গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরাআইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা বলয় মাথায় রেখে জঙ্গিরাও কয়েকটি স্তরে ভাগ হয়ে টার্গেট করা স্থানে হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন জঙ্গি বিশ্লেষক ও গোয়েন্দারা।
তবে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে জঙ্গিদের কৌশল পরিবর্তন হয় বলেও জানান তারা। গুলশান ও শোলাকিয়ায় একই কৌশলেই জঙ্গিরা হামলা চালায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গোয়েন্দারা জানান, সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া হামলার ঘটনাগুলো ও জঙ্গিদের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে জানতে পারেন, হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা কিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জনসাধারণের মাঝে মিলিয়ে যায়।
জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে সাধারণত তিনটি ধাপে জনসাধারণের মাঝে মিশে যায়। ফলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আর তাৎক্ষণিকভাবে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হামলাকারীরা মূলত তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে। প্রতি গ্রুপে দুই থেকে তিনজন সদস্য থাকে তাদের। একটি গ্রুপ সরাসরি হামলা চালায়।
আরেকটি গ্রুপ হামলার সময় হামলাকারীর শরীরে দৃশ্যমান যে পোশাক থাকে তা কৌশলে খুলে ব্যাগে কিংবা অন্যকিছুতে ঢুকিয়ে ফেলে।
পরে তৃতীয় গ্রুপটি হামলাকারী ও দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে মিশে গিয়ে মোটর সাইকেলসহ স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত রিকশা বা অন্য কোনও যানবাহনে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলা চালাতে ব্যর্থ হয়েই জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে জানান
আরও জানান, শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের যে হামলাকারী দল পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল তারা ছিল আত্মঘাতী। ইরাক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো বড় ধরনের হামলা চালাতে চেয়েছিল তারা।
আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে শতাধিক মুসল্লিকে হত্যা করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ও সতর্ক অবস্থানের কারণে তারা তা করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
জঙ্গিরা উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা আইসিটির বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক ধারণা রাখে। কিন্তু জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তারাও কাউন্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
জঙ্গি বিষয়ে কাজ করেন এমন একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে জঙ্গিরা কয়েক স্তরে ভাগ হয়ে হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছে।
জঙ্গিদের থার্ড গ্রুপটি ঘটনাস্থলের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরুত্ব থেকে রেস্টুরেন্টে থাকা জঙ্গিদের প্রথম গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছে। আর দ্বিতীয় গ্রুপটি রেস্টুরেন্টের আশে-পাশে জনসাধারণের মাঝেই অপেক্ষায় ছিল।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী জামায়াত-সমর্থিতরা ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনী থেকে বিতাড়িত মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা জঙ্গিদের সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
তাদের মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জেএমবি সদস্যরাও রয়েছে। প্রথমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কায়দায় প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন টার্গেটে হামলা চালানোর ছক আঁকতে থাকে তারা।
জঙ্গিরা বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়কে টার্গেট করেছে জানিয়ে ওই সংস্থার কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশে মুসলমানদের বড় বড় মসজিদকেও তাদের হামলার স্থল হিসেবে চিহ্নিত করছে বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।
এর মধ্যে ঢাকার বড় বড় মসজিদগুলোও রয়েছে বলে জঙ্গিদের বিভিন্ন তৎপরতা থেকে তারা জানতে পারেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, জঙ্গিদের হামলার ধরন ও হামলার লক্ষ্যবস্তু বিবেচনা করে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা পাওয়া যায়।
তবে সব ক্ষেত্রে তা সঠিক নাও হতে পারে। আর হামলার কৌশল এবং পালিয়া যাওয়ার কৌশলও সব সময় একই রকম নাও হতে পারে। তাদের পালানোটা নির্ভর করে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর।
জামা’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) যৌথ অভিযানের পরিকল্পনা করছে কিনা জানতে চাইলে জঙ্গি বিষয়ে অভিজ্ঞ এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, তাদের এমন কোনও তথ্য নেই।
জঙ্গিরা অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয় ছাড়াও রাজধানীসহ দেশের বড় বড় মসজিদগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা এমন কোনও তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, হতে পারে। তবে তারা এখনও এমন কোনও তথ্য পাননি। -বাংলা ট্রিবিউন