ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশির ভেজা সোনালী ধানের রং

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শরতের সাদা কাশফুল, শিশির ভেজা সোনালি ধান ও স্নিগ্ধ হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হেমন্ত আসে কুয়াশার চাদর নিয়ে। প্রকৃতিজুড়ে তাই নতুন আবহ তৈরি হয় এ সময়।

শিশির বিন্দু ঝরার টুপটাপ শব্দ আর মৃদু শীতলতা জানান দিয়ে যায় ঋতু পরিবর্তনের এ খবর। যদিও শহরের বহুতল ভবনের স্বচ্ছ কাচের ভেতর নানা রঙের পর্দা টাঙানো ঘরে বসে হেমন্তকে দেখা সম্ভব নয়। যেতে হবে আবহমান বাংলার গ্রামাঞ্চলে।

যেখানে শিশিরস্নাত সকাল, কাঁচাসোনা রোদমাখা স্নিগ্ধসৌম্য দুপুর, পাখির কলকাকলি ভরা ভেজা সন্ধ্যা আর মেঘমুক্ত আকাশে জ্যোৎস্না ডুবানো আলোকিত রাত হেমন্তকে যেন আরও রহস্যময় করে তোলে সবার চোখে; প্রকৃৃতিতে এনে দেয় ভিন্নমাত্রা।

হেমন্তের এই মৌনতাকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নবান্ন প্রবেশ করে জাগরণের গান হয়ে, মানুষের জীবনে এনে দেয় উৎসবের ছোঁয়া। নবান্ন মানেই চারদিকে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ, নতুন অন্ন, গ্রামের মাঠে মাঠে চলে ধান কাটার ধুম, হেমন্তে এই ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। গৃহস্থবাড়িতে নতুন ধানে তৈরি পিঠাপুলির সুগন্ধ বাতাসে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে হেমন্তের এ শাশ্বত রূপ চিরকালীন।

হেমন্তের সোনালি ধানের গন্ধ চারিদিকে থাকতে থাকতেই শীত এসে যায়। শীত ঋতুকে যেন হেমন্ত তার দু’হাতে ধানের ডালা নিয়ে সুস্বাগতম জানায়। শীত ঋতুও হেমন্তের ধানের ডালা গ্রহণ করে ধন্য হয়ে যায়। সত্যি, ঋতুতে ঋতুতে কতো সম্পর্ক! মানুষে মানুষেও যদি এমনটি হতো!

বর্ষায় বীজতলা থেকে চাষিরা চারা উঠিয়ে রোপণ করেন জমিতে। তারপর সেবা যত্ন করতে থাকেন। শরতে ক্ষেতে ধানের চারা পরিপুষ্ট হয়। বেড়ে ওঠে। একসময় ধানের শীষ বের হয়। সেই ধানশীষ থাকে সবুজে ঘেরা। ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় পরিপুষ্ট ধানে। এরপর ধানক্ষেতে ধানের শীষ অল্প অল্প করে হেলতে দুলতে থাকে। আহ! কী মনোরম সেই দৃশ্য! হেমন্তের রোদেলা দুপুরে ধীরে ধীরে ধানের শীষে সোনা রঙ ধরে। সোনালি রঙে মাখামাখি হয়ে যায় তখন চতুর্দিক। মাঠে মাঠে দোল খায় ধানের শীষ। গ্রামবাংলার দৃশ্যপট সত্যি অন্যরকম হয়ে যায়।

হেমন্তকাল মানেই ফসলের ছড়াছড়ি। মাঠে ধান পাকে, বাড়ির আঙিনায় বা উঠোনের মাচানে লাউ কুমড়াগুলো লক লক করে বেড়ে ওঠে। মিষ্টি রোদের মায়াময় দিনে নানা রঙের পাখিদের ডানা ঝাপটানো দেখা যায় গাছে গাছে। হেমন্তের নরম রোদের ছোঁয়া সবাই পেতে চায়।

একসময় দিন গড়িয়ে বিকেল হয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। সকালে বের হওয়া পাখিরা নীড়ে ফিরতে শুরু করে দল বেঁধে। তাদের কিচিরমিচির ধ্বনির সঙ্গে যোগ হয় বাঁশঝাড় থেকে আসা এক ধরনের শির শির শব্দ। তৈরি হয় অন্যরকম এক সুরের আবেশ।

এছাড়াও ঘাসফড়িং, গঙ্গাফড়িং আর বর্ণিল প্রজাপতির দল হেমন্তের চিবুক ছুঁয়ে যেন উড়ে গিয়ে বাংলার গ্রামীণ-লোকজ প্রতিটি মুহূর্তকে স্মরণীয় করে দেয়। হেমন্তের অপরিসীম রূপোজ্জ্বলতা যেমন প্রকৃতির এক অনিঃশেষ সম্পদ।

রাতের আকাশে দেখা যায় অগণিত তারার মেলা। বিস্তৃত দিগন্তের কোথাও এক বিন্দু জমাট বাঁধা মেঘেরও দেখা মেলে না। মিটিমিটি তারা জ্বলে সারা রাত। সেই সঙ্গে চাঁদের শরীর থেকেও জোসনা ঝরে পড়ে পৃথিবীজুড়ে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

