ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মক্কার শরিফের জুমার খুতবা আল্লাহর আদেশে আত্মনিবেদন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আল্লাহর প্রতি নিজেকে সঁপে দেয়া ও নবী করিম (সা.) এর আদর্শ আঁকড়ে ধরা সত্যনিষ্ঠার পরিচায়ক। এটা বান্দার ঈমান ও ইসলামের প্রকৃত পরীক্ষা। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে তোমাকে ন্যায়বিচার মনে না করা পর্যন্ত তারা ঈমানদার হবে না। তোমার দেয়া রায় নিয়ে তাদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা রাখতে পারবে না এবং চূড়ান্তরূপে তা মেনে নেবে।’
হে বায়তুল্লাহর অতিথিরা! আপনাদের ওপর আল্লাহর ক্রমাগত অনুগ্রহ ও ধারাবাহিক নেয়ামত অপরিসীম। তিনিই আপনাদের হৃদয়গুলোকে হজ ও পবিত্র স্থানগুলোর প্রতি ভালোবাসা এবং আগ্রহ দিয়ে আন্দোলিত করেছেন। তিনিই এ বরকতময় দেশে আপনাদের আগমন সহজ করেছেন। আল্লাহর দুই মহানুভব বন্ধু ইবরাহিম (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.) ঐতিহ্যবিজড়িত স্থান এবং জায়গায় অবস্থান করে পালনীয় বিধিবিধান সম্পন্ন করার তৌফিক দিয়েছেন। তাই আপনারা পরিপূর্ণ শান্তি, নিরাপত্তা ও ছিমছাম পরিবেশে হজের বিধান পালন করতে পেরে আল্লাহর শোকর করুন। তাঁর প্রশংসা করুন। আল্লাহর তৌফিক দানের পরে এ বছর নির্বিঘেœ হজের মৌসুম সফল করতে নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা, নিরাপত্তাকর্মী ও দায়িত্বশীলসহ যারা সক্রিয় অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও আল্লাহর শোকর করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাদের বিনিময় ও সওয়াব দান করুন।
বান্দার প্রতি আল্লাহর অন্যতম দয়া হলো, তিনি প্রতি বছর তাদের ইবাদত ও কল্যাণের মৌসুম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এখান থেকে তারা জীবনের চলার পথ ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর যখন ভ্রান্তির প্রচ- তীব্র তাপপ্রবাহে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়, চারদিকে ছড়িয়ে পড়া পাপাচার, বিকৃতি, লালসা ও ভ্রষ্টতার সয়লাবে মন বেদনার্ত হয়, ভ্রাতৃত্ব ও মমতার বন্ধন ছিন্ন হয়, শয়তান মুসলমানের মাঝে ভাঙন সৃষ্টি করে, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মজবুত মূলনীতি এবং শক্তিশালী বিধানের আশ্রয় নিতে হয়।
আল্লাহর প্রেরিত বিধানের সুরক্ষিত পরিম-ল ও সাহাবায়ে কেরামের বোধ অনুসারে কোরআন ও সুন্নাহর প্রতি সমর্পণের মধ্যেই নিহিত আছে তৃষ্ণা নিবারণের পরম পরিতৃপ্তি, উর্বর উদ্যান ও নির্মলতা। সন্দেহ-সংশয়, ভ্রষ্টাচার, বিরোধ ও বিবাদের আগুন জ্বলে ওঠলে ওলামায়ে কেরাম এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকরা আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহকেই আঁকড়ে ধরেছেন। মন-মস্তিষ্ক সংশোধনের সবচেয়ে বড় পথ হলো আল্লাহ ও রাসুলের কাছে সমর্পণ। এ আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না।
কোনোরূপ বিরক্তি ও ক্লান্তি ছাড়াই সানন্দে হজের প্রতিটি বিধান পালনে আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি এ চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ নীতি প্রতিফলিত হয়। হজের মহান উদ্দেশ্য এটাই। আরাফা, মুজদালিফা, মিনা, তওয়াফ, সাঈ, পাথর নিক্ষেপ, মাথামু-ন, কোরবানি ও ইহরামসহ হজের প্রতিটি কর্মে দেহ-মনের এ সমর্পণ ফুটে ওঠে।
