ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা সংকটের অস্পষ্টতা কোনো ক্ষেত্রেই

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রোহিঙ্গা সংকটের অস্পষ্টতা কোনো ক্ষেত্রেই
রাজনীতিবিদ বা অ্যাক্টিভিস্টরা যেন নিজেদের স্বার্থে রোহিঙ্গা ইস্যুকে ব্যবহার না করেন। তাহলে ২০১২, ১৯৯২ এমনকি ১৯৭৮ সালের আগে যেসব সহিংসতা হয়েছিল, সেগুলোর মতো সহিংসতা
শুধু বাড়তেই থাকবে আর সমাধানের উদ্যোগ ব্যর্থ হবে
রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনাবাহিনীর রাগ ও ক্ষোভ খুবই স্পষ্ট। সরল চোখে দেখলে, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের অবস্থা কালো আর সাদা বলে মনে হয়। একটি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী আছে, যারা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম। এরা দিনের পর দিন নির্মমভাবে নিপীড়িত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৌদ্ধ এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীই অত্যাচারী আর রোহিঙ্গারা হচ্ছে তার শিকার।
এ দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্ভেজাল তথ্য ও সঠিক বিবরণীর অভাব সবসময়ই ছিল। সেই অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসব তথ্য প্রচার করা হয়। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ প্রমাণ করাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ সব ছবি ভাসছে। এ ছবির অনেকগুলো আবার মিথ্যা সংবাদ বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রচারের জন্য বিশ্বের অন্যান্য জায়গার দ্বন্দ্ব-সহিংসতার ছবিও ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের কার্যনির্বাহী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে সরকার কোনো ধরনের অন্যায় কাজকে অস্বীকার করে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে অঙ্গীকারবন্ধ।
বিশ্বের রাজনীতিবিদ, নানা সংগঠন এবং তারকারা রাখাইন সংকটের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেসঙ্গে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রপতি জোকোভি, চেচনিয়ার রমজান কাদিরভ এবং তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের মতো কিছু রাজনীতিবিদ রোহিঙ্গাদের কষ্টের চেয়ে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এজেন্ডা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। আর এভাবেই এ নেতারা রাখাইনদের মধ্যকার সংঘর্ষ নিয়ে নিজেদের মতো করে অপ্রচলিত ও তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনা প্রচার করছেন।
কিন্তু সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যাপারে যারা আসলেই আগ্রহী, তারা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জটিলতা বিবেচনা করে এবং দ্রুতবিচার এড়ানোর কথাই বলবেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক আছে। রাখাইনের মুসলমানরা তাদের কর্মী, রাজনীতিবিদ এবং প্রতিনিধিরা ‘রোহিঙ্গা’ নামে পরিচিত।
মিয়ানমার সরকার ‘রাখাইন রাজ্যে মুসলিম’ শব্দটির ওপর জোর দেয়। তবে ইসলামের কিছু মৌলবাদী প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসার জন্য তাদের ‘বাঙালি’ বলে।
ঔপনিবেশিক যুগের পর থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় জাতীয়তা ও নাগরিক অধিকারকে জাতিগতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটির ব্যাপারে মতপার্থক্য থাকায় রাষ্ট্রের অন্য অনেক সমস্যার মতো এটি এখনও আলোচনার বিষয় বলে বিবেচিত হয়। কারণ এতে শান, কাচীন বা চীনের রাজ্যগুলোর মতো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে নির্দেশ করবে। শুধু যারা আদিবাসী জাতিগত গোষ্ঠীর সদস্য, তারাই দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
এই পরিস্থিতিতে এটাই যৌক্তিক যে, রোহিঙ্গারা একটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত হয়ে উঠেছে, যাদের পূর্বপুরুষ আজকের মিয়ানমারের অংশে সবসময় বসবাস করত। হংকং-ভিত্তিক গণমাধ্যম এশিয়া টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, নাগরিক অধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
তবে সত্যটা এই যে, রাখাইনরা বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা বছরের পর বছর শাসিত হয়েছে আর সবসময়ই সেখানে বিভিন্ন ধরনের মুসলিম সংখ্যালঘুদের দ্বারা বেষ্টিত থেকেছে।
‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি নানা কারণে ভীষণ রাজনৈতিক শব্দ। মিডিয়া, অ্যাক্টিভিস্ট বা রাজনীতিবিদরা এটি ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। একই সঙ্গে ‘রাখাইন রাজ্যে মুসলমান’ শব্দটি কোনোভাবে নিরপেক্ষ নয়।
এই দ্বন্দ্বই বলে দিচ্ছে, এ সমস্যার সমাধান নিরপেক্ষভাবে হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। তবে মানবিক বিপর্যয়ের বেলায় নীরবতা কোনো বিকল্প হতে পারে না। কিন্তু যারা এ ব্যাপারে এখন মতামত দেবে, তারাও যে এ দ্বন্দ্বের অংশ হয়ে উঠবে, তা পরিষ্কার।