শিশির ভেজা সোনালী ধানের রং

আপডেট টাইম : ০২:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শরতের সাদা কাশফুল, শিশির ভেজা সোনালি ধান ও স্নিগ্ধ হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হেমন্ত আসে কুয়াশার চাদর নিয়ে। প্রকৃতিজুড়ে তাই নতুন আবহ তৈরি হয় এ সময়।

শিশির বিন্দু ঝরার টুপটাপ শব্দ আর মৃদু শীতলতা জানান দিয়ে যায় ঋতু পরিবর্তনের এ খবর। যদিও শহরের বহুতল ভবনের স্বচ্ছ কাচের ভেতর নানা রঙের পর্দা টাঙানো ঘরে বসে হেমন্তকে দেখা সম্ভব নয়। যেতে হবে আবহমান বাংলার গ্রামাঞ্চলে।

যেখানে শিশিরস্নাত সকাল, কাঁচাসোনা রোদমাখা স্নিগ্ধসৌম্য দুপুর, পাখির কলকাকলি ভরা ভেজা সন্ধ্যা আর মেঘমুক্ত আকাশে জ্যোৎস্না ডুবানো আলোকিত রাত হেমন্তকে যেন আরও রহস্যময় করে তোলে সবার চোখে; প্রকৃৃতিতে এনে দেয় ভিন্নমাত্রা।

হেমন্তের এই মৌনতাকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নবান্ন প্রবেশ করে জাগরণের গান হয়ে, মানুষের জীবনে এনে দেয় উৎসবের ছোঁয়া। নবান্ন মানেই চারদিকে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ, নতুন অন্ন, গ্রামের মাঠে মাঠে চলে ধান কাটার ধুম, হেমন্তে এই ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। গৃহস্থবাড়িতে নতুন ধানে তৈরি পিঠাপুলির সুগন্ধ বাতাসে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে হেমন্তের এ শাশ্বত রূপ চিরকালীন।

হেমন্তের সোনালি ধানের গন্ধ চারিদিকে থাকতে থাকতেই শীত এসে যায়। শীত ঋতুকে যেন হেমন্ত তার দু’হাতে ধানের ডালা নিয়ে সুস্বাগতম জানায়। শীত ঋতুও হেমন্তের ধানের ডালা গ্রহণ করে ধন্য হয়ে যায়। সত্যি, ঋতুতে ঋতুতে কতো সম্পর্ক! মানুষে মানুষেও যদি এমনটি হতো!

বর্ষায় বীজতলা থেকে চাষিরা চারা উঠিয়ে রোপণ করেন জমিতে। তারপর সেবা যত্ন করতে থাকেন। শরতে ক্ষেতে ধানের চারা পরিপুষ্ট হয়। বেড়ে ওঠে। একসময় ধানের শীষ বের হয়। সেই ধানশীষ থাকে সবুজে ঘেরা। ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় পরিপুষ্ট ধানে। এরপর ধানক্ষেতে ধানের শীষ অল্প অল্প করে হেলতে দুলতে থাকে। আহ! কী মনোরম সেই দৃশ্য! হেমন্তের রোদেলা দুপুরে ধীরে ধীরে ধানের শীষে সোনা রঙ ধরে। সোনালি রঙে মাখামাখি হয়ে যায় তখন চতুর্দিক। মাঠে মাঠে দোল খায় ধানের শীষ। গ্রামবাংলার দৃশ্যপট সত্যি অন্যরকম হয়ে যায়।

হেমন্তকাল মানেই ফসলের ছড়াছড়ি। মাঠে ধান পাকে, বাড়ির আঙিনায় বা উঠোনের মাচানে লাউ কুমড়াগুলো লক লক করে বেড়ে ওঠে। মিষ্টি রোদের মায়াময় দিনে নানা রঙের পাখিদের ডানা ঝাপটানো দেখা যায় গাছে গাছে। হেমন্তের নরম রোদের ছোঁয়া সবাই পেতে চায়।

একসময় দিন গড়িয়ে বিকেল হয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। সকালে বের হওয়া পাখিরা নীড়ে ফিরতে শুরু করে দল বেঁধে। তাদের কিচিরমিচির ধ্বনির সঙ্গে যোগ হয় বাঁশঝাড় থেকে আসা এক ধরনের শির শির শব্দ। তৈরি হয় অন্যরকম এক সুরের আবেশ।

এছাড়াও ঘাসফড়িং, গঙ্গাফড়িং আর বর্ণিল প্রজাপতির দল হেমন্তের চিবুক ছুঁয়ে যেন উড়ে গিয়ে বাংলার গ্রামীণ-লোকজ প্রতিটি মুহূর্তকে স্মরণীয় করে দেয়। হেমন্তের অপরিসীম রূপোজ্জ্বলতা যেমন প্রকৃতির এক অনিঃশেষ সম্পদ।

রাতের আকাশে দেখা যায় অগণিত তারার মেলা। বিস্তৃত দিগন্তের কোথাও এক বিন্দু জমাট বাঁধা মেঘেরও দেখা মেলে না। মিটিমিটি তারা জ্বলে সারা রাত। সেই সঙ্গে চাঁদের শরীর থেকেও জোসনা ঝরে পড়ে পৃথিবীজুড়ে।