বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চলতি (২০১৭-১৮) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস-জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে পাট ও পাটজাত খাতের পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা গেলো অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ইপিবির প্রতিবেদনে জানানো হয় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কাঁচাপাট রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার। একই সময়ে পাটের সুতা ও কু-লী রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার এবং পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানিতে আয় হয়েছে আট কোটি ১৯ লাখ ডলার। এছাড়া অন্যসব পাটজাতপণ্য থেকে এসেছে ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সম পরিমাণ অর্থ।
মিশর, সিরিয়া, তুরস্ক, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে পাট ও পাটজাতপণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় পাটজাত দ্রব্যের প্রচুর চাহিদা আছে। ইপিবির প্রতিবেদন মতে, জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে পাট ও পাটজাতপণ্য থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫০ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
কিন্তু দেখা যায়, ছয় মাস শেষে বিদেশে পাট রপ্তানি বেড়েছে প্রায় সাত কোটি ডলারের বা ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশের অচল পাটকলগুলো পুনরায় চালুর মধ্য দিয়ে পাটশিল্পের বিকাশ আবার সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে সহযোগিতার পাশাপাশি প্রান্তিকপর্যায় অর্থাৎ কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীমহল পর্যন্ত সচেতনতা সৃষ্টি ও পাটশিল্প বিকাশে তাদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
পাটপণ্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও পাটশিল্পের উন্নয়নে কাজ করছেন নাসিমূল আহসান। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে পাটশিল্প নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। বহুমুখী পাটপণ্যের গুণগত মান, দেশ ও দেশের বাইরে এর ব্র্যান্ডিং ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে।
দেশের সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ পণ্যের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে এগিয়ে এলে পাটশিল্প খুব দ্রুত সামনে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অনেকেই জানে না কীভাবে রপ্তানি করতে হয়। পাট রপ্তানি বাড়াতে হলে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সরকারকে নির্দেশনা দিতে হবে। সেইসঙ্গে কৃষকরা যাতে পাটের ন্যায্যমূল্য পায় সে বিষয়েও উদ্যোগ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের শুরুতে পাটজাত পণ্যের বিপণনব্যবস্থা করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)। স্থায়ী এ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে দেশে উৎপাদিত ১৩৫ পাটপণ্য দেখা যাবে ও কেনা যাবে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাটপণ্যের নানামুখী উৎপাদন ও বিপণন হলেও নির্দিষ্ট কোনো বিক্রয়কেন্দ্র্যাক্তাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ কারণে এসব পণ্যের একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিপণনের ব্যবস্থা করেছে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)।
কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি, দেশের অভ্যন্তরের পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, পাটের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে বর্তমান সরকার। দেশি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত বহুমুখী পাটপণ্য এক জায়গা থেকে প্রদর্শন ও বিক্রির উদ্দেশ্যে এ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এ কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ক্রেতারা একই জায়গা থেকে পছন্দমতো বহুমুখী পাটপণ্য সম্পর্কে ধারণা নিতে এবং তা ক্রয় করতে পারবেন। পাটের হারানো গৌরব ফিরে পেতে এ বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।