তবে কোনো ক্ষেত্রেই রাজনীতিবিদ বা অ্যাক্টিভিস্টরা যেন নিজেদের স্বার্থে এ ইস্যুকে ব্যবহার না করেন। তাহলে ২০১২, ১৯৯২ এমনকি ১৯৭৮ সালের আগে যেসব সহিংসতা হয়েছিল, সেগুলোর মতো সহিংসতা শুধু বাড়তেই থাকবে আর সমাধানের উদ্যোগ ব্যর্থ হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জঙ্গিদের নৃশংস হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে দুই সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ওয়েবসাইটে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ সংখ্যা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের মুখপাত্র দীপায়ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, জাতিসংঘ কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন এক লাখ ২০ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে আসতে পারে। এখন তারা মনে করছেন এ সংখ্যা তিন লাখে পৌঁছতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দীপায়ন ভট্টাচার্য বলেন, তারা (রোহিঙ্গা) পুষ্টিহীন অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং সম্ভবত স্বাভাবিক খাদ্য সরবরাহ থেকে এক মাস ধরে তারা বঞ্চিত। তাদের চেহারাতেই পরিষ্কার যে, তারা ক্ষুধার্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত।
অসুস্থ ও আহতাবস্থায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সেখানে আগের সংঘাতের ধাক্কায় যেসব রোহিঙ্গা এসেছে তাদের সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো।
হাসিনা নামের মেয়েটিকে সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচাতে জীবন দিতে হয় তার ভাইকে। দীপায়ন বলেন, যদি ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাহলে আগামী চার মাসে উচ্চ পুষ্টির বিস্কুট ও চালের জন্য ১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার প্রয়োজন। তিনি দাতাদের এই অর্থ দ্রুত দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দাতারা অর্থ না দিলে ক্ষুধার্ত লোকগুলো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এর শিকার হতে পারে নারী ও শিশুরা।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের ২৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮৭ হাজার।সব মিলিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
ডিডব্লিউ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

রোহিঙ্গা সংকটের অস্পষ্টতা কোনো ক্ষেত্রেই

আপডেট টাইম : ১২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রোহিঙ্গা সংকটের অস্পষ্টতা কোনো ক্ষেত্রেই
রাজনীতিবিদ বা অ্যাক্টিভিস্টরা যেন নিজেদের স্বার্থে রোহিঙ্গা ইস্যুকে ব্যবহার না করেন। তাহলে ২০১২, ১৯৯২ এমনকি ১৯৭৮ সালের আগে যেসব সহিংসতা হয়েছিল, সেগুলোর মতো সহিংসতা
শুধু বাড়তেই থাকবে আর সমাধানের উদ্যোগ ব্যর্থ হবে
রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনাবাহিনীর রাগ ও ক্ষোভ খুবই স্পষ্ট। সরল চোখে দেখলে, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের অবস্থা কালো আর সাদা বলে মনে হয়। একটি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী আছে, যারা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম। এরা দিনের পর দিন নির্মমভাবে নিপীড়িত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৌদ্ধ এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীই অত্যাচারী আর রোহিঙ্গারা হচ্ছে তার শিকার।
এ দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্ভেজাল তথ্য ও সঠিক বিবরণীর অভাব সবসময়ই ছিল। সেই অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসব তথ্য প্রচার করা হয়। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ প্রমাণ করাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ সব ছবি ভাসছে। এ ছবির অনেকগুলো আবার মিথ্যা সংবাদ বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রচারের জন্য বিশ্বের অন্যান্য জায়গার দ্বন্দ্ব-সহিংসতার ছবিও ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের কার্যনির্বাহী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে সরকার কোনো ধরনের অন্যায় কাজকে অস্বীকার করে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে অঙ্গীকারবন্ধ।
বিশ্বের রাজনীতিবিদ, নানা সংগঠন এবং তারকারা রাখাইন সংকটের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সেসঙ্গে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রপতি জোকোভি, চেচনিয়ার রমজান কাদিরভ এবং তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের মতো কিছু রাজনীতিবিদ রোহিঙ্গাদের কষ্টের চেয়ে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের এজেন্ডা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। আর এভাবেই এ নেতারা রাখাইনদের মধ্যকার সংঘর্ষ নিয়ে নিজেদের মতো করে অপ্রচলিত ও তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনা প্রচার করছেন।
