ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নিশ্চয়ই কেয়ামতের
দিন সর্বপ্রথম বান্দার যে আমলের হিসাব নেয়া হবে, তা হচ্ছে তার নামাজ। যদি নামাজ সঠিক থাকে, তাহলে সে সাফল্য লাভ করবে এবং উত্তীর্ণ হবে। আর যদি নামাজ সঠিক না থাকে, তাহলে সে অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর প্রত্যেহ পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ করেছেন। নিয়মিত এ নামাজ আদায় করলে অজস্র নেকি লাভ হয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি লাভ হয়। আর নামাজ ছেড়ে দিলে সীমাহীন গোনাহের বোঝা কাঁধে চাপবে এবং আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দার ওপর নারাজ হন। তাই প্রত্যেক মোমিনের জন্য আবশ্যক হলো গুরুত্ব দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নামাজ হলো দ্বীনের খুঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করল, সে দ্বীনকে ঠিক রাখল, আর যে ব্যক্তি নামাজকে নষ্ট করল, সে দ্বীনকে বিনষ্ট করল।’ (সুনানে বাইহাকি : ১৭১)। এ হাদিস দ্বারা নামাজের গুরুত্বের কথা বোঝানে হয়েছে। বস্তুত বুনিয়াদ শক্ত হলে স্থিতি শক্ত হবে, আর বুনিয়াদ দুর্বল হলে স্থিতি দুর্বল হয়ে পড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং মানুষের দ্বীনদারি যথাযথভাবে বহাল রাখার জন্য নামাজের বিকল্প নেই।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার যে আমলের হিসাব নেয়া হবে, তা হচ্ছে তার নামাজ। যদি নামাজ সঠিক থাকে, তাহলে সে সাফল্য লাভ করবে এবং উত্তীর্ণ হবে। আর যদি নামাজ সঠিক না                             থাকে, তাহলে সে অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (জামে তিরমিজি : ৪১৩)।
এ হাদিসে পরকালীন সাফল্য লাভ নামাজের বিশেষ ভূমিকার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। পরকালে নামাজের হিসাব ঠিকভাবে দিতে পারলে, অন্যান্য আমলের হিসাব দেয়া সহজ হয়ে যাবে। ফলে সে তখন সাফল্যম-িত হবে। আর যদি নামাজের হিসাব ঠিকমতো দেয়া না হয়, তাহলে অন্যান্য আমলের হিসাবেও সে ব্যর্থতার পরিচয় দেবে। সুতরাং পরকালীন নাজাত ও সাফল্য লাভের জন্য যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা একান্ত কর্তব্য।
হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো ব্যক্তির মধ্যে এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে মাধ্যম হলো নামাজ ছেড়ে দেয়া।’ (মুসলিম : ১৩৪)। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যখন নামাজ ছেড়ে দেয়, তখন তার ও কুফর-শিরকের মধ্যেকার দূরত্ব ওঠে যায়। ফলে তার কাফের ও মোশরেক হওয়ার মাঝে কোনো অন্তরায় থাকে না।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার একজন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন, যিনি প্রত্যেক নামাজের সময় ঘোষণা করতে থাকেন, হে আদমের সন্তানরা! তোমরা ওঠো সেই আগুন নেভাতে, যা তোমরা জ্বালিয়েছ। নামাজ দ্বারা তা নিভিয়ে দাও।’ (মুজামে তাবরানি : ৩২৫)।
এ হাদিসে নামাজ দ্বারা গোনাহ মাফ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। নাফরমানদের জন্য জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হয়ে থাকে। যখন নামাজ আদায় করা হয়, তখন নামাজের অসিলায় তা নিভে গিয়ে শান্তিময় রূপ ধারণ করে। কিন্তু নামাজ না পড়লে তা আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।
তেমনি নামাজের মধ্যে নানা ধরনের ছোট এবং বড় ভুলভ্রান্তি হয়ে যেতে পারে, যা পরকালে আগুনের রূপ ধারণ করবে। অতঃপর নামাজের মাধ্যমে তওবা করার দ্বারা গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ হয়।
সুতরাং যাতে নাফরমানির কারণে জাহান্নামে অগ্নির দ্বারা মানুষ ধ্বংসে পতিত না হয়, সেজন্য প্রত্যেক নামাজের সময় হলে ফেরেশতারা ঘোষণা করেন, তোমরা  নামাজ আদায়ের মাধ্যমে জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুনকে নিভিয়ে দাও।
হজরত ওবাদাহ ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, জিবরাঈল (আ.) আল্লাহ তায়ালা থেকে আমার কাছে আগমন করেছেন, আমাকে বলেছেন, হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে বলেছেন, ‘আমি আপনার ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছি। যে ব্যক্তি এ নামাজের অজু, ওয়াক্ত, রুকু, সিজদা ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করে, এর বিনিময়ে তার জন্য আমার অঙ্গীকার হলো, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।’ (জামিউস সগির : ৭৭)।
এ হাদিসে নামাজের অন্যান্য ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত প্রদানের অঙ্গীকার করেÑ এটা নামাজের কত বড় পুরস্কার! তা ফজিলত লাভের জন্য নামাজের পূর্ণ পাবন্দি ও নামাজের সংশ্লিষ্ট বিষয়, যথাÑ পবিত্রতা অর্জন, ওয়াক্তের গুরুত্ব প্রভৃতি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে। তাহলেই এ সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। আর পরিপূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই শুধু বান্দা তার প্রভুর প্রিয় আসনে সমাসীন হতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