আল্লাহর প্রতি নিজেকে সঁপে দেয়া ও নবী করিম (সা.) এর আদর্শ আঁকড়ে ধরা সত্যনিষ্ঠার পরিচায়ক। এটা বান্দার ঈমান ও ইসলামের প্রকৃত পরীক্ষা। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে তোমাকে ন্যায়বিচার মনে না করা পর্যন্ত তারা ঈমানদার হবে না। তোমার দেয়া রায় নিয়ে তাদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা রাখতে পারবে না এবং চূড়ান্তরূপে তা মেনে নেবে।’ (সূরা নিসা : ৬৫)।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো রায় দিলে মোমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই।’ (সূরা আহজাব : ৩৬)। কেউ তার স্রষ্টার প্রতি নিজের মন-মস্তিষ্ক ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমর্পণ করে দিলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং সে দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন লাভ করে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজের মুখম-ল আল্লাহ অভিমুখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে। যাবতীয় কর্মের পরিণতি আল্লাহর দিকেই।’ (সূরা লুকমান)।
যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সমর্পিত হয়, নিবেদিত হয় তার চেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ কেউ নেই। ‘যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজের মুখ আল্লাহ অভিমুখী করে এবং সত্যনিষ্ঠ ইবরাহিমের অনুসরণ করে তার চেয়ে উত্তম ধার্মিক আর কে আছে? আল্লাহ ইবরাহিমকে তাঁর বন্ধু বানিয়েছেন।’
(সূরা নিসা : ১২৫)।
মুহাম্মদ (সা.) এর পরে ইবরাহিম (আ.) হলেন সবচেয়ে মহান নবী। তিনি ছিলেন আল্লাহর সামনে আত্মনিবেদন ও সমর্পণের মূর্তপ্রতীক। ‘যখন তার পালনকর্তা তাকে বললেন, আত্মসমর্পণ করো, তখন তিনি বলেন, আমি গোটা বিশ্বের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সূরা বাকারা : ১৩১)।
আল্লাহ ইবরাহিম (আ.) কে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছেন। তিনি সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার রব তাকে প্রকাশ্যে তৌহিদ প্রচারের নির্দেশ দিলেন। তিনি তা মেনে নিয়ে জাতিকে তৌহিদের দাওয়াত দেন। তারপর তার রব ছেলে ইসমাঈল ও তার মা হাজেরা (আ.) কে অনুর্বর জনমানবহীন মক্কায় রেখে আসার আদেশ দিলেন। তিনি তার রবের সামনে আত্মসমর্পণ করেন। হাজেরা তাকে ডেকে বলেন, ‘হে ইবরাহিম, এ নির্জন প্রান্তরে আমাদের রেখে কোথায় যাচ্ছেন? কয়েকবার এ কথা বলার পরও তিনি সেদিকে তাকাননি। তারপর হাজেরা বলেন, ‘এ নির্দেশ কি আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তখন হাজেরা (আ.) বলেন, তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না।’ আল্লাহ সারা বিশ্বে তাদের মর্যাদা সমুন্নত করলেন।
তারপর আল্লাহ তার বন্ধু ইবরাহিমকে কাবা নির্মাণের নির্দেশ দেন। তিনি সেটার ভিত্তি স্থাপন করলেন। মানুষকে হজের আহ্বান জানালেন। তারা সুদূর থেকে আগমন করল। তারপর এলো সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। কলিজার টুকরা যুবক ইসমাঈলকে জবাই করার আদেশ দিলেন তার রব। তিনি এখানেও রবের সামনে আত্মসমর্পণ করলেন। যখন জবাই করতে গেলেন আল্লাহ ডেকে বলেন, ‘হে ইবরাহিম, তুমি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ, আমি সৎলোকদের এভাবেই প্রতিদান দিই। নিশ্চয়ই এটা স্পষ্ট পরীক্ষা।’ (সূরা সাফফাত : ১০৪-১০৬)। আল্লাহর আদেশের সামনে আত্মসমর্পণের এটা সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এর প্রতিদান হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত তৌহিদের অনুসারীদের জন্য আল্লাহ কোরবানির প্রচলন করে দিয়েছেন।
যে ব্যক্তি নিজের বিষয়কে আল্লাহর কাছে নিবেদন করে  দেবে, নবীর আদর্শ মেনে চলবে তার ধ্বংসের ভয় নেই। সে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। এর সবটাই আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি নিবেদিত হওয়ার ফল, যা হজের অন্যতম উদ্দেশ্য। হাজীরা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ ও রাসুলের আদেশের সামনে আত্মনিবেদন করবে। ‘যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিজদারত হয়ে ও দাঁড়িয়ে নিবেদিত হয়, আখেরাতের ভয় করে এবং তার রবের রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এমন করে না?’ (সূরা জুমার : ৯)।

১৭ জিলহজ ১৪৩৮ হিজরি মসজিদে হারামের জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত
ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