কিন্তু সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যাপারে যারা আসলেই আগ্রহী, তারা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জটিলতা বিবেচনা করে এবং দ্রুতবিচার এড়ানোর কথাই বলবেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক আছে। রাখাইনের মুসলমানরা তাদের কর্মী, রাজনীতিবিদ এবং প্রতিনিধিরা ‘রোহিঙ্গা’ নামে পরিচিত।
মিয়ানমার সরকার ‘রাখাইন রাজ্যে মুসলিম’ শব্দটির ওপর জোর দেয়। তবে ইসলামের কিছু মৌলবাদী প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসার জন্য তাদের ‘বাঙালি’ বলে।
ঔপনিবেশিক যুগের পর থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় জাতীয়তা ও নাগরিক অধিকারকে জাতিগতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটির ব্যাপারে মতপার্থক্য থাকায় রাষ্ট্রের অন্য অনেক সমস্যার মতো এটি এখনও আলোচনার বিষয় বলে বিবেচিত হয়। কারণ এতে শান, কাচীন বা চীনের রাজ্যগুলোর মতো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে নির্দেশ করবে। শুধু যারা আদিবাসী জাতিগত গোষ্ঠীর সদস্য, তারাই দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
এই পরিস্থিতিতে এটাই যৌক্তিক যে, রোহিঙ্গারা একটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত হয়ে উঠেছে, যাদের পূর্বপুরুষ আজকের মিয়ানমারের অংশে সবসময় বসবাস করত। হংকং-ভিত্তিক গণমাধ্যম এশিয়া টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, নাগরিক অধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
তবে সত্যটা এই যে, রাখাইনরা বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা বছরের পর বছর শাসিত হয়েছে আর সবসময়ই সেখানে বিভিন্ন ধরনের মুসলিম সংখ্যালঘুদের দ্বারা বেষ্টিত থেকেছে।
‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি নানা কারণে ভীষণ রাজনৈতিক শব্দ। মিডিয়া, অ্যাক্টিভিস্ট বা রাজনীতিবিদরা এটি ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। একই সঙ্গে ‘রাখাইন রাজ্যে মুসলমান’ শব্দটি কোনোভাবে নিরপেক্ষ নয়।
এই দ্বন্দ্বই বলে দিচ্ছে, এ সমস্যার সমাধান নিরপেক্ষভাবে হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। তবে মানবিক বিপর্যয়ের বেলায় নীরবতা কোনো বিকল্প হতে পারে না। কিন্তু যারা এ ব্যাপারে এখন মতামত দেবে, তারাও যে এ দ্বন্দ্বের অংশ হয়ে উঠবে, তা পরিষ্কার।
তবে কোনো ক্ষেত্রেই রাজনীতিবিদ বা অ্যাক্টিভিস্টরা যেন নিজেদের স্বার্থে এ ইস্যুকে ব্যবহার না করেন। তাহলে ২০১২, ১৯৯২ এমনকি ১৯৭৮ সালের আগে যেসব সহিংসতা হয়েছিল, সেগুলোর মতো সহিংসতা শুধু বাড়তেই থাকবে আর সমাধানের উদ্যোগ ব্যর্থ হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জঙ্গিদের নৃশংস হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে দুই সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ওয়েবসাইটে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ সংখ্যা জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের মুখপাত্র দীপায়ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, জাতিসংঘ কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন এক লাখ ২০ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে আসতে পারে। এখন তারা মনে করছেন এ সংখ্যা তিন লাখে পৌঁছতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দীপায়ন ভট্টাচার্য বলেন, তারা (রোহিঙ্গা) পুষ্টিহীন অবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করছে এবং সম্ভবত স্বাভাবিক খাদ্য সরবরাহ থেকে এক মাস ধরে তারা বঞ্চিত। তাদের চেহারাতেই পরিষ্কার যে, তারা ক্ষুধার্ত ও আতঙ্কগ্রস্ত।
অসুস্থ ও আহতাবস্থায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সেখানে আগের সংঘাতের ধাক্কায় যেসব রোহিঙ্গা এসেছে তাদের সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো।
হাসিনা নামের মেয়েটিকে সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচাতে জীবন দিতে হয় তার ভাইকে। দীপায়ন বলেন, যদি ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাহলে আগামী চার মাসে উচ্চ পুষ্টির বিস্কুট ও চালের জন্য ১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার প্রয়োজন। তিনি দাতাদের এই অর্থ দ্রুত দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দাতারা অর্থ না দিলে ক্ষুধার্ত লোকগুলো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এর শিকার হতে পারে নারী ও শিশুরা।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের ২৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮৭ হাজার।সব মিলিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
ডিডব্লিউ