আপডেট টাইম : ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নিশ্চয়ই কেয়ামতের
দিন সর্বপ্রথম বান্দার যে আমলের হিসাব নেয়া হবে, তা হচ্ছে তার নামাজ। যদি নামাজ সঠিক থাকে, তাহলে সে সাফল্য লাভ করবে এবং উত্তীর্ণ হবে। আর যদি নামাজ সঠিক না থাকে, তাহলে সে অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর প্রত্যেহ পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ করেছেন। নিয়মিত এ নামাজ আদায় করলে অজস্র নেকি লাভ হয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি লাভ হয়। আর নামাজ ছেড়ে দিলে সীমাহীন গোনাহের বোঝা কাঁধে চাপবে এবং আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দার ওপর নারাজ হন। তাই প্রত্যেক মোমিনের জন্য আবশ্যক হলো গুরুত্ব দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নামাজ হলো দ্বীনের খুঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করল, সে দ্বীনকে ঠিক রাখল, আর যে ব্যক্তি নামাজকে নষ্ট করল, সে দ্বীনকে বিনষ্ট করল।’ (সুনানে বাইহাকি : ১৭১)। এ হাদিস দ্বারা নামাজের গুরুত্বের কথা বোঝানে হয়েছে। বস্তুত বুনিয়াদ শক্ত হলে স্থিতি শক্ত হবে, আর বুনিয়াদ দুর্বল হলে স্থিতি দুর্বল হয়ে পড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং মানুষের দ্বীনদারি যথাযথভাবে বহাল রাখার জন্য নামাজের বিকল্প নেই।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার যে আমলের হিসাব নেয়া হবে, তা হচ্ছে তার নামাজ। যদি নামাজ সঠিক থাকে, তাহলে সে সাফল্য লাভ করবে এবং উত্তীর্ণ হবে। আর যদি নামাজ সঠিক না                             থাকে, তাহলে সে অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (জামে তিরমিজি : ৪১৩)।
এ হাদিসে পরকালীন সাফল্য লাভ নামাজের বিশেষ ভূমিকার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। পরকালে নামাজের হিসাব ঠিকভাবে দিতে পারলে, অন্যান্য আমলের হিসাব দেয়া সহজ হয়ে যাবে। ফলে সে তখন সাফল্যম-িত হবে। আর যদি নামাজের হিসাব ঠিকমতো দেয়া না হয়, তাহলে অন্যান্য আমলের হিসাবেও সে ব্যর্থতার পরিচয় দেবে। সুতরাং পরকালীন নাজাত ও সাফল্য লাভের জন্য যথাযথভাবে নামাজ আদায় করা একান্ত কর্তব্য।
হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো ব্যক্তির মধ্যে এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে মাধ্যম হলো নামাজ ছেড়ে দেয়া।’ (মুসলিম : ১৩৪)। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যখন নামাজ ছেড়ে দেয়, তখন তার ও কুফর-শিরকের মধ্যেকার দূরত্ব ওঠে যায়। ফলে তার কাফের ও মোশরেক হওয়ার মাঝে কোনো অন্তরায় থাকে না।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার একজন ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন, যিনি প্রত্যেক নামাজের সময় ঘোষণা করতে থাকেন, হে আদমের সন্তানরা! তোমরা ওঠো সেই আগুন নেভাতে, যা তোমরা জ্বালিয়েছ। নামাজ দ্বারা তা নিভিয়ে দাও।’ (মুজামে তাবরানি : ৩২৫)।
এ হাদিসে নামাজ দ্বারা গোনাহ মাফ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। নাফরমানদের জন্য জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হয়ে থাকে। যখন নামাজ আদায় করা হয়, তখন নামাজের অসিলায় তা নিভে গিয়ে শান্তিময় রূপ ধারণ করে। কিন্তু নামাজ না পড়লে তা আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।
তেমনি নামাজের মধ্যে নানা ধরনের ছোট এবং বড় ভুলভ্রান্তি হয়ে যেতে পারে, যা পরকালে আগুনের রূপ ধারণ করবে। অতঃপর নামাজের মাধ্যমে তওবা করার দ্বারা গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ হয়।
সুতরাং যাতে নাফরমানির কারণে জাহান্নামে অগ্নির দ্বারা মানুষ ধ্বংসে পতিত না হয়, সেজন্য প্রত্যেক নামাজের সময় হলে ফেরেশতারা ঘোষণা করেন, তোমরা  নামাজ আদায়ের মাধ্যমে জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুনকে নিভিয়ে দাও।
হজরত ওবাদাহ ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, জিবরাঈল (আ.) আল্লাহ তায়ালা থেকে আমার কাছে আগমন করেছেন, আমাকে বলেছেন, হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে বলেছেন, ‘আমি আপনার ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছি। যে ব্যক্তি এ নামাজের অজু, ওয়াক্ত, রুকু, সিজদা ইত্যাদি যথাযথভাবে পালন করে, এর বিনিময়ে তার জন্য আমার অঙ্গীকার হলো, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।’ (জামিউস সগির : ৭৭)।
এ হাদিসে নামাজের অন্যান্য ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত প্রদানের অঙ্গীকার করেÑ এটা নামাজের কত বড় পুরস্কার! তা ফজিলত লাভের জন্য নামাজের পূর্ণ পাবন্দি ও নামাজের সংশ্লিষ্ট বিষয়, যথাÑ পবিত্রতা অর্জন, ওয়াক্তের গুরুত্ব প্রভৃতি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে। তাহলেই এ সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। আর পরিপূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই শুধু বান্দা তার প্রভুর প্রিয় আসনে সমাসীন হতে পারে।