ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমনের আবাদ শুরু সীতাকুন্ডে রোপা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কিছুটা দেরিতে হলেও সীতাকুন্ড উপজেলাজুড়ে ২১ হাজার ৩৫ কৃষক পরিবার এখন রোপা আমনের আবাদ শুরু করেছেন। তবে অন্যান্য বছর আমন মৌসুমে জমিতে কোনো পানি থাকে না। কিন্তু এ বছর জমিতে সেচের কোনো প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ, অতি বৃষ্টির ফলে এখনো জমিতে প্রচুর পানি রয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, চলতি বছর একটানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে কৃষকদের জমির আউশ ধানসহ সদ্য চাষকরা বিভিন্নরকম সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছিল। তাই এ বছর কৃষকরা আমন রোপণে অনেকটা পিছিয়ে পড়েন। ফলে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কৃষক পরিবারগুলো। মৌসুমে ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে কৃষকেরা সঙ্গে সঙ্গে আবার রোপা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই কৃষকেরা এখন একটুও সময় নষ্ট করতে চান না। এ বছর অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে হাজার কষ্টের মাঝেও সোনালী ধানের খুশবোই আবার তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। এ বিষয়ে মুরাদপুর ইউনিয়নের সমুদ্র উপক‚লের পশ্চিম ভাটেরখীল এলাকার কৃষক রুপন চৌধুরী জানান, তিনি চলতি আমন মৌসুমে সাড়ে চার একর জমিতে দেশীয় তিনটি জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করেন। অগ্রহায়ণ মাসে ফসল কাটা পর্যন্ত তার খরচ পড়বে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে প্রায় দেড় লাখ টাকার ধান বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, আউশ মৌসুমে একটানা বৃষ্টির ফলে তার আউশ ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এতে ৪০ হাজার টাকার মতো লোকসান গুণতে হয়েছে। লোকসান পুষিয়ে নিতে আবার আমন ধানের আবাদ করেন। অপরদিকে এ এলাকার অপর কৃষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এবার সাড়ে পাঁচ একর জমিতে দেশীয় জাতের চিনিগুড়া ধানের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আমার আউশের জমি কিছুটা উঁচু থাকায় একটানা বৃষ্টিতে আউশের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। ফলে ফসল অনেক ভালো হয়েছে। একই ইউনিয়নের ভাটেরখীল বকে দায়ীত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জ্ঞানরঞ্জন নাথ ও রহমতনগর বকের সালমা সুলতানা বলেন, এ ইউনিয়নের জমিগুলো নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টি হলেই জমি ও গ্রাম্যসড়ক পানিতে ডুবে যায়। পানির নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকার ফলে এখানে ২৫০ হেক্টর জমিতে আউশ মৌসুমে কোনো ফসলের আবাদ হয় না। ফলে উপক‚লীয় এলাকার কৃষকেরা বারবার ক্ষতির শিকার হন। তারা বলেন, মুরাদপুর ইউনিয়নে এক হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় চার হাজার কৃষিপরিবার চলতি মৌসুমে রোপা আমনের আবাদ করছেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, আমন আবাদে এবার বিপ্লব ঘটবে।
এদিকে আমন চারা রোপণ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ সালেহীন বলেন, সীতাকুন্ড উপজেলায় আমনের চারা বীজতলা থেকে জমিতে স্থানান্তর শুরু হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া আমনের উপযোগী। এ বছর দীর্ঘ বর্ষার পর এ সুন্দর আবহাওয়ায় আমন আবাদে বাম্পার ঘটাবে। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের আমন মৌসুমে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিতে তৎপর।
অপরদিকে, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল বকে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, উপজেলার অন্যান্য অঞ্চল থেকে এ অঞ্চলে রোপা আমন ধানের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। তাই ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে আমনের বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে এবার আমন চাষে কৃষকদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো উপজেলাজুড়ে কৃষক পরিবারের সদস্যরা কোমড়ে গামছা বেঁধে রোপা আমন চারা রোপণে মাঠে নেমে পড়েছেন। অন্যান্য বছর অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে সেচের ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু চলতি মৌসুমে বর্তমানে প্রচুর পানি রয়েছে জমিতে।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন, গত বছর আমনের জমির পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ২২৫ হেক্টর। বর্তমানে চলতি মৌসুমে তা বেড়ে সীতাকুন্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়ে ২১ হাজার ৩৫ জন কৃষক পাঁচ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল রোপা আমন জাতের বিআর-২২ ও ব্রিধান-৪৯ জাতের ধানের চারা রোপণ করছেন। আমান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে- চালে ১৩ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না হলে আগের চেয়ে আরো বেশি চাল উৎপাদন এবং লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আমনের আবাদ শুরু সীতাকুন্ডে রোপা