মক্কার শরিফের জুমার খুতবা আল্লাহর আদেশে আত্মনিবেদন

আপডেট টাইম : ০১:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আল্লাহর প্রতি নিজেকে সঁপে দেয়া ও নবী করিম (সা.) এর আদর্শ আঁকড়ে ধরা সত্যনিষ্ঠার পরিচায়ক। এটা বান্দার ঈমান ও ইসলামের প্রকৃত পরীক্ষা। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে তোমাকে ন্যায়বিচার মনে না করা পর্যন্ত তারা ঈমানদার হবে না। তোমার দেয়া রায় নিয়ে তাদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা রাখতে পারবে না এবং চূড়ান্তরূপে তা মেনে নেবে।’
হে বায়তুল্লাহর অতিথিরা! আপনাদের ওপর আল্লাহর ক্রমাগত অনুগ্রহ ও ধারাবাহিক নেয়ামত অপরিসীম। তিনিই আপনাদের হৃদয়গুলোকে হজ ও পবিত্র স্থানগুলোর প্রতি ভালোবাসা এবং আগ্রহ দিয়ে আন্দোলিত করেছেন। তিনিই এ বরকতময় দেশে আপনাদের আগমন সহজ করেছেন। আল্লাহর দুই মহানুভব বন্ধু ইবরাহিম (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.) ঐতিহ্যবিজড়িত স্থান এবং জায়গায় অবস্থান করে পালনীয় বিধিবিধান সম্পন্ন করার তৌফিক দিয়েছেন। তাই আপনারা পরিপূর্ণ শান্তি, নিরাপত্তা ও ছিমছাম পরিবেশে হজের বিধান পালন করতে পেরে আল্লাহর শোকর করুন। তাঁর প্রশংসা করুন। আল্লাহর তৌফিক দানের পরে এ বছর নির্বিঘেœ হজের মৌসুম সফল করতে নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা, নিরাপত্তাকর্মী ও দায়িত্বশীলসহ যারা সক্রিয় অবদান রেখেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও আল্লাহর শোকর করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাদের বিনিময় ও সওয়াব দান করুন।
বান্দার প্রতি আল্লাহর অন্যতম দয়া হলো, তিনি প্রতি বছর তাদের ইবাদত ও কল্যাণের মৌসুম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এখান থেকে তারা জীবনের চলার পথ ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর যখন ভ্রান্তির প্রচ- তীব্র তাপপ্রবাহে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়, চারদিকে ছড়িয়ে পড়া পাপাচার, বিকৃতি, লালসা ও ভ্রষ্টতার সয়লাবে মন বেদনার্ত হয়, ভ্রাতৃত্ব ও মমতার বন্ধন ছিন্ন হয়, শয়তান মুসলমানের মাঝে ভাঙন সৃষ্টি করে, তখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মজবুত মূলনীতি এবং শক্তিশালী বিধানের আশ্রয় নিতে হয়।
আল্লাহর প্রেরিত বিধানের সুরক্ষিত পরিম-ল ও সাহাবায়ে কেরামের বোধ অনুসারে কোরআন ও সুন্নাহর প্রতি সমর্পণের মধ্যেই নিহিত আছে তৃষ্ণা নিবারণের পরম পরিতৃপ্তি, উর্বর উদ্যান ও নির্মলতা। সন্দেহ-সংশয়, ভ্রষ্টাচার, বিরোধ ও বিবাদের আগুন জ্বলে ওঠলে ওলামায়ে কেরাম এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকরা আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহকেই আঁকড়ে ধরেছেন। মন-মস্তিষ্ক সংশোধনের সবচেয়ে বড় পথ হলো আল্লাহ ও রাসুলের কাছে সমর্পণ। এ আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না।
কোনোরূপ বিরক্তি ও ক্লান্তি ছাড়াই সানন্দে হজের প্রতিটি বিধান পালনে আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি এ চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ নীতি প্রতিফলিত হয়। হজের মহান উদ্দেশ্য এটাই। আরাফা, মুজদালিফা, মিনা, তওয়াফ, সাঈ, পাথর নিক্ষেপ, মাথামু-ন, কোরবানি ও ইহরামসহ হজের প্রতিটি কর্মে দেহ-মনের এ সমর্পণ ফুটে ওঠে।
আল্লাহর প্রতি নিজেকে সঁপে দেয়া ও নবী করিম (সা.) এর আদর্শ আঁকড়ে ধরা সত্যনিষ্ঠার পরিচায়ক। এটা বান্দার ঈমান ও ইসলামের প্রকৃত পরীক্ষা। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে তোমাকে ন্যায়বিচার মনে না করা পর্যন্ত তারা ঈমানদার হবে না। তোমার দেয়া রায় নিয়ে তাদের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা রাখতে পারবে না এবং চূড়ান্তরূপে তা মেনে নেবে।’ (সূরা নিসা : ৬৫)।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো রায় দিলে মোমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই।’ (সূরা আহজাব : ৩৬)। কেউ তার স্রষ্টার প্রতি নিজের মন-মস্তিষ্ক ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমর্পণ করে দিলে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং সে দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন লাভ করে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজের মুখম-ল আল্লাহ অভিমুখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে। যাবতীয় কর্মের পরিণতি আল্লাহর দিকেই।’ (সূরা লুকমান)।
যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সমর্পিত হয়, নিবেদিত হয় তার চেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ কেউ নেই। ‘যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজের মুখ আল্লাহ অভিমুখী করে এবং সত্যনিষ্ঠ ইবরাহিমের অনুসরণ করে তার চেয়ে উত্তম ধার্মিক আর কে আছে? আল্লাহ ইবরাহিমকে তাঁর বন্ধু বানিয়েছেন।’
(সূরা নিসা : ১২৫)।
মুহাম্মদ (সা.) এর পরে ইবরাহিম (আ.) হলেন সবচেয়ে মহান নবী। তিনি ছিলেন আল্লাহর সামনে আত্মনিবেদন ও সমর্পণের মূর্তপ্রতীক। ‘যখন তার পালনকর্তা তাকে বললেন, আত্মসমর্পণ করো, তখন তিনি বলেন, আমি গোটা বিশ্বের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সূরা বাকারা : ১৩১)।
আল্লাহ ইবরাহিম (আ.) কে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছেন। তিনি সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার রব তাকে প্রকাশ্যে তৌহিদ প্রচারের নির্দেশ দিলেন। তিনি তা মেনে নিয়ে জাতিকে তৌহিদের দাওয়াত দেন। তারপর তার রব ছেলে ইসমাঈল ও তার মা হাজেরা (আ.) কে অনুর্বর জনমানবহীন মক্কায় রেখে আসার আদেশ দিলেন। তিনি তার রবের সামনে আত্মসমর্পণ করেন। হাজেরা তাকে ডেকে বলেন, ‘হে ইবরাহিম, এ নির্জন প্রান্তরে আমাদের রেখে কোথায় যাচ্ছেন? কয়েকবার এ কথা বলার পরও তিনি সেদিকে তাকাননি। তারপর হাজেরা বলেন, ‘এ নির্দেশ কি আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তখন হাজেরা (আ.) বলেন, তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না।’ আল্লাহ সারা বিশ্বে তাদের মর্যাদা সমুন্নত করলেন।
তারপর আল্লাহ তার বন্ধু ইবরাহিমকে কাবা নির্মাণের নির্দেশ দেন। তিনি সেটার ভিত্তি স্থাপন করলেন। মানুষকে হজের আহ্বান জানালেন। তারা সুদূর থেকে আগমন করল। তারপর এলো সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। কলিজার টুকরা যুবক ইসমাঈলকে জবাই করার আদেশ দিলেন তার রব। তিনি এখানেও রবের সামনে আত্মসমর্পণ করলেন। যখন জবাই করতে গেলেন আল্লাহ ডেকে বলেন, ‘হে ইবরাহিম, তুমি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ, আমি সৎলোকদের এভাবেই প্রতিদান দিই। নিশ্চয়ই এটা স্পষ্ট পরীক্ষা।’ (সূরা সাফফাত : ১০৪-১০৬)। আল্লাহর আদেশের সামনে আত্মসমর্পণের এটা সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এর প্রতিদান হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত তৌহিদের অনুসারীদের জন্য আল্লাহ কোরবানির প্রচলন করে দিয়েছেন।
যে ব্যক্তি নিজের বিষয়কে আল্লাহর কাছে নিবেদন করে  দেবে, নবীর আদর্শ মেনে চলবে তার ধ্বংসের ভয় নেই। সে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। এর সবটাই আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি নিবেদিত হওয়ার ফল, যা হজের অন্যতম উদ্দেশ্য। হাজীরা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ ও রাসুলের আদেশের সামনে আত্মনিবেদন করবে। ‘যে ব্যক্তি রাতের প্রহরে সিজদারত হয়ে ও দাঁড়িয়ে নিবেদিত হয়, আখেরাতের ভয় করে এবং তার রবের রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এমন করে না?’ (সূরা জুমার : ৯)।

১৭ জিলহজ ১৪৩৮ হিজরি মসজিদে হারামের জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত
ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