈমান অর্জিত হতে পারে। এসব কাজকে পদ্ধতিগতভাবে বিভিন্ন অংশে ভাগ করা যায়। যেমন ঈমানের কিছু কার্যপ্রক্রিয়া আছে, যা কখনই দৃশ্যমান নয়, শুধু অন্তর দিয়ে সমাধা করত হয়। এর সংখ্যা ৩০টি। যেমন ১. আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা; ২. আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করা; ৩. সব ফেরেশতা ও তাদের কার্যবিধি বিষয়ে বিশ্বাস রাখা; ৪. আল্লাহর আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস রাখা; ৫. রাসুল ও নবীদের ওপর বিশ্বাস রাখা; ৬. কেয়ামতে বিশ্বাস রাখা; ৭. অন্তরে আল্লাহকে ভয় করা; ৮. সব কাজে আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করা; ৯. আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ভোগ করে শোকর গুজার করা; ১০. সৎকাজের পুরস্কার বেহেশতে এ কথা বিশ্বাস করা; ১১. অসৎকাজের শাস্তি দোজখে হবে বলে বিশ্বাস করা; ১২. অন্তরে আল্লাহর প্রতি মহব্বত রাখা; ১৩. অন্তরে রাসুল (সা.) এর প্রতি মহব্বত রাখা; ১৪. ইসলাম ধর্মের প্রতি অন্তরে মহব্বত রাখা; ১৫. মন্দ কাজে মনে মনে তওবা করা; ১৬. প্রতিশ্রুতি পালন করা; ১৭. হিংসা বর্জন করা; ১৮. অন্যের ক্ষতি কামনা থেকে বিরত থাকা; ১৯. দয়াশীল হওয়া; ২০. আল্লাহর দেয়া তকদিরে বিশ্বাস করা; ২১. সর্বকর্মে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে ধৈর্য ধারণ করা; ২২. অন্তরে নম্রতা পোষণ করা; ২৩. পার্থিব মায়ায় মোহগ্রস্ত না হওয়া; ২৪. চোগলখুরি থেকে বিরত থাকা; ২৫. ক্রোধ দমন করা; ২৬. আল্লাহর দেওয়া যে কোনো বিধানে সন্তুষ্ট থাকা; ২৭. সবার প্রতি বন্ধু ভাব পোষণ করা; ২৮. অন্তরে লজ্জাশীলতার মনোভাব পোষণ করা; ২৯. সব কাজ আল্লাহর নামে শুরু করা এবং ৩০. সর্বদা অন্যের উপকার সাধনে ব্রতী হওয়া। এগুলো সম্পূর্ণ অন্তরের ঈমান।
জবানের দ্বারা কিছু ঈমান অর্জিত হয়। যেমন ১. কলেমা পাঠ করা; ২. কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা; ৩. ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করা; ৪. অন্যকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা; ৫. আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা, ৬. আল্লাহর নাম জিকির করা; ৭. অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে নিজকে বিরত রাখা।
বাহ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা কিছু কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে ঈমান অর্জিত হয়। এর মধ্যে ১৬টি কাজ নিজে নিজেই করতে হয়। এতে অন্যের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। তা হলো ১. সর্বদা নিজকে পাকসাফ রাখা; ২. নিয়মিত নামাজ পড়া; ৩. ফরজ রোজা করা; ৪. জাকাত দেওয়া (প্রযোজ্য ব্যক্তির জন্য); ৫. হজ করা (সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য); ৬. ধর্মপ্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করা; ৭. রমজান মাসে এতেকাফ করা; ৮. কোনো অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করা; ৯. মান্নত করলে তা পূরণ করা; ১০. লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা; ১১. সত্য সাক্ষ্য প্রদান করা; ১২. কোরবানি করা (সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য); ১৩. ব্যবসায় সততা রক্ষা করা; ১৪. জানাজায় অংশগ্রহণ করা ও প্রয়োজনে তার দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা; ১৫. কাফফারা আদায় করা এবং ১৬. শিগগির ঋণ পরিশোধ করা।
এছাড়া কিছু কিছু কাজ আছে, যা অন্য লোকদের সঙ্গে সম্পাদনের মাধ্যমে ঈমান সুরক্ষিত হয়। এ ধরনের কাজের সংখ্যা ৬টি। যথা ১. যৌবনে বিয়ের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষা করা; ২. বাবা-মায়ের খেদমত করা; ৩. বৈধ পদ্ধতিতে সন্তানাদি লালন-পালন করা; ৪. পরিবারের হক আদায় করা; ৫. আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং ৬. সংসার পরিচালনায় বৈধতা বজায় রাখা।
এছাড়া আরও ১৮টি কাজ রয়েছে, যা সর্বসাধারণের সঙ্গে সম্পাদন করা ঈমানের অঙ্গ। সেগুলো হচ্ছে ১. সৎকর্মে ঐক্যবদ্ধ থাকা; ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি অনুগত থাকা; ৩. ন্যায় বিচার করা; ৪. দ্বীনের পথে জিহাদ করা; ৫. প্রতিবেশীর প্রতি সুসম্পর্ক বজায় বাখা; ৬. ব্যবসায়ে অংশীদারদের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া; ৭ অন্যের সৎকর্মে সহায়তা করা; ৮. ইসলামের রাষ্ট্রীয় দ-বিধি কায়েম করা; ৯. সম্পদের সদ্ব্যবহার করা; ১০. অন্যের হাঁচির জবাব দেয়া; ১১. সৎকর্মে আদেশ ও অসৎকর্মে বাধা প্রদান করা; ১২. সালামের জবাব দেওয়া; ১৩. অশোভনীয় রঙ-তামাশা থেকে দূরে থাকা; ১৪. অভাবীকে ঋণ প্রদান করা; ১৫. কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট না দেওয়া; ১৬. অন্যের আমানতের খেয়ানত না করা; ১৭. আত্মকলহ দীর্ঘস্থায়ী না করা এবং ১৮. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (কাঁটা) সরিয়ে ফেলা। মোটামুটি এই ৭০টি কাজ সম্পাদন করতে পারলে ঈমান অর্জিত ও সুরক্ষিত হতে পারে।
তাই প্রকৃত মুসলমান হওয়ার জন্য, আলাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদের সবকিছুর আগে শুদ্ধ ঈমানদার হতে হবে। আর তার জন্য এ নিবন্ধে আলোচিত গুণগুলোর অনুশীলন প্রয়োজন।