আপডেট টাইম : ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কিছুটা দেরিতে হলেও সীতাকুন্ড উপজেলাজুড়ে ২১ হাজার ৩৫ কৃষক পরিবার এখন রোপা আমনের আবাদ শুরু করেছেন। তবে অন্যান্য বছর আমন মৌসুমে জমিতে কোনো পানি থাকে না। কিন্তু এ বছর জমিতে সেচের কোনো প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ, অতি বৃষ্টির ফলে এখনো জমিতে প্রচুর পানি রয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, চলতি বছর একটানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে কৃষকদের জমির আউশ ধানসহ সদ্য চাষকরা বিভিন্নরকম সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছিল। তাই এ বছর কৃষকরা আমন রোপণে অনেকটা পিছিয়ে পড়েন। ফলে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কৃষক পরিবারগুলো। মৌসুমে ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে কৃষকেরা সঙ্গে সঙ্গে আবার রোপা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই কৃষকেরা এখন একটুও সময় নষ্ট করতে চান না। এ বছর অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে হাজার কষ্টের মাঝেও সোনালী ধানের খুশবোই আবার তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। এ বিষয়ে মুরাদপুর ইউনিয়নের সমুদ্র উপক‚লের পশ্চিম ভাটেরখীল এলাকার কৃষক রুপন চৌধুরী জানান, তিনি চলতি আমন মৌসুমে সাড়ে চার একর জমিতে দেশীয় তিনটি জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করেন। অগ্রহায়ণ মাসে ফসল কাটা পর্যন্ত তার খরচ পড়বে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে প্রায় দেড় লাখ টাকার ধান বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, আউশ মৌসুমে একটানা বৃষ্টির ফলে তার আউশ ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এতে ৪০ হাজার টাকার মতো লোকসান গুণতে হয়েছে। লোকসান পুষিয়ে নিতে আবার আমন ধানের আবাদ করেন। অপরদিকে এ এলাকার অপর কৃষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এবার সাড়ে পাঁচ একর জমিতে দেশীয় জাতের চিনিগুড়া ধানের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আমার আউশের জমি কিছুটা উঁচু থাকায় একটানা বৃষ্টিতে আউশের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। ফলে ফসল অনেক ভালো হয়েছে। একই ইউনিয়নের ভাটেরখীল বকে দায়ীত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জ্ঞানরঞ্জন নাথ ও রহমতনগর বকের সালমা সুলতানা বলেন, এ ইউনিয়নের জমিগুলো নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টি হলেই জমি ও গ্রাম্যসড়ক পানিতে ডুবে যায়। পানির নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকার ফলে এখানে ২৫০ হেক্টর জমিতে আউশ মৌসুমে কোনো ফসলের আবাদ হয় না। ফলে উপক‚লীয় এলাকার কৃষকেরা বারবার ক্ষতির শিকার হন। তারা বলেন, মুরাদপুর ইউনিয়নে এক হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় চার হাজার কৃষিপরিবার চলতি মৌসুমে রোপা আমনের আবাদ করছেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, আমন আবাদে এবার বিপ্লব ঘটবে।
এদিকে আমন চারা রোপণ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ সালেহীন বলেন, সীতাকুন্ড উপজেলায় আমনের চারা বীজতলা থেকে জমিতে স্থানান্তর শুরু হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া আমনের উপযোগী। এ বছর দীর্ঘ বর্ষার পর এ সুন্দর আবহাওয়ায় আমন আবাদে বাম্পার ঘটাবে। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের আমন মৌসুমে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিতে তৎপর।
অপরদিকে, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল বকে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, উপজেলার অন্যান্য অঞ্চল থেকে এ অঞ্চলে রোপা আমন ধানের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। তাই ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে আমনের বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে এবার আমন চাষে কৃষকদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো উপজেলাজুড়ে কৃষক পরিবারের সদস্যরা কোমড়ে গামছা বেঁধে রোপা আমন চারা রোপণে মাঠে নেমে পড়েছেন। অন্যান্য বছর অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে সেচের ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু চলতি মৌসুমে বর্তমানে প্রচুর পানি রয়েছে জমিতে।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন, গত বছর আমনের জমির পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ২২৫ হেক্টর। বর্তমানে চলতি মৌসুমে তা বেড়ে সীতাকুন্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়ে ২১ হাজার ৩৫ জন কৃষক পাঁচ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল রোপা আমন জাতের বিআর-২২ ও ব্রিধান-৪৯ জাতের ধানের চারা রোপণ করছেন। আমান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে- চালে ১৩ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না হলে আগের চেয়ে আরো বেশি চাল উৎপাদন এবং লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